বাচ্চাদের বয়স অনুযায়ী ওজন ৮ মাসের শিশুর খাবার তালিকা
শিশুকে তার প্রথম ৮মাসে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয় । এটি পুষ্টিকর, সহজপাচ্য, পুরোপুরি সুষম এবং স্বাস্থ্যকর সুপারফুড, যেটা সারাজীবনের জন্য রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে । এটা মা ও শিশুর মধ্যে থাকা বন্ধনকে পোষণ করে ।
যদি আপনার শিশু সক্রিয় হয়, দেখতে স্বাস্থ্যবান লাগে, অ্যালার্জিমুক্ত থাকে, দিনে ৬ -৮বার মলত্যাগ করে এবং ৬-৮টি ডাইপার ভিজিয়ে ফেলে, সেটা ইঙ্গিত দেয় যে, সে যথেষ্ট বুকের দুধ পাচ্ছে । আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে, আপনার শিশুর বৃদ্ধি স্বাস্থ্যকর ।
৮ মাস বয়সের পর, আপনি বাচ্চার খাবারের তালিকায় বুকের দুধের সঙ্গে তরল এবং হালকা কঠিন খাবার রাখা শুরু করতে পারেন ।
বাচ্চাদের বয়স অনুযায়ী ওজন ৮ মাসের শিশুর খাবার তালিকা
এই সুপারফ্রুট পটাসিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬ এবং কার্বোহাইড্রেটে পূর্ণ । এটি ক্যালোরিতেও পূর্ণ এবং শিশুদের ওজন বৃদ্ধির নিখুঁত উৎস ।কলা বেটে অথবা স্ম্যুথি বা শ্যেকে পরিবেশন করুন । ভাপানো কেরালা কলা বেটে শিশুদের খাওয়ালে খুব ভালো ফল দেয় । ভ্রমণের সময় একটি সুবিধাজনক জলখাবার হিসাবে এটি আপনার শিশুর ব্যাগের একটি অংশ হিসাবে থাকতে পারে ।
মিষ্টি আলু খুব সহজে সিদ্ধ হয়ে যায় এবং সহজে বাটা যায় । এগুলি সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং সহজপাচ্য এবং স্বাস্থ্যকর । এগুলি ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, কপার, ফসফরাস, পটাশিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিযে ভরপুর- শিশুদের ওজন বৃদ্ধির জন্য এগুলি শ্রেষ্ঠ ভিটামিন ।মিষ্টি আলুতে ডায়েটের উপযুক্ত ফাইবার আছে যথেষ্ট পরিমাণে । আপনি এই সবজি দিয়ে সুস্বাদু পিউরি এবং স্যুপ তৈরি করতে পারেন ।
আরো পড়ুন:বয়স অনুযায়ী শিশুর ওজন তালিকা ৬ মাসের বাচ্চার খাবার চার্ট
ডাল বা কলাই পুষ্টিগুণে ভরপুর । এগুলি প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, লোহা, ফাইবার এবং পটাসিয়ামে সমৃদ্ধ । ৬ মাস পর, আপনি ডালের স্যুপ বা ডাল পানির আকারে আপনার শিশুর সঙ্গে পরিচয় করাতে পারেন, যেটি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সবথেকে জনপ্রিয় ওজনবৃদ্ধির পানীয় ।
আপনি ভালোভাবে বাটা খিচুড়িও খাওয়াতে পারেন । মুগডাল খুব সহজপাচ্য এবং শিশুদের জন্য একটি ভালো বিকল্প । পুষ্টিকর এবং ফাইবার-পূর্ণ খাবারের জন্য চালের সঙ্গে অথবা সবজি দিয়ে ডাল রান্না করুন ।
৭-৯ মাসের আশেপাশের সময় আপনার শিশুকে কিছু নতুন স্বাদ এবং গঠনের সঙ্গে পরিচয় করানোর সঠিক সময় । হালকা-কঠিন, কুচিকুচি এবং বাটা খাবার খাওয়ানো শুরু করুন । বাজারে পাওয়া যায় এমন প্রস্তুত মিশ্রণের মতো বাড়িতে তৈরি পরজ অথবা সিরিয়ালস দিতে শুরু করুন । বাড়িতে তৈরি সিরিয়ালস তৈরির জন্য; আপনি ডাল, মিলেট, কলাই, চাল ধুয়ে নিন এবং রোদে শুকিয়ে নিন, এগুলিকে হালকা রোস্ট করুন এবং মিক্সারে পিষে নিন ।
চটজলদি খাবারের বিকল্প হিসাবে নানারকম গুঁড়ো প্রস্তুত করুন এবং লেবেলযুক্ত বোতলে ভরে রাখুন, যদি আপনি একজন কম ওজনযুক্ত শিশুদের জন্য খাবার তৈরি করেন । যখন যেমন প্রয়োজন, ব্যবহার করুন ।
ফিঙ্গার মিলেট অথবা ‘নাচানি’ নামেও পরিচিত, এই সুপারফুড শিশুর বিকাশ ও ওজন বৃদ্ধির জন্য একেবারে উপযুক্ত । এটি ডায়েট-উপযুক্ত ফাইবার, ক্যালসিয়াম, লোহা, প্রোটিন এবং নানান অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেল বা খনিজতে ভরপুর ।
আরো পড়ুন: ৯ মাসের বাচ্চার খাবার তালিকা ২০২৪
এটি সহজপাচ্য এবং ইডলি, ডোসা, পরজ, মল্ট বা সিরিয়ালস রূপে শিশুদের দেওয়া যেতে পারে এবং সদ্য হাঁটতে শেখা শিশুদের জন্য কেক, কুকিজ এবং পুডিং আকারে দেওয়া যাবে ।
ঘি বা পরিশোধিত মাখনে উচ্চ পুষ্টিগুণ আছে । আপনার বাচ্চার ৮ম মাসের আশেপাশের সময়ে এটির সঙ্গে পরিচয় করান । কয়েক ফোঁটা ঘি পরজে যোগ করুন অথবা বাটা খিচুড়ি অথবা ডালের স্যুপের উপর ছড়িয়ে দিন ।
আপনার বাচ্চার খাবারে দইয়ের মতো দুগ্ধজাত পণ্য যোগ করা উপযুক্ত । শিশুদের স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধির জন্য দইয়ে ফ্যাট এবং পুষ্টিকর ক্যালোরি থাকে ।
এছাড়াও দই হজম শক্তিকে উন্নত করে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় সাহায্য করে । বাচ্চাদের ওজন বৃদ্ধির জন্য ফলের টুকরো যোগ করে, দইয়ের স্মুথি অথবা শ্যেক তৈরি করে এটাকে আকর্ষণীয় করা যেতে পারে ।
প্যাক করা দুধ, মাখন, চীজ বা পনির ইত্যাদি ১২ মাস বয়সের পর বা শিশুবিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়ার পরই চালু করা উচিত । মাখন, চীজ বা পনির সদ্য হাঁটতে শেখা শিশুদের ক্ষেত্রে খাবারকে আকর্ষণীয় করে এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় চর্বিযুক্ত পদার্থ যোগ করে । বাচ্চাদের জন্য আকর্ষণীয় খাবার তৈরি করতে, মাখনের একটি মন্ড অথবা চীজ বা পনিরের একটি টুকরো যোগ করুন ।
১ বছর বয়সের পর বাচ্চাদের গরুর দুধের সঙ্গে পরিচয় করানো উচিত । আপনার শিশু তার কৈশোরে পৌঁছানো পর্যন্ত, নিশ্চিত করুন যে, তার খাবারে যেন দিনে দুই গ্লাস দুধ থাকে । কিছু শুকনো ফল অথবা বাজারে পাওয়া যাওয়া হেলথ মিক্স যোগ করে দুধকে আকর্ষণীয় কোরতে পারেন । দুগ্ধজাত পণ্য খুব বেশি খাওয়া বা খুব কম খাওয়াকে অবহেলা করা উচিত নয়, কারণ, খুব বেশি বা খুব কম পরিমান সমস্যা তৈরি করতে পারে ।
বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন ও উচ্চতা
বেড়ে ওঠা বলতে মূলত শারীরিক, মানসিক আর সামাজিক বিকাশকে বোঝায়। একেক মানুষ যেমন একেক রকম, তেমনি একেক শিশুর বেড়ে ওঠার হার একেক রকম। তবে শারীরিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কিছু দৃশ্যমান পরিমাপ রয়েছে, যা দ্বারা সঠিক বৃদ্ধি হচ্ছে কিনা বোঝা যায়। যেসব শিশু সঠিক পুষ্টি পায়, তারা সাধারণত সঠিক হারে বেড়ে ওঠে।
আরো পড়ুন: গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয় জানুন
শুধু পুষ্টিই না, আরো কিছু বিষয় রয়েছে, যেমন- লিঙ্গ, জিন, শারীরিক কসরত, ঘুমের সময়, অসুস্থতা ইত্যাদি। বয়স অনুযায়ী শিশুর ওজন আর উচ্চতা বৃদ্ধির একটি কমন প্যাটার্ন রয়েছে। গবেষকরা দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণের পর একটি চার্ট তৈরি করেছেন,
যার নাম গ্রোথ চার্ট। আপনি হয়তো ইন্টারনেটে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্রোথ চার্ট দেখে থাকবেন। আমাদের দেশের শিশুদের জন্য বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণিত একটি গ্রোথ চার্ট রয়েছে।
৫-৬ মাসের শিশুর খাবার তালিকা
বেশিরভাগ বাবা-মায়েরা সলিড পদার্থ খাওয়ানো শুরু করার পর প্রথম মাসে তাদের শিশুর কী খাওয়া উচিত তা নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন থাকেন ।এখানে মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে মায়ের দুধ হল প্রথম বছরে শিশুদের পুষ্টির প্রধান উৎস কারণ অপরিণত পরিপাকতন্ত্র স্টার্চ হজম করতে পারে না। তাই খাওয়া খাবারের বেশিরভাগই হজম না হয়ে মলের মাধ্যমে বেরিয়ে যায় ।
তাই চাহিদা অনুযায়ী বুকের দুধ খাওয়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কঠিন খাবারের সাথে বুকের দুধ খাওয়াতে ভুলবেন না । তবে শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়, তা আমরা সবাই জানি। শিশুর পুষ্টি, বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য মাতৃদুগ্ধ সবচেয়ে জরুরি।
তাই জন্মের পর থেকে যত বেশি দিন সম্ভব সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ পান করান। ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে কেবলমাত্র বুকের দুধই খাওয়ানো দরকার। এ সময়ে শিশুকে জল খাওয়ানোরও দরকার পড়ে না।৭-৮ মাসের বাচ্চার খাবার তালিকা
বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত
১-২ বছরের শিশুর খাবার তালিকা
১ বছরের শিশুর এরই মধ্যে বেশ কয়েকটা দাঁত উঠেযায়। ফলে যেকোনো ছোটো খাবারের টুকরো আপনি অনায়াসে তার হাতে দিতে পারেন। আপনি যদি এখনো তাকে খাবার পেস্ট করে খাওয়াচ্ছেন তাহলে তা এখনই বন্ধ করুন। শিশু এই সময় মোটামুটি চিবোতে পারে ,তাই খাবার হালকা স্ম্যশ করে দিন। বাচ্চাকে কখনোই জোর করে খাওয়াবেন না।
প্রত্যেক শিশুর টেস্ট ও খেতে শেখার ধরণ আলাদা। বাচ্চাকে নিজে চামচে বা হাতে ধরে খেতে দিন। কোনো ছোট ফলের টুকরো বা রান্না করা সবজির টুকরো, সেদ্ধ ডিম , পনিরের টুকরো ইত্যাদি হাতে দিন ১২ থেকে ১৮ মাসের শিশুরা বাড়ির তৈরি প্রায় সব খাবারই খেতে পারে।
শিশুকে দুধ খাওয়াতে ভুলবেন না। সকালে ঘুম থেকে উঠে বা ঘুমোতে যাওয়ার আগে ওকে গরুর দুধ ও খাওয়াতে পারেন। প্রথম সপ্তাহে আপনি আগে যা কিছু খাইয়েছেন সেগুলোই একটু মডিফায়েড করে খাওয়াতে পারেন। নতুন রেসিপির মধ্যে আলুর পুর দিয়ে ধোসা বা ইডলি ট্রাই করতে পারেন।
লেখক এর মন্তব:
বাচ্চার খাবারের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট উপকরণ বরাবর এড়িয়ে চলা উচিত। যেমন চিনি ও নুন একেবারেই দেওয়া ঠিক নয়। বীজজাতীয় কোনও খাবার যা গলায় আটকানোর সম্ভাবনা থাকে।এছাড়া, সোডা, মধু চা, কফি ইত্যাদিও খুদেকে দেওয়া ঠিক নয়।