ডেঙ্গু হওয়ার পর যে খাবারগুলো খেতে হবে ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা

ডেঙ্গু রোগীর খাবার চার্ট তালিকা প্রতি বছরই বর্ষার পর মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ে পশ্চিমবঙ্গে। এ বছরেও তার অন্যথা হয়নি। সঙ্গে দোসর কোভিড। জেলার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। চিকিৎসকেরা বলছেন, দু’দিন ধরে ধুম জ্বর, মাথার যন্ত্রণা, সারা গায়ে ব্যথা এবং গায়ে র‌্যাশ থাকলে সাধারণ ভাবে তা ডেঙ্গির লক্ষণ বলেই ধরে নেওয়া হয়। ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয়

ডেঙ্গু রোগীর খাবার চার্ট তালিকা

এমনভাবে খাবার নির্বাচন করতে হবে, যা অল্প খেলেও ক্যালরির চাহিদা পূরণ করতে পারে অর্থাৎ অধিক ক্যালরিযুক্ত খাবার যেমন নরম পাতলা মুগ ডালের খিচুড়ি, পুডিং, ফিরনি, পায়েস, দই, মিষ্টি দই, মিল্কশেক।

ডেঙ্গু হওয়ার পর যে খাবারগুলো খেতে হবে ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা

নারকেলের পানি
ওআরএস (ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট) মিশ্রিত পানি
ফলের রস (বিশেষ করে পেঁপে, আনারস, আমলকীর রস)
স্যুপ
ভেজানো চা (লেবু বা আদা চা)

শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন। যেমন:

সেদ্ধ ডিম
চিকেন ব্রথ বা চিকেন স্যুপ
মাছ (বিশেষ করে সেদ্ধ বা গ্রিল করা)
ডাল

ডেঙ্গুর কারণে শরীর দুর্বল হয়ে যায়, তাই ফল ও সবজিতে থাকা ভিটামিন ও খনিজ উপাদান শরীরের জন্য খুবই উপকারী:

পেঁপে (পেঁপে পাতার রস প্লেটলেট বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে বলে ধারণা করা হয়)
আমলকি (ভিটামিন সি সমৃদ্ধ)
আনারস
কমলা লেবু
শসা
গাজর
শাকপাতা (বিশেষ করে পালং শাক)

খিচুড়ি
সেদ্ধ চিঁড়া
সেদ্ধ আলু
সাদা ভাত
ওটস

আরো পড়ুন: ক্যালসিয়াম কতটুকু দরকার ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা

দই
মিষ্টি দই
ছানা

কাজু
কাঠবাদাম
সূর্যমুখীর বীজ
চিয়া বীজ

ডেঙ্গু রোগীর খাবার চার্ট তালিকা

এডিস মশা আবদ্ধ জলাধার বা স্বচ্ছ পানিতে বংশ বিস্তার করে। যেমন- টবের পানি, নারকেলের ফাঁকা খোলা, এসির নিচে জমে থাকা পানি ইত্যাদি। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে কামড়ানোর মাধ্যমে স্ত্রী এডিস মশা প্রথমে জীবাণুবাহক হয় এবং তারপর এটি অন্য কাউকে কামড়ালে সেই ব্যক্তিও আক্রান্ত হয়। এভাবেই এই রোগ ছড়াতে থাকে আমাদের চারপাশে।

সাধারণত বছরের জুন-জুলাই মাস থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের শেষ পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়। ডেঙ্গু জ্বরের নির্দিষ্ট উপসর্গ থাকে, কিন্তু সবারই যে সবসময় একই রকম উপসর্গ দেখা দিবে তা নয়। চলুন তবে দেখে নেই ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণসমূহ কী।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি ঔষধ খেতে হবে

প্যারাসিটামল (যেমন টাইলেনল) জ্বর ও ব্যথা কমাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। কখনোই আইবুপ্রোফেন বা অ্যাসপিরিন খাওয়া উচিত নয়, কারণ এগুলো রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

প্রচুর পানি, স্যালাইন, অথবা ফলের রস খাওয়া উচিত শরীরে পানিশূন্যতা দূর করতে। যতটা সম্ভব বিশ্রাম নেওয়া জরুরি, কারণ ডেঙ্গু শরীরকে দুর্বল করে দেয়।

ডেঙ্গু জ্বর হলে সাধারণত কিছু বিশেষ ধরনের ঔষধের ব্যবহার করা হয় না, কারণ এই রোগের কোনো নির্দিষ্ট antivirals নেই। চিকিৎসকরা সাধারণত প্রাথমিকভাবে বিশ্রাম, প্রচুর পানি খাওয়া এবং ব্যথা ও জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ব্যবহার করতে পরামর্শ দেন।

আরো পড়ুন: ভিটামিন সি কোন খাবারে আছে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার

এর পাশাপাশি, যদি আপনার ডেঙ্গুর লক্ষণগুলি গুরুতর হয়, যেমন অতিরিক্ত রক্তপাত, হঠাৎ করে রক্তচাপ কমে যাওয়া, বা শরীরের অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন হতে পারে।

এছাড়া, ডেঙ্গুর কারণে শরীরে পানি কমে যেতে পারে, তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ডেঙ্গু হিমোরেজিক ফিভার : ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুর সবকিছুই থাকে। রক্তনালির লিকিং হয় বলে বাড়তি কিছু সমস্যা হয়। ঠিকমতো হ্যান্ডলিং না করলে জীবনের ঝুঁকি আসতে পারে।

জ্বরের সঙ্গে যদি প্লটিলেট কাউন্ট এক লাখের কম হয় এবং হিমাটক্রিট ২০% ভ্যারিয়েশন হয় সেটা ডেঙ্গু হিমোরেজিক ফিভার। লিকিংয়ের অন্য উপসর্গ যেমন পেটে বা ফুসফুসে পানি আসতে বা রক্তে প্রোটিন কমে যেতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে

হালকা গরম বা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করা উচিত। ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করলে শীত লাগতে পারে এবং জ্বরের মাত্রা বাড়তে পারে।

শরীর পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন, কারণ এটি আরাম দেয় এবং সংক্রমণ থেকে দূরে রাখে। গোসলের সময় দীর্ঘ না করা ভালো। শরীর বেশি দুর্বল থাকলে দীর্ঘ সময় গোসল করলে ক্লান্তি বাড়তে পারে।

আরো পড়ুন: কিডনি পরিষ্কার রাখে যেসব খাবার কিডনি পরিষ্কার করে এই ৯ খাবার

জ্বরের সময়: যখন জ্বর বেশি থাকে, তখন ঠাণ্ডা বা অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার না করাই ভালো। হালকা গরম বা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করা যেতে পারে।

শরীর পরিষ্কার রাখা: গোসল করলে শরীর পরিষ্কার থাকবে এবং কিছুটা সতেজ অনুভূতি পাওয়া যাবে, যা আরামদায়ক হতে পারে। অতিরিক্ত ক্লান্তি এড়ানো: শরীর খুব দুর্বল থাকলে গোসলের সময় দীর্ঘ না করে, দ্রুত সেরে নেওয়া ভালো।

ডেঙ্গু জ্বর হলে গোসল করা যায়, তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। গোসল করলে শরীর কিছুটা সতেজ বোধ করতে পারে এবং হালকা জ্বর কমতেও পারে। তবে, বেশি ঠান্ডা পানি ব্যবহার না করে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করাই ভালো, কারণ শরীরের তাপমাত্রার হঠাৎ পরিবর্তন শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

যদি জ্বর খুব বেশি থাকে বা শরীর দুর্বল লাগে, তাহলে গোসল না করাই ভালো। সেক্ষেত্রে নরম কাপড়ে শরীর মুছে নেওয়া যেতে পারে।

ডেঙ্গু হলে কি খাবার খাওয়া যাবে না

মশলাদার এবং ভাজা খাবার হজমে সমস্যা করতে পারে এবং পেটের ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে।

চা, কফি, এনার্জি ড্রিংকস এগুলো ক্যাফেইনযুক্ত, যা শরীরকে ডিহাইড্রেট করতে পারে। ডেঙ্গু হলে ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করা গুরুত্বপূর্ণ।

বেশি তৈলাক্ত খাবার হজমে সমস্যা করে এবং লিভারের ওপর চাপ ফেলে, যা ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ক্ষতিকর।

আরো পড়ুন: ইউরিক এসিড রোগীর খাদ্যাভ্যাস ও ইউরিক এসিডে নিষিদ্ধ খাবার

প্রক্রিয়াজাত খাবারে সংরক্ষণকারী এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে যা ডেঙ্গুর সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করতে পারে।

অতিরিক্ত চিনি লবণ ও তেল মসলা যুক্ত বাইরের খাবার ডেঙ্গু রোগীর জন্য কোনভাবেই প্রযোজ্য নয়।

প্রক্রিয়াজাত খাবার কিংবা ক্যান বা কৌটা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

আর্টিফিশিয়াল চিনিযুক্ত কোমল পানীয় বা বিভিন্ন ধরনের প্যাকেট জুস বর্জন করতে হবে। কারণ, এগুলো থেকে এলসিডি, পেটের গণ্ডগোল দেখা দিতে পারে এবং সম্ভব শরীরে পিএস স্তরও নেমে যেতে পারে।

অতিরিক্ত তেল মসলাযুক্ত গুরুপাক খাবার বাদ দিতে হবে। কারণ এতে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এ সময় দুধ চা, দুধ কফি কিংবা ক্যাফিনজাতীয় খাবার ত্যাগ করা উচিত; কারণ এ সময় এমনিতেই পাকস্থলীর অবস্থা খুব নাজুক থাকে এবং হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয়

ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, মাটির পাত্র, বালতি, টনের কৌটা, ডাবের খোসা/নারিকেলের মালা, কন্টেইনার, মটকা, ব্যাটারী শেল ইত্যাদিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে। কাজেই এগুলোর বর্জ্য পরিষ্কারের ব্যবস্থা নেয়া।

দীর্ঘ হাতা এবং পায়ের কাপড় পরিধান করুন। মশারির ব্যবহার করুন, বিশেষ করে ঘুমানোর সময়। মশা প্রতিরোধক লোশন বা স্প্রে ব্যবহার করুন।

আরো পড়ুন: ভিটামিন ডি পাওয়া যায় যেসব খাবারে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার

আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখা: বাড়ির চারপাশে বা আশেপাশে কোনো পাত্রে পানি জমতে দেবেন না। মশা পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে, তাই ফুলের টব, কনটেইনার, বা টায়ারে জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার করুন।

মশার জন্মস্থান ধ্বংস করা: বাড়ির আশেপাশে জমে থাকা পানি বা ঝোপঝাড় নিয়মিত পরিষ্কার করুন। অপ্রয়োজনীয় পানির পাত্র ঢেকে রাখুন বা ফেলে দিন।

দরজা ও জানালায় মশার জাল ব্যবহার: বাড়ির জানালা ও দরজায় মশার জাল লাগান যাতে মশা ঘরের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে।

স্বাস্থ্য সেবা নেওয়া: ডেঙ্গুর উপসর্গ যেমন জ্বর, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয়

শরীরকে বিশ্রাম দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ডেঙ্গুতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। ডেঙ্গুর ফলে শরীর ডিহাইড্রেট হতে পারে, তাই প্রচুর পানি, ওরাল স্যালাইন, স্যুপ এবং তরল খাবার গ্রহণ করা উচিত। এটি দেহের তরল এবং ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক।

ডেঙ্গুতে জ্বর এবং ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে প্যারাসিটামল (acetaminophen) খাওয়া যেতে পারে। তবে কোনোভাবেই আইবুপ্রোফেন বা অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া উচিত নয়, কারণ এগুলি রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ডেঙ্গু হলে ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ রোগের তীব্রতা বুঝে সময়মতো চিকিৎসা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্লেটলেটের সংখ্যা কমে গেলে বা শরীরে অন্যান্য গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া জরুরি হতে পারে।

রক্তপাত, তীব্র পেটে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, গা হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি গুরুতর উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। ডেঙ্গুতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়, তাই ফলমূল, শাকসবজি, প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য ও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন