দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায়-কার্যকরী খাবার ও টিপস

পেটে গ্যাস হওয়া খুবই অস্বস্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক। দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় জানা দরকার। পেটে গ্যাস হলে তীব্র ব্যথা, বুক ধরফর করা, এমনকি অস্বস্তি হতে পারে।

দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায়

এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে কিছু কার্যকরী উপায় জানা জরুরি। পেটের গ্যাসের সমস্যা অনেকেরই হয়। এটি সাধারণত খাবার, জীবনযাত্রার ধরণ বা কিছু অভ্যাসের কারণে হতে পারে। পেটে গ্যাস হলে যন্ত্রণার পাশাপাশি খাবার হজমেও সমস্যা হয়। তাই দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় জানা দরকার। এই ব্লগে আমরা পেটে গ্যাসের ব্যথা কমানোর ওষুধ, সকালে কি খেলে গ্যাস হবে না, পেটের গ্যাস কমানোর খাবার, এবং অতিরিক্ত গ্যাস হলে কি করা উচিত, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন জেনে নিই কিভাবে দ্রুত পেটের গ্যাস কমানো যায়।

পেটে গ্যাসের ব্যথা কমানোর ওষুধ

পেটে গ্যাসের ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। গ্যাসের কারণে অনেক সময় পেট ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে অ্যান্টাসিড ওষুধ সহায়ক হতে পারে। এছাড়া, কিছু ওষুধ আছে যা গ্যাসের সৃষ্টি কমায়। এগুলো ফার্মেসিতে সহজেই পাওয়া যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এই ওষুধ ব্যবহার করা উচিত। এছাড়া, পেটের ব্যথা কমাতে প্রোবায়োটিক ওষুধও কার্যকর হতে পারে। খাবার পর এই ওষুধ খেলে গ্যাসের সমস্যা কমে। তবে, দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ওষুধের সাথে সাথে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা উচিত। এতে গ্যাসের সমস্যা অনেকটাই কমে।

সকালে কি খেলে গ্যাস হবে না

সকালে এমন খাবার খাওয়া উচিত যা সহজে হজম হয় এবং গ্যাসের সমস্যা কমায়। সকালে খালি পেটে এক গ্লাস হালকা গরম পানি লেবুর রস মিশিয়ে খেলে উপকার হয়। এটা হজম শক্তি বাড়িয়ে গ্যাস কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া, পাকা পেঁপে বা কলা খাওয়াও উপকারী। এই ফলগুলো হজমে সহায়তা করে এবং গ্যাসের সমস্যা কমায়। এক মুঠো বাদাম বা কাজুবাদামও খাওয়া যেতে পারে। এতে ফাইবার ও প্রোটিন থাকে যা হজমের জন্য ভালো। সকালের নাশতায় ওটস বা দই খেতে পারেন। ওটস ফাইবারযুক্ত এবং দই প্রোবায়োটিকস সমৃদ্ধ, যা হজমে সহায়ক। এই খাবারগুলো পেটের গ্যাস কমাতে কার্যকর।

পেটের গ্যাস কমানোর খাবার

কিছু খাবার পেটের গ্যাস দ্রুত কমাতে সাহায্য করে।  আদা এমনই একটি খাবার যা স্বস্তি দিতে পারে।  আপনার খাবারে এক টুকরো আদা যোগ করা বা আদা চা পান করা কার্যকর হতে পারে।  প্রোবায়োটিক সহ দই আরেকটি ভাল বিকল্প। এই প্রোবায়োটিকগুলি হজমে সহায়তা করে, গ্যাস উৎপাদন হ্রাস করে।  ক্যারাওয়ে বীজ গ্যাস কমানোর জন্যও পরিচিত।  খাবারের পর কয়েকটি বীজ চিবিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।  কলা পটাসিয়াম সমৃদ্ধ, যা তরল ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।  সবশেষে, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা হজমে সহায়তা করে এবং গ্যাস তৈরি হওয়া রোধ করে।

আপনার ডায়েটে এই খাবারগুলি অন্তর্ভুক্ত করা একটি লক্ষণীয় পার্থক্য আনতে পারে।

পেটে গ্যাস হলে কি বুক ধরফর করে

পেটে গ্যাস হলে বুক ধরফর করার অনুভূতি হতে পারে। গ্যাস জমলে বুকের মধ্যে চাপ বা ব্যথা হতে পারে। এতে অনেক সময় বুক ধরফর করতে থাকে। গ্যাসের কারণে বুকের পেশীতে টান পড়তে পারে। ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। বুকের ব্যথা বা অস্বস্তি শুরু হলে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। গ্যাসের সমস্যা কমাতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা দরকার। সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিত। বেশি তেল, মশলা বা ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন। পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাবার ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। স্ট্রেস কমাতে নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন। দৈনিক হাঁটাহাঁটি বা যোগব্যায়াম করলে পেটের গ্যাসের সমস্যা কমে।

অতিরিক্ত গ্যাস হলে কি খাওয়া উচিত

অতিরিক্ত গ্যাস হলে কিছু খাবার খাওয়া উচিত যা দ্রুত আরাম দেয়। আদা খুব উপকারী, এটি হজমে সহায়তা করে এবং গ্যাস কমায়। কাঁচা আদা চিবিয়ে খাওয়া বা আদা চা পান করা যেতে পারে। দইও ভালো, এতে প্রোবায়োটিক থাকে যা হজম শক্তি বাড়ায়। এছাড়া পুদিনা পাতা বা পুদিনা চা খেলে পেটের ফাঁপা ভাব কমে যায়। পেঁপে এবং কলা হজম প্রক্রিয়া সহজ করে। এ ছাড়া লেবু পানি খাওয়া যেতে পারে, এটি গ্যাস কমানোর পাশাপাশি শরীরকে হাইড্রেট রাখে। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন শাকসবজি খাওয়া উচিত। তবে, মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলা ভালো। সহজে হজম হয় এমন খাবার খেলে পেটের গ্যাসের সমস্যা কমে যাবে।

অতিরিক্ত গ্যাস হলে কি করনীয়

অতিরিক্ত গ্যাস হলে প্রথমে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা প্রয়োজন। তেল চর্বি ও মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া কমাতে হবে। খাদ্যতালিকায় শাকসবজি ও আঁশযুক্ত খাবার বেশি রাখতে হবে। একসাথে বেশি পরিমাণে খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খাবার খেতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত। এছাড়া, খাওয়ার সময় দ্রুত না খেয়ে ধীরে ধীরে চিবিয়ে খেতে হবে। কার্বনেটেড পানীয় ও কোল্ড ড্রিঙ্ক এড়িয়ে চলা ভালো। মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত যোগব্যায়াম ও ধ্যান করা যেতে পারে। হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাচলা গ্যাসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস বজায় রাখা জরুরি। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

পেটে গ্যাস এর লক্ষণ

পেটে গ্যাস হলে কিছু লক্ষণ দেখা যায়। সাধারণত, পেট ফুলে যাওয়া বা ভারী লাগতে পারে। পেটের মধ্যে গুরগুর শব্দ হতে পারে। অনেক সময় বমি ভাব বা বমি হতে পারে। কিছু মানুষ খাবার খাওয়ার পর পেটে ব্যথা অনুভব করে। অন্যদিকে, কিছু ক্ষেত্রে বার বার ঢেকুর ওঠে। গ্যাসের কারণে পেটের মধ্যে চাপ বা অস্বস্তি হতে পারে। এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। নিয়মিত খাবারের সময় স্বাস্থ্যকর অভ্যাস বজায় রাখা প্রয়োজন। এতে পেটের গ্যাস কমে যেতে পারে।

অতিরিক্ত গ্যাস হলে কি হয়

অতিরিক্ত গ্যাস হলে পেট ফেঁপে যায়। পেটের ভেতর অস্বস্তি ও ব্যথা হতে পারে। মাঝে মাঝে বুক জ্বালাপোড়া এবং ঢেঁকুর আসতে পারে। দৈনন্দিন কাজে মনোযোগ কমে যায়। খাবার গ্রহণে অনীহা তৈরি হয়। পেট ভারী লাগতে পারে। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। অনেক সময় মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কোলন ও অন্ত্রের কার্যক্রমে সমস্যা হতে পারে। ফলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

লেখক এর মন্তব্য 

দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খান। সকালে হালকা খাবার পেটের গ্যাস কমায়। পেটে গ্যাস হলে বুক ধরফর করতে পারে। অতিরিক্ত গ্যাস হলে মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। পেটে গ্যাসের লক্ষণগুলো দ্রুত চিহ্নিত করুন। প্রয়োজনে ওষুধ সেবন করুন। সহজ জীবনযাপন এবং নিয়মিত ব্যায়াম গ্যাস কমাতে সাহায্য করে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা মেনে চলা পেটের গ্যাস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন