বয়স অনুযায়ী শিশুর ওজন তালিকা ৬ মাসের বাচ্চার খাবার চার্ট

বয়স অনুযায়ী শিশুর ওজন তালিকা ৬ মাসের বাচ্চার খাবার চার্ট বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত বহু বাবা-মায়ের মতোই আপনারও শিশুর আদর্শ ওজন সম্পর্কে চিন্তিত ও দ্বন্দ্বে থাকা স্বাভাবিক। প্রথম বার সন্তান জন্মের ক্ষেত্রে মা-বাবারা যেমন ভাবেন শিশুর ওজন স্বাভাবিক তালিকার মধ্যে আছে কিনা। 

শিশুর বৃদ্ধির সাথে সাথে তার সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য ও বিকাশের একটি নির্দেশক হয়ে ওঠে নবজাত শিশুর ওজন। অবশ্যই এক বছর ধরে শিশুর ওজনে নির্দিষ্ট বিকাশ ও পরিবর্তন দেখা যায়। বাচ্চার ওজন বৃদ্ধির খাবার

বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত

জন্মের পরে ৬ মাস পর্যন্ত শিশু সাধারণত বুকের দুধের উপরেই নির্ভর করে থাকে। কিন্তু ৬ মাস পর থেকে তাকে দুধের পাশাপাশি শক্ত খাবারও দিতে হয় । অনেক বাবা মার জন্য এই নতুন অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া শিশুর থেকেও বেশি কষ্টকর হয়ে যায়। কারণ অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না বাচ্চাকে কি খাওয়াবেন আর কিভাবে খাওয়াবেন।

বয়স অনুযায়ী শিশুর ওজন তালিকা ৬ মাসের বাচ্চার খাবার চার্ট

সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে ওজন যদি ২.৫ কেজি থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত হয়। তাহলে আপনার বাচ্চার ওজন ঠিক আছে। তবে আপনার বাচ্চার ওজন যদি ২.৫ কেজি কম হয় তাহলে সেক্ষেত্রে সেটি অস্বাভাবিক ওজন। এর মূল করণ হলো প্রিম্যাচিউর বা ইনট্রাউটেরাইন গ্রোথ রিটার্ডেশন। নিম্নে জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

প্রথমত শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরার্মশ নিতে হবে। ডাক্তার দেখার পর যে পরিক্ষা গুলো করাতে বলে তা করুন। পরিক্ষা নীরিক্ষা শেষে যে স্যালাইন বা ইনজেকশন লিখবেন তার সঠিক ব্যবহার এবং যে নিয়ম কানুন গুলো বলবেন তা মেনে চলতে হবে। বেশ কিছু ‍দিন চিকিৎসা গ্রহন করলে বাচ্চার স্বাভাবিক ওজন ফিরে আসবে।

আরো পড়ুন: স্ট্রবেরি কেন খাবেন স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা জানুন

দ্বিতীয়ত বাচ্চাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাতৃদুগ্ধ খাওয়াতে হবে। মাতৃদুধ কম ওজনের বাচ্চার জন্য অনেক কার্যকারি। মাতৃদুধে প্রচুর পরিমানে পুষ্টি ও অ্যান্টিবডি থাকে, যা শিশুর ওজন বৃদ্ধি করে এবং নানা রোধ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। কম ওজনের বাচ্চার জন্য মাতৃদুধের বিকল্প অন্য কিছু হয় না। তবে মায়ের দুধ অনেক কম হলে ডাক্তারের পরার্মশে বাচ্চাকে প্রক্রিয়াজাতকরণ দুধ খাওয়ানো যেতে পারে।

বাচ্চাকে সঠিক তাপমাত্রায় রাখতে হবে। নবজাতকে সঠিক তাপমাত্রার জায়গা হলো তার মায়ে শরীরের সাথে রাখা। এতে করে বাচ্চার ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকবে এবং শিশুর মানসিক বিকাশ ও শারীরিক উন্নতিতে ভূমিকা রাখবে। নবজাতক যদি কোন কারনে বা চিকিৎসার জন্য মায়ের থেকে দূরে থাকে, তাহলে শিশুকে ইনকিউবেটরে রাখা যেতে পারে। যেখানে নবজাতকের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে।

বাচ্চাদের ওজন বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে তবে এর মধ্যে বিশেষ করে খাবারের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। বাচ্চার ওজন বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত কয়েক রকমের ফল এবং আরো অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াতে হবে। 

বাচ্চার ছয় মাস বয়সের পর থেকেই কলা, মিষ্টি আলু, ডিম ইত্যাদি খাবার খেতে দেয়া উচিত। ছোট বাচ্চাদের ওজন বৃদ্ধির জন্য মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি সলিড খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। যখনই সলিড খাবার খাওয়ানো যাবে তখন থেকেই বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি পাবে।

ছয় মাস বয়স হলেই ছোট বাচ্চা কলা খেতে পারে কলা খেলে খুব দ্রুত বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি হয়। কলার মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম ভিটামিন সি কার্বোহাইড্রেট ও বিভিন্ন উপাদান। প্রতিদিন ছোট বাচ্চাকে একটা করে কলা খাওয়ালে বাচ্চার ওজন খুব সহজেই বৃদ্ধি পাবে।

মিষ্টি আলুর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ফসফরাস ও পটাশিয়াম। মিষ্টি আলু একটি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর খাবার। ছোট বাচ্চাদের জন্য মিষ্টি আলু অত্যন্ত উপকারী।

ডিম: ডিম আমিষ জাতীয় খাবার। বাচ্চারা আমিষ জাতীয় খাবার সবচাইতে বেশি পছন্দ করে। বাচ্চাকে প্রতিনিয়ত একটি করে ডিম খাওয়ালে বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া ওজন বাড়ার পাশাপাশি ডিম খেলে প্রোটিনের চাহিদা ও পূরণ হয়। সিদ্ধ অথবা ভাজা দুই অবস্থায় ডিম বাচ্চাকে খাওয়ালে ওজন বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।

শুকনো ফল: শুকনো ফলের মধ্যে রয়েছে খেজুর, কিসমিস, কাজুবাদাম, আখরোট ইত্যাদি প্রতিনিয়ত এই শুকনো ফল গুলো বাচ্চাকে খাওয়ানো শুরু করলে বাচ্চার ওজন এবং শারীরিক বৃদ্ধির উন্নতি ঘটে। খেজুর ও দুধ বাচ্চাকে একসাথে খাওয়ালে বাচ্চার মানসিক বিকাশের উন্নতি হয়। প্রতিনিয়ত বাচ্চাকে একমুঠো কিসমিস, কাজুবাদাম ও আখরোট খাওয়ালে বাচ্চার ওজন দ্রুত বৃদ্ধি হবে।

দুধ: দুধ খেলে বাচ্চার ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়। প্রতিনিয়ত এক গ্লাস করে দুধ খাওয়ালে শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। দুধের মধ্যে রয়েছে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট। শিশুর দৈহিক বিকাশ ঘটতে দুধ খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বাচ্চার জন্য এক গ্লাস দুধ অবশ্যই রাখতে হবে ওজন বৃদ্ধি এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য।

বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন ও উচ্চতা

শিশুদের ছোট থেকে বড় হওয়ার সঙ্গে উচ্চতা ও ওজনের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কেননা শিশুর উচ্চতা ও ওজন বলে দেয় তার শরীর সুস্থ আছে কি না। যদিও ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ উচ্চতা জেনেটিক্স দ্বারা নির্ধারিত হয়। ২০ শতাংশ নির্ভর করে পুষ্টি এবং জীবনযাত্রার অভ্যাসের উপর।

তাই শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা,বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন ও উচ্চতা তা নিয়মিত জানতে হবে। শিশু ভূমিষ্ঠের পর ১ম সপ্তাহে ওজন কমে এবং ২-৩ সপ্তাহে ওজন স্থির থাকে। এটা স্বাভাবিক। এরপর থেকে ধীরে ধীরে ওজন বাড়তে থাকে।

প্রথম ৩ মাসে দৈনিক গড়ে ওজন বাড়ে ২৫-৩০ গ্রাম এবং পরবর্তী মাসগুলোতে কিছুটা ধীরে ওজন বাড়তে থাকে। ৩-১২ মাসে গড়ে ৪০ গ্রাম এবং ৬ মাস বয়সে শিশুর ওজন জন্মের সময়ের ওজনের দ্বিগুণ হয়, ১ বছরে ৩ গুণ, ২ বছরে ৪ গুণ, ৩ বছরে ৫ গুণ এবং ৫ বছরে ৬ গুণ হয়।

আরো পড়ুন: হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে যা খাবেন হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার

জন্ম ওজনের পার্থক্যের কারণে একই বয়সি দুটি শিশুর ওজনের কিছুটা তারতম্য ঘটতে পারে। তবে, সঠিক পরিচর্যা আর পুষ্টি পেলে তা স্বাভাবিক ওজনে পৌঁছে। শিশু যদি পর্যাপ্ত পুষ্টি পায়, বার বার রোগাক্রান্ত না হয়, 

সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা, টিকা এবং একই সঙ্গে যত্নময় পরিবেশ পায় তাহলে শিশু স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে। শিশুর বর্ধন ও বিকাশ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। শিশুর বয়স বাড়ার সঙ্গে তার ওজন ও উচ্চতা যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি তার অঙ্গ সঞ্চলন, শক্তি, সামর্থ্য ও বৃদ্ধি পায়।

শিশুর মা-বাবাকে বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, যেমন- জন্মের পর যত দ্রুত সম্ভব শিশুকে শাল দুধ বা কোলোস্ট্রাম দেওয়া, ৬ মাস পর্যন্ত অর্থাৎ ১৮০ দিন এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং, ১৮১ দিনে পৌঁছালে কমপ্লিমেন্টারি ফিডিং তাকে সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে কিনা। 

সেই সঙ্গে খেয়াল রাখা জরুরি খাবারটির ফ্রিকোয়েন্সি, এমাউন্ট, টেক্সচার যেন সঠিক হয়, বৈচিত্র থাকে। যথেষ্ট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন এবং অ্যাকটিভ রেসপন্স বা সক্রিয়ভাবে শিশুকে খাওয়ানোর বিষয়টিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত, ঘনঘন রোগাক্রান্ত হওয়া, প্রয়োজনমতো ভিটামিন ‘এ’ সাপ্লিমেন্ট দেওয়া এবং কৃমিতে আক্রান্ত হলে কৃমিনাশক দেওয়া সেসব বিষয়ে ও যথেষ্ট সচেতনতা জরুরি। শিশু কোনো কারণে অসুস্থ হলে ওজন কমতে পারে, 

কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে সে ঘনঘন অসুস্থ হচ্ছে কিনা, শিশুর যদি ওজন হ্রাস পায় অথবা স্থির থাকে তবে বুঝতে হবে শিশুর পুষ্টি সরবরাহ যথার্থ হচ্ছে না। এমন হতে থাকলে অবশ্যই আপনার নিকটবর্তী চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত

শিশুদের স্থূলতার প্রভাব পড়তে পারে সার্বিক স্বাস্থ্যে :শিশুদের স্থূলতার সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, অস্টিওআর্থারাইটিস, গলব্লাডার, শ্বাসকষ্ট, হার্ট সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, শিশুদের স্থূলতাও ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।

চলুন দেখে নেওয়া যাক শিশুদের ওজন কত হওয়া উচিত। আপনার সন্তানের ওজন ঠিক কত বেশি বা কম হলে উদ্বেগের কারণ হয় তা। ১ বছর বয়সি ছেলে হলে তার ওজন ১০.২ কেজির মধ্যে এবং মেয়ে হলে ৯.৫ কেজি থাকা উচিত।

২ থেকে ৫ বছর বয়সি ছেলে হলে তার ওজন ১২.৩ কেজি থেকে ১৬ কেজির মধ্যে এবং মেয়ে হলে ১২ থেকে ১৫ কেজি থাকা উচিত।

আরো পড়ুন: ডেঙ্গু হওয়ার পর যে খাবারগুলো খেতে হবে ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা

৩ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত শিশু ছেলে হলে হলে তার ওজন ১৪ থেকে ১৭ কেজির মধ্যে এবং মেয়ে হলে ১৪ থেকে ১৬ কেজি থাকা উচিত।

৫ থেকে ৮ বছর পর্যন্ত শিশু ছেলে হলে হলে তার ওজন ২০ থেকে ২৫ কেজির মধ্যে এবং মেয়ে হলে ১৯ থেকে ২৫ কেজি থাকা উচিত।

বয়স                                                        ছেলেদের (আদর্শ)                                মেয়েদের (আদর্শ)
৬ মাস                                                        ৭.৮ কেজি                                                ৭.২ কেজি
১ বছর                                                        ১০.২ কেজি                                                ৯.৫ কেজি
২ বছর                                                        ১২.৩ কেজি                                                ১১.৮ কেজি
৩ বছর                                                        ১৪.৬ কেজি                                            ১৪.১ কেজি
৪ বছর                                                        ১৬.৭ কেজি                                                ১৬ কেজি
৫ বছর                                                        ১৮.৭ কেজি                                            ১৭.৭ কেজি
৬ বছর                                                    ২০.৬৯ কেজি                                                ১৯.৫ কেজি
৭ বছর                                                        ২২.১ কেজি                                            ২১.৯ কেজি
৮ বছর                                                    ২৫.৩ কেজি                                                    ২৪.৮ কেজি
৯ বছর                                                            ২৮ কেজি                                            ২৬ কেজি
১০ বছর                                                ৩২ কেজি                                                            ৩২ কেজি
১১ বছর                                                        ৩৬ কেজি                                                ৩৫ কেজি
১২ বছর                                            ৪৫ কেজি                                                                   ৪৪ কেজি

শিশুর ওজন কম হলে করনীয়

শিশু পর্যাপ্ত ক্যালোরি গ্রহণ করছে না। শিশু যে ক্যালোরি গ্রহণ করে, তার দেহ সেটা শোষণ করছে না শিশুর দেহে ক্যালোরি বেশি বার্ন করছে।

স্বাস্থ্যকর পূর্ণ মেয়াদে বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুরা সাধারণত প্রতি ২ থেকে ৩ ঘন্টা অন্তর বুকের দুধ খায়। ফর্মুলা খাওয়ানো শিশুদের প্রতি ৩ ঘন্টায় ১.৫ থেকে ২ আউন্স ফর্মুলা প্রয়োজন। তাদের পেট বড় হওয়ার সাথে সাথে খাওয়ানোর সময় বাড়তে থাকে, কিন্তু কিছু শিশু তাদের প্রয়োজনীয় ক্যালোরি নাও পেতে পারে। মনে প্রশ্ন আসতে পারে কেন এমন হয়?

নবজাতক ঘুমিয়ে থাকতে পারে, তাই আপনি যদি আপনার শিশুকে জাগানোর চেষ্টা করেন বা তাকে জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করেন, তাহলে তাদের পায়ে আলতো করে সুড়সুড়ি দিন, কম্বল সরিয়ে ফেলুন বা ডায়পার খুলে সহজ করে পরিয়ে দিন। অনেক সময় দেখা যায় ঘুমের কারণে শিশু পর্যাপ্ত ক্যালোরি গ্রহণ করতে পারে না।

আরো পড়ুন: ক্যালসিয়াম কতটুকু দরকার ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা

বাচ্চাদের শিখতে হবে ফিডিং, শ্বাস নেওয়া ও গিলতে পারা। এটি মানিয়ে নিতে কেউ কেউ অন্যদের তুলনায় একটু বেশি সময় নিতে পারে। আপনার দিক থেকে নিশ্চিত করুন যে দুধ খাওয়ানোর সময় তারা আপনার সাথে গভীরভাবে লেগে আছে। ভালভাবে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

শিশু বিশেষজ্ঞরা ৬ মাস বয়সের পর থেকে শক্ত খাবার (Solid food) শুরু করার পরামর্শ দেন। সলিড খাবার শুরু করার পরেও তাদের বেশিরভাগ ক্যালোরি প্রথম বছরে বুকের দুধ বা ফর্মুলা থেকে আসবে। কখনও কখনও শক্ত খাবার শুরু করার সময় ওজন বৃদ্ধি কিছু কম হতে পারে। নিশ্চিত করুন যে আপনার শিশু ঘন ঘন বুকের দুধ বা ফর্মুলা খাওয়ানো শুরু করার পরেও ঘন ঘন অন্য খাবারও খাচ্ছে।

বয়স অনুযায়ী মেয়ে বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত

বয়স                                             উচ্চতা                                                                 ওজন
নবজাতক                                       ১ ফুট ৮ ইঞ্চি                                                 ৩.৩ কেজি
৩ মাস                                                ২ ফুট                                                 ৬.০ কেজি
৬ মাস                                         ২ ফুট ২.৭ ইঞ্চি                                         ৭.৮ কেজি
৯ মাস                                         ২ ফুট ৪.৫ ইঞ্চি                                         ৯.২ কেজি
১ বছর                                         ২ ফুট ৬ ইঞ্চি                                                 ১০.২ কেজি
১ বছর ৬ মাস                                 ২ ফুট ৭.৮ ইঞ্চি                                         ১১.২৫ কেজি
২ বছর                                         ২ ফুট ৯.৭ ইঞ্চি                                         ১২.৩ কেজি
২ বছর ৬ মাস                                 ৩ ফুট                                                         ১৩.৪৫ কেজি
৩ বছর                                         ৩ ফুট ১.৪ ইঞ্চি                                         ১৪.৬ কেজি
৩ বছর ৬ মাস                         ৩ ফুট ২.৯ ইঞ্চি                                         ১৫.৬৫ কেজি
৪ বছর                                         ৩ ফুট ৪.৫ ইঞ্চি                                         ১৬.৭ কেজি
৪ বছর ৬ মাস                                 ৩ ফুট ৫.৯ ইঞ্চি                                         ১৭.৭ কেজি
৫ বছর                                         ৩ ফুট ৭.৩ ইঞ্চি                                         ১৮.৭ কেজি
৫ বছর ৬ মাস                         ৩ ফুট ৮.৫ ইঞ্চি                                         ১৯.৭ কেজি
৬ বছর                                         ৩ ফুট ৯.৮ ইঞ্চি                                         ২০.৭ কেজি
৭ বছর                                         ৪ ফুট                                                         ২২.৯ কেজি
৮ বছর                                         ৪ ফুট ২ ইঞ্চি                                                 ২৫.৩ কেজি
৯ বছর                                         ৪ ফুট ৪ ইঞ্চি                                                 ২৮.১ কেজি
১০ বছর                                         ৪ ফুট ৬.২ ইঞ্চি                                         ৩১.৪ কেজি
১১ বছর                                         ৪ ফুট ৭.২ ইঞ্চি                                         ৩২.২ কেজি
১২ বছর                                         ৫ ফুট ইঞ্চি                                                 ৩৭ কেজি

শিশুর ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধির চার্ট

মনে রাখবেন একটি বাচ্চার বৃদ্ধির একমাত্র ইঙ্গিতেকারক উচ্চতা অথবা ওজন নয়। তার জেনেটিক্স, এথ্নিসিটিও খুব মূখ্য ভূমিকা পালন করে।

সঠিকভাবে শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ হচ্ছে কিনা, তা নিয়মিত জানতে হবে। শিশু ভূমিষ্ঠের পর ১ম সপ্তাহে ওজন কমে এবং ২-৩ সপ্তাহে ওজন স্থির থাকে। এটা স্বাভাবিক। এরপর থেকে ধীরে ধীরে ওজন বাড়তে থাকে। প্রথম ৩ মাসে দৈনিক গড়ে ওজন বাড়ে ২৫-৩০ গ্রাম এবং পরবর্তী মাসগুলোতে কিছুটা ধীরে ওজন বাড়তে থাকে। 

আরো পড়ুন: ভিটামিন সি কোন খাবারে আছে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার

৩-১২ মাসে গড়ে ৪০ গ্রাম এবং ৬ মাস বয়সে শিশুর ওজন জন্মের সময়ের ওজনের দ্বিগুণ হয়, ১ বছরে ৩ গুণ, ২ বছরে ৪ গুণ, ৩ বছরে ৫ গুণ এবং ৫ বছরে ৬ গুণ হয়। জন্ম ওজনের পার্থক্যের কারণে একই বয়সি দুটি শিশুর ওজনের কিছুটা তারতম্য ঘটতে পারে। 

তবে, সঠিক পরিচর্যা আর পুষ্টি পেলে তা স্বাভাবিক ওজনে পৌঁছে। শিশু যদি পর্যাপ্ত পুষ্টি পায়, বার বার রোগাক্রান্ত না হয়, সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা, টিকা এবং একই সঙ্গে যত্নময় পরিবেশ পায় তাহলে শিশু স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে। শিশুর বর্ধন ও বিকাশ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। 

শিশুর বয়স বাড়ার সঙ্গে তার ওজন ও উচ্চতা যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি তার অঙ্গ সঞ্চলন, শক্তি, সামর্থ্য ও বৃদ্ধি পায়। যেমন-

শিশুর বয়স প্রতি মাসে গড় ওজন বৃদ্ধি
জন্ম হতে ৬ মাস ৬০০-৮০০ গ্রাম
৭-১২ মাস ৩০০-৪০০ গ্রাম
১৩-২৪ মাস ১৫০-২০০ গ্রাম

শিশুর বয়স শিশুর র্বধন ও বিকাশ
৩.৮-৯.২ (গড়ে ৬) মাস শিশু সাহায্য ছাড়া বসতে পারে
৫.২-১৩.৫ (গড়ে ৮.৫) মাস হাত ও হাঁটু দিয়ে হামাগুড়ি দিতে পারে
৫.৯-১৩.৭ (গড়ে ৯.২) মাস সাহায্য নিয়ে হাঁটতে পারে
৮.২-১৭.৬ (গড়ে ১২.১) মাস একা একা হাঁটতে পারে

বাচ্চার ওজন বৃদ্ধির খাবার

পর্যাপ্ত প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এমন খাবার শিশুর পেশি ও টিস্যু গঠনে সহায়তা করে। মুরগি, মাছ, ডিম, সয়াবিন, বাদাম, মটরশুঁটি খেতে হবে। এ ছাড়া খেজুর, কিশমিশ, নরম খিচুড়ি খেতে পারেন। 

ফল ও সবজিতে ভিটামিন, মিনারেল ও আঁশ থাকে, যা শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করে। এ জন্য কলা, আপেল, পাকা পেয়ারা খেতে পারেন। এ ছাড়া ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ ফল এ সময় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন তাজা শাকসবজি দিয়ে স্যুপ খেতে পারেন।

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, যেমন দই, পনির ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ। এগুলো শিশুর হাড় গঠনে সহায়তার পাশাপাশি ওজন, উচ্চতা ও শারীরিক গঠনে সাহায্য করে। ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে খেতে পারেন ডিমের কুসুম, কলিজা, কমলা, কচুশাক, ছোট মাছ ইত্যাদি। 

প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে। ক্যালসিয়াম ভালোভাবে কাজে লাগাতে ভিটামিন ডির ঘাটতি থাকা যাবে না। এ জন্য প্রতিদিন গায়ে রোদ লাগাতে হবে।

গোটা শস্য, যেমন ব্রাউন চাল, রুটি, ওটমিল ইত্যাদি খাবারে পর্যাপ্ত আঁশ ও ভিটামিন বি পাওয়া যায়, যা শিশুর ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে।

অনেকের গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। ফলে শিশুর ওজন কিংবা শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এ জন্য পাঁচমিশালি ডাল, পালংশাক, কলিজা পরিমিত গ্রহণ করতে হবে।

এটি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশেই শুধু কাজে দেয় না, শিশুর সার্বিক উন্নতিতেই সহায়তা করে। এ জন্য যেসব মাছে তেল আছে সেগুলো খেতে হবে। এ ছাড়া বীজজাতীয় খাবার, যেমন চিয়াবীজ, আখরোট গ্রহণ করতে পারেন। 

অন্তঃসত্ত্বা মাকে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, এতে শিশুর স্বাস্থ্য ভালো থাকার পাশাপাশি তার শরীরে পুষ্টির শোষণ নিশ্চিত হবে। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে।

নবজাতক শিশুর ওজন কত হওয়া উচিত

বাচ্চার ওজন নিয়ে বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই। জন্মের সময় শিশুর ওজন কেমন থাকে, ওজন ঠিকভাবে বাড়ছে কি না, শিশুর বৃদ্ধি সঠিকভাবে হচ্ছে কি না, কোন বয়সে ওজন কত থাকা দরকার, কী কী কারণে ওজন বাড়তে বা কমতে পারে ইত্যাদি প্রশ্ন নিয়ে মায়েরা সবসময়ই ভাবতে থাকেন।

বাচ্চার ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম হওয়া যেমন দুশ্চিন্তার, তেমনই ওজন অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়াটাও ভয়ের। শিশু যদি ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করে, যদি তার প্রস্রাব-পায়খানা ঠিক থাকে তাহলে ওজন বেশি নাকি কম এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। এ লেখাতে নবজাতক বা ১ বছরের কম বয়েসী বাচ্চাদের ওজন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

বাচ্চার ওজন বিভিন্ন বয়সে কত হলে ঠিক সেটা তার জন্মের সময়ের ওজনের সাথে তুলনা করে হিসেব করা হয়।

আমেরিকায় একটি শিশুর জন্মের সময় সাধারণত গড় ওজন ৩ থেকে সাড়ে ৩ কেজি হয়ে থাকে। শিশুর বার্থওয়েট বা জন্মের সময়ের ওজন যদি আড়াই থেকে ৩.৮ কেজির মধ্যে হয় তাহলে সেটা স্বাভাবিক ওজন হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। 

বাচ্চার ওজন ২.৫ কেজি থেকে ৩.৮ কেজির তুলনায় কম বা বেশি হলে শিশুটি সুস্থ আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে চিকিৎসক কিছু বাড়তি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন।

সব শিশু সমান নয়। কারো ওজন বেশি, আবার কারো কম। ওজন বেশি বা কম হওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে।

মায়ের নিজের ওজন ও খাবারের রুটিনের ওপর বাচ্চার ওজন নির্ভর করে। গর্ভধারণের আগে থেকেই বা গর্ভাবস্থার পুরো সময়জুড়ে মায়ের ওজন যদি বেশি থাকে, তাহলে বাচ্চার ওজনও বেশি হতে পারে। 

অন্যদিকে, মা যদি গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার না খায় বা পুষ্টিহীনতায় ভোগে, এর প্রভাব বাচ্চার ওজনে পড়বে। এক্ষেত্রে নবজাতকের ওজন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

শিশু জন্মানোর আগে মায়ের স্বাস্থ্য কেমন ছিল, মদ বা সিগারেট আসক্তি ছিল কি না, ডায়াবেটিস আছে কি না— এসবের ওপরেও শিশুর জন্মের সময়ের ওজন কেমন হবে তা নির্ভর করে। 

বংশগতভাবে মায়ের স্বাস্থ্য কেমন, বা মায়ের নিজের বার্থওয়েট বা জন্মের সময় ওজন কেমন ছিল, বাবা-মা দুজনেরই শারীরিক গঠন ও ওজন কেমন, এগুলোর ওপরও শিশুর স্বাস্থ্য কেমন হবে তা নির্ভর করে। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন