২০২৪ সালের ঈদুল আযহা কত তারিখে

ঈদুল আজহা ২০২৪ কত তারিখে বাংলাদেশ বছর ঘুরে আবারও আসছে আমাদের পবিত্র ঈদুল আযহা। সকল মুসলিম জাতীর জন্য এই দিন-টি অনেক আনন্দের। ইসলাম ধর্মে দুটি ঈদের কথা উল্লেখ আছে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা। ঈদুল ফিতরের কিছু দিন পরেই শুরু হয় ঈদুল আযহা। ঈদুল আযহার করণীয়

মুসলিম ভাইবোনদের কাছে দ্বিতীয় আনন্দের দিন হলো ঈদুল আযহা। ঈদুল আযহা বা ঈদুল আদহা অর্থ হলো ত্যাগের উৎসব।

ঈদুল আজহা ২০২৪ কত তারিখে বাংলাদেশ

ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে দ্বিতীয় আনন্দের উৎসব হলো ঈদুল আযহা অর্থাৎ কুরবানির ঈদ। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আজকে আমি আপনাদের সাথে ঈদুল আযহা 2024 কত তারিখে বাংলাদেশে হবে তা বিস্তারিত আপনাদের সাথে আলোচনা করব।

২০২৪ সালের ঈদুল আযহা কত তারিখে

ইসলামের বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী, মহান আল্লাহ তায়ালা মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে স্বপ্নে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি কোরবানি করার নির্দেশ দেন।

এই আদেশ অনুযায়ী হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তার সবচেয়ে প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে কোরবানি করার জন্য উদ্যত হলে আল্লাহ তায়ালা তাকে তা করতে বাধা দেন এবং পুত্রের পরিবর্তে পশু কোরবানীর নির্দেশ দেন।

এই ঘটনাকে স্মরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রতি বছর এই দিবসটি পালন করে। হিজরি বর্ষপঞ্জি হিসাবে জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ থেকে শুরু করে ১২ তারিখ পর্যন্ত ৩ দিন ধরে ঈদুল আজহা চলে। হিজরি চান্দ্র বছরের গণনা অনুযায়ী ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার মাঝে ২ মাস ১০ দিন ব্যবধান থাকে। 

আরো পড়ুন: ঈদুল আযহার ফেসবুক স্ট্যাটাস

এবার (২০২৪ সালে) ১০ই জিলহজ বা কোরবানির ঈদ হতে পারে জুন মাসের ১৬ বা ১৭ তারিখ। সৌদি আরবের চাঁদ দেখা কমিটির ঘোষণা অনুযায়ী জুন মাসের ১৬ তারিখে দেশটিতে কোরবানির ঈদ পালিত হবে। 

বাংলাদেশে সাধারণত সৌদি আরব, কাতার, ওমান, আরব আমিরাত এই সকল দেশের পরের দিন কোরবানির ঈদ পালন করা হয়। সেই হিসেবে বাংলাদেশের কোরবানির ঈদ পালিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে জুন মাসের ১৭ তারিখ। তবে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে তারিখে পরিবর্তন হতে পারে।

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম আসন বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আজ ২ জুন থেকে এই আসন বিক্রি শুরু হবে। এবারও ঢাকা থেকে বহির্গামী ট্রেনের ৩৩ হাজার ৫০০টি আসনের শতভাগই অনলাইনে বিক্রি হবে। 

অনলাইনের চাপ কমাতে অঞ্চলের আসন দুই সময়ে বিক্রি করা হবে। পশ্চিমাঞ্চলের আসন বিক্রি শুরু হবে সকাল ৮টা থেকে। আর পূর্বাঞ্চলের আসন বিক্রি শুরু হবে দুপুর ২টায়।

প্রথমে বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে (https://eticket.railway.gov.bd/) প্রবেশ করতে হবে। পরে ওয়েবসাইটের উপরের দিকে ‘রেজিস্ট্রেশন’ ট্যাবে ক্লিক করতে হবে। এতে রেজিস্ট্রেশনের জন্য নতুন একটি পেজ আসবে। এ পেজে মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে ‘আই অ্যাম নট অ্যা রোবট’ বক্সে ক্লিক করতে হবে।

এবছর বাংলাদেশে ঈদুল আযহা বা কুরবানির ঈদ অনুষ্ঠিত হবে ১৬ জুন তারিখে। চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল।

ঈদুল আজহা ২০২৪ কত তারিখে বাংলাদেশ

ইসলামে যতগুলো বিধান রয়েছে তার অন্যতম হলো কো*রবানি। কো*রবানি অর্থ হচ্ছে কাছে যাওয়া, নৈকট্য অর্জন করা, ত্যাগ স্বীকার করা বা বিসর্জন দেওয়া। 

ইসলামে হিজরি ক্যালেন্ডারের ১২তম চন্দ্রমাসের জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত ঈদ-উল-আযহা পালনের সময় হিসাবে নির্ধারিত রয়েছে। ঈদ-উল-আযহার দিনে বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হালাল পশু কো*রবানি করে থাকেন।

ঈদ-উল-আযহার দিনে কো*রবানিতে রয়েছে আত্মত্যাগের মহিমা ও আর্তের সেবার গৌরব। আদি পিতা হজরত আদম (আ.)–এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিল থেকে শুরু হওয়া এই কোরবানির ইতিহাস মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.)–এর মহান আত্মবিসর্জনে উজ্জ্বল, যা কিয়ামত পর্যন্ত অম্লান রবে।

আরো পড়ুন: ঈদের শুভেচ্ছা ফেসবুক স্ট্যাটাস

নামাজের পর কোরবানি দেওয়া হয়। কোরবানির মাংস তিন ভাগ করে নিজেদের জন্য রাখা হয়, আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে বিতরণ করা হয় এবং গরিবদের দেওয়া হয়।

رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا، فَقَالَ: مَا هَذَوَانِ الْمَا؟ قَالُوا: كُنّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِي الْجَاهِلِيّةِ، فَقَالَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: إِنّ اللّهَ قَدْ خَمْ مِنْ أَبِيْكً ْهُمَا: يَوْمَ الْأَضْحَى، وَيَوْمَ الْفِطْرِ।

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মদীনায় হিজরত করেন, তখন মদীনাবাসীদের দুটি উৎসব ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এ দুটি দিন কি? (তোমরা কেন এই দুই দিন উৎসব পালন কর?) তারা বললো আমরা প্রাক-ইসলামী যুগে এই দুই দিন উদযাপন করতাম। 

তখন আল্লাহর রাসুল, হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বললেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে এ দুটির পরিবর্তে দুটি উত্তম দিন দিয়েছেন- ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস 1134; সুনানে নাসায়ী, হাদিস 1556; মুসনাদে আহমদ, হাদিস 12006)

ঈদুল আজহার তাৎপর্য ও শিক্ষা

পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত পরম আনন্দের একটি দিন। সারা বিশ্বের মুসলমান ঈদুল আজহায় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও করুণা লাভে গৃহপালিত পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। 

মহান আল্লাহর কাছে হজরত ইবরাহিম আ:-এর পূর্ণ আত্মসমর্পণ ও হজরত ইসমাইল আ:-এর সুমহান ত্যাগের স্মৃতিবিজড়িত পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানির মহিমা আমাদের অন্তর্লোকের সঙ্কীর্ণতা ধুয়ে দেয়। ইসলামের এ মহান চেতনা ধারণ করে ত্যাগ, ধৈর্য ও তিতিক্ষার ভেতর দিয়ে পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠার শিক্ষায় আমরা ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনকে গৌরবান্বিত করে তুলতে পারি।

আমাদের দেশে কোরবানির ঈদে নতুন করে সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়। গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন পাড়া বা গোষ্ঠীভিত্তিক সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার চিত্র লক্ষ করা যায়। ঈদুল আজহা এলেই তারা সব ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে যায়। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডেও তাদের এ সঙ্ঘবদ্ধতার প্রভাব বিদ্যমান থাকে। নিজেদের আনন্দে অন্যদের শরিক করা ঈদুল আজহার শিক্ষা। 

কোরবানিকৃত পশুর গোশত তিন অংশে ভাগ করে এক অংশ নিজের জন্য সংরক্ষণ, দ্বিতীয় অংশ আত্মীয়-স্বজনকে প্রদান এবং তৃতীয় অংশ সমাজের অভাবগ্রস্ত ও দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া ইসলামের বিধান। আল্লাহ তায়ালা কোরবানির পশুর গোশতের একটি অংশ দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত মানুষকে দান করার নির্দেশ দিয়েছেন। (আল কুরআন, সূরা হজ : ২৭, ২৮, ৩৬)

শরিয়তের পরিভাষায়- আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে জিলহজ মাসের ১০, ১১, ১২ এই তিন দিনে আল্লাহর নামে নির্দিষ্ট নিয়মে হালাল পশু জবাই করা হলো কোরবানি। ত্যাগ, তিতিক্ষা ও প্রিয় বস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা কোরবানির তাৎপর্য।

পবিত্র ঈদুল আজহার শিক্ষা

পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত পরম আনন্দের একটি দিন। সারা বিশ্বের মুসলমান ঈদুল আজহায় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও করুণা লাভে গৃহপালিত পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। 

মহান আল্লাহর কাছে হজরত ইবরাহিম আ:-এর পূর্ণ আত্মসমর্পণ ও হজরত ইসমাইল আ:-এর সুমহান ত্যাগের স্মৃতিবিজড়িত পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানির মহিমা আমাদের অন্তর্লোকের সঙ্কীর্ণতা ধুয়ে দেয়। ইসলামের এ মহান চেতনা ধারণ করে ত্যাগ, ধৈর্য ও তিতিক্ষার ভেতর দিয়ে পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠার শিক্ষায় আমরা ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনকে গৌরবান্বিত করে তুলতে পারি।

কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য জাকাতের নিসাবের মতো সম্পদের এক বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়; বরং যে অবস্থায় সাদাকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয় ওই অবস্থায় কোরবানিও ওয়াজিব হবে। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী, পঞ্চম খণ্ড; মুফতি কিফায়তুল্লাহ দেহলভী, কিফায়তুল মুফতি, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৮৩; মুফতি তাকি ওসমানী, দারসে তিরমিজি, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা : ১১৪-১১৫)

আরো পড়ুন: ঈদ মোবারক ফেসবুক স্ট্যাটাস ২০২৪

আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে হজরত ইবরাহিম আ: স্বপ্নাদিষ্ট হয়েছিলেন প্রিয়তম বস্তু তথা তার পুত্র ইসমাইলকে কোরবানি করতে। সেই অনুযায়ী তিনি পরম করুণাময় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রিয় পুত্রকে কোরবানি দিতে উদ্যত হন। কিন্তু মহান আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁকে আর শেষ পর্যন্ত পুত্র কোরবানি দিতে হয়নি। ইসমাইলের পরিবর্তে কোরবানি হয় একটি পশু। (তাফসির ইবনে কাছির, চতুর্থ খণ্ড : ২৩৯৮-২৪০১) মহান আল্লাহর এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন হজরত ইবরাহিম আ:। 

এই সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমাকে তুলে ধরাই ঈদুল আজহার পশু কোরবানির প্রধান মর্মবাণী। কোরবানিকে হাদিসের পরিভাষায় বলা হয় ‘আল উজহিয়া’। এর অর্থ হলো- আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যা জবাই করা হয়। (সহিহ আল বুখারি, কিতাবুল আজাহি, হাদিস নং-৫৫৪৫)

হজরত ইবরাহিমের আ:-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে মুসলিম সমাজে পশু কোরবানির প্রবর্তন হয়েছে। এটি আল্লাহর প্রেম ও তাঁর কাছে আত্মনিবেদনের এক অনন্য প্রতীক। এ প্রসঙ্গে নবী করিম সা: ইরশাদ করেন, ‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কোরবানি করবে না, সে যেন আমার ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ; ইবনে কুদামাহ, আল মুঘনি, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৬১৭) প্রকৃতপক্ষে পবিত্র জিলহজ মাসে হজ, কোরবানি ও ঈদ পরস্পর সম্পর্কিত। 

আমরা যখন ঈদ ও কোরবানি উৎসব উদযাপনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছি, তখন পবিত্র মক্কা নগরীতে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত লাখ লাখ মুসলমান হজব্রত পালন করছেন। আমরাও কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের সুযোগ পাব। কেননা, ‘কুরব’ শব্দমূল হতে উৎপন্ন কোরবানির অর্থ হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা।

নিজেদের আনন্দে অন্যদের শরিক করা ঈদুল আজহার শিক্ষা। কোরবানিকৃত পশুর গোশত তিন অংশে ভাগ করে এক অংশ নিজের জন্য সংরক্ষণ, দ্বিতীয় অংশ আত্মীয়-স্বজনকে প্রদান এবং তৃতীয় অংশ সমাজের অভাবগ্রস্ত ও দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া ইসলামের বিধান। 

আল্লাহ তায়ালা কোরবানির পশুর গোশতের একটি অংশ দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত মানুষকে দান করার নির্দেশ দিয়েছেন। (আল কুরআন, সূরা হজ : ২৭, ২৮, ৩৬) ইসলামের বিধান অনুযায়ী কোরবানির গোশতের বিলি-বণ্টন ন্যায়সঙ্গত হওয়া উচিত। যারা কোরবানি দিতে পারবেন না, তাদের আনন্দে শামিল করতে সর্বাত্মক চেষ্টা থাকতে হবে। এটি দ্বীন-দুঃখী, গরিব-মিসকিনসহ যত বেশি অভাবী মানুষকে দেয়া যায় তত উত্তম। 

মনে রাখতে হবে, কোরবানি আল্লাহর হুকুম ও কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশিত ইবাদত। এটি কোনো রসম বা প্রথা নয়। তাই কোরবানির নামে উচ্চ দামের পশু কিনে বাহ্যিক আড়ম্বরতা প্রদর্শন বা বাহবা কুড়ানোর প্রবণতা দোষাশ্রিত এবং তা বর্জনীয়।

মুসলমানদের জীবনে ঈদুল আজহার গুরুত্ব ও আনন্দ অপরিসীম। উৎসব হিসেবে পবিত্র ধর্মীয় অনুভ‚তি এর সাথে সম্পৃক্ত। ইসলামের জীবন আর ধর্ম একই সূত্রে গাঁথা। তাই ঈদ শুধু আনন্দের উৎস নয়; বরং এর সাথে জড়িয়ে আছে কর্তব্যবোধ, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধে বৈশিষ্ট্য। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সম্পৃক্ততার ভাবটি এখানে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। 

এলাকার লোকেরা ঈদের নামাজের জন্য নির্দিষ্ট ঈদগাহে সমবেত হয়। এতে সবার মধ্যে একাত্মতা ও সম্প্রীতি ফুটে ওঠে- ইসলামের মহান ভ্রাতৃত্ববোধে সবাই উদ্দীপ্ত হয়। পরস্পর কোলাকুলির মাধ্যমে সব বিভেদ ভুলে গিয়ে পরস্পর ভাই বলে গৃহীত হয়। ধনী-গরিবের ব্যবধান তখন প্রাধান্য পায় না। ঈদের আনন্দ সবাই ভাগ করে নেয়। 

এর ফলে ধনী-গরিব, শত্রু-মিত্র, আত্মীয়স্বজন সবাই পরস্পর ভ্রাতৃত্বের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে থাকে। ঈদ মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভোলার জন্য, মানুষের মধ্যে প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি হওয়ার জন্য পরম মিলনের বাণী নিয়ে আসে।

ঈদুল আজহার যে কোরবানি দেয়া হয় তার মাধ্যমে মানুষের মনের পরীক্ষা হয়, কোরবানির রক্ত-গোশত কখনো আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না। শুধু দেখা হয় মানুষের হৃদয়। ঈদের মধ্যে আছে সাম্যের বাণী, সহানুভ‚তিশীল হৃদয়ের পরিচয়। পরোপকার ও ত্যাগের মহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয় মানুষের মন।

ঈদুল আযহার করণীয়

পবিত্র ঈদুল আজহা ও কোরবানি ইসলামের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। বিশ্ব মুসলিম পরম ত্যাগের নিদর্শনস্বরূপ জিলহজ মাসের ১০ তারিখ মহাসমারোহে পশু জবেহের মাধ্যমে কোরবানির যে আনন্দ উৎসব পালন করে থাকে, তাকে ঈদুল আজহা বলে। ‘আজহা’ শব্দের অর্থ হলো ত্যাগ। ঈদুল আজহা প্রতি বছর নিয়ে আসে এক বৈচিত্র্যময়, স্বাতন্ত্রধর্মী উৎসব।

বস্তুত, হজরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহ তাআলার নির্দেশ পালন করতে গিয়ে প্রাণাধিক প্রিয় একমাত্র পুত্র হজরত ইসমাঈল (আ.)-কে কোরবানি করার মতো যে ঐতিহাসিক নজির স্থাপন করে গেছেন, সে সুন্নাত পালনার্থে মুসলিম জাতি আজও কোরবানির উৎসব পালন করে থাকে। আর সে কারণেই হজরত ইব্রাহিম ও হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর ত্যাগ-তিতিক্ষার সুমহান আদর্শকে চিরজাগরুক রাখার জন্য এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে আনুগত্যশীল বান্দা

সেই সঙ্গে সুগন্ধী ব্যবহার করা। ঈদুল আজহায় কিছু না খেয়ে নামাজের পর কোরবানির গোশত দিয়ে প্রথমে আহার করা। নবি করিম (স.) ঈদুল আজহার দিনে ঈদের নামাজ আদায় না করা পর্যন্ত কোনো কিছু খেতেন না। তিনি কোরবানির মাংস দিয়ে প্রথম আহার করতেন। 

এক পথ দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া এবং অন্যপথ দিয়ে আসা। তাকবির পড়তে পড়তে ঈদগাহে যাওয়া। তবে জিলহজ মাসের নয় তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত ফরজ নামাজ শেষে মুসলমানদের জন্য তাকবির পড়া ওয়াজিব।

তারপর ঈদুল আজহার দুই রাকাআত সালাত আদায় করা। নামাজ শেষে খুতবা শোনা ওয়াজিব। অতঃপর সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করা। এক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরাম একে-অন্যকে লক্ষ্য করে বলতেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’ অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ও আপনাদের নেক আমলগুলো কবুল করুন। তারপর মসনুন তরিকায় কুরবানি করা। 

সম্ভব হলে নিজের কোরবানি নিজে করা অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে কোরবানি করানো। কোরবানির গোশত নিজে খাবেন, নিজের পরিবারবর্গকে খাওয়াবেন, আত্মীয়স্বজনকে হাদিয়া দেবেন ও গরিব-মিসকিনকে দান করবেন। 

তবে যারা মধ্যবিত্ত শ্রেণির নিজে কোরবানি দিতে পারেন নাই এবং লজ্জায় কারো কাছে চাইতেও পারেন না এমন লোকদের খুঁজে তাদের হাতে কোরবানির গোশত পৌঁছে দিতে হবে। পবিত্র ঈদুল আজহার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো কোরবানি। একদা সাহাবায়ের তাত্পর্য জানার জন্য প্রিয়নবিজিকে জিগ্যেস করলেন, হে আল্লাহর রসুল! 

কোরবানি কী? জবাবে নবিজ বললেন, এটা তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নাত। নবিজকে আবার জিগ্যেস করা হলো—এতে আমাদের জন্য কি রয়েছে? নবিজি বললেন, কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে তোমাদের জন্য নেকি রয়েছে। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ)

আল্লাহর প্রতি পরম আনুগত্য, কঠোরতম ত্যাগ ও তিতিক্ষা আর আত্মোত্সর্গের অকপট প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে কোরবানি দিতে পারলেই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব। আল্লাহ তাআলা বলেন :‘তোমাদের কোরবানির গোশত ও রক্ত কোনো অবস্থাতেই আল্লাহর দরবারে পৌঁছে না, পৌঁছে শুধু তোমাদের তাকওয়া।’ (সুরা হজ্জ: ৩৭)

সুতরাং কোরবানির পূর্বে মনকে কুলুষমুক্ত রাখতে হবে। কোরবানির মধ্যদিয়ে মন ও মগজে রক্ষিত পশু-প্রবৃত্তিকে ছুঁড়ে ফেলতে হবে। আল্লাহর প্রেম ও ভালোবাসায় উজ্জীবিত হয়ে এই কোরবানি যে শুধু তারই জন্য এ মনোবৃত্তি নিয়ে কোরবানি দিতে হবে। স্বীয় অভিব্যক্তি এভাবে প্রকাশ করতে হবে যে, ‘আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু সবাই জগতের প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার জন্য।’ (সুরা আনআম : ১৬২)

ঈদুল আজহার দিনে আরেকটি অন্যতম দায়িত্ব হলো— জবাই করা পশুর রক্ত, আবর্জনা ও হাড় থেকে যেন পরিবেশ দূষিত না করে সেদিকে নজর রাখা। কোরবানি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্ত, মজ্জা ও আবর্জনা নিরাপদ দূরত্বে নির্দিষ্ট জায়গায় পলিথিনে পুরে মাটির নিচে চাপা দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ।

ঈদের দিনে সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের আরেকটি বিশেষ করণীয় হচ্ছে—ইয়াতিম অসহায় দুস্হ মানুষের খোঁজখবর নেওয়া, তাদের খাবার খাওয়ানো এবং সম্ভব হলে তাদের নতুন কাপড়ের ব্যবস্থা করা। এটা প্রতিটি মুমিনের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। যেমনটি আল-কুরআনে বলা হয়েছে—‘তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকিন, ইয়াতিম ও বন্দিকে খাদ্য দান করে।’ (সুরা দাহর : ৮)

আল্লাহ তাআলা আমাদের ঈদুল আজহার করণীয় আমলগুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমীন!

ঈদুল আযহার দিনের ওয়াজ






ঈদুল আযহা সম্পর্কে কোরআনের আয়াত

মুসলিম ভাই, আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করছি যে, তিনি তোমাকে দীর্ঘজীবি করেছেন, যার ফলে তুমি আজকের এ দিনগুলোতে উপনীত হওয়ার সুযোগ লাভ করেছে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য ইবাদত ও নেক আমল করার সুযোগ পেয়েছ।

ঈদ এ উম্মতের বৈশিষ্ট্য এবং দ্বীনের একটি উজ্জ্বল নিদর্শন। তোমার দায়িত্ব এটা গুরুত্ব ও সম্মানসহ গ্রহণ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ذَٰلِكَۖ وَمَن يُعَظِّمۡ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقۡوَى ٱلۡقُلُوبِ ٣٢ ﴾ [الحج : ٣٢]

এটাই হল আল্লাহর বিধান; যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে। নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাকওয়া থেকেই।

১. তাকবীর: আরাফার দিনের ফজর থেকে শুরু করে তাশরীকের দিনের শেষ পর্যন্ত, তথা যিলহজ মাসের তেরো তারিখ আসর পর্যন্ত তাকবীর বলা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡدُودَٰتٖۚ ٢٠٣ ﴾ [البقرة: ٢٠٣]

“আর তোমরা আল্লাহকে স্মরণ কর নির্দিষ্ট দিনসমূহে।”[2] তাকবীর বলার পদ্ধতি:

"الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله والله أكبر، الله أكبر ولله الحمد "

আল্লাহর যিকির বুলন্দ ও সর্বত্র ব্যাপক করার নিয়তে পুরুষদের জন্য মসজিদ, বাজার, বাড়িতে ও সালাতের পশ্চাতে উচ্চ স্বরে তাকবীর পাঠ করা সুন্নত।


২. কুরবানি করা: ঈদের দিন ঈদের সালাতের পর কুরবানি করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«من ذبح قبل أن يصلي فليعد مكانها أخرى، ومن لم يذبح فليذبح » [رواه البخاري ومسلم].

যে ব্যক্তি ঈদের আগে যবেহ করল, তার উচিৎ তার জায়গায় আরেকটি কুরবানি করা। আর যে এখনো কুরবানি করেনি, তার উচিৎ এখন কুরবানি করা।[3]

কুরবানি করার সময় চার দিন। অর্থাৎ নহরের দিন এবং তার পরবর্তী তাশরীকের তিন দিন। যেহেতু রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«كل أيام التشريق ذبح» انظر السلسلة الصحيحة

“তাশরীকের দিন কুরবানির দিন।

৩. পুরুষদের জন্য গোসল করা ও সুগন্ধি মাখা: সুন্দর কাপড় পরিধান করা, টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান না করা, কাপড়ের ক্ষেত্রে অপচয় না করা। দাঁড়ি না মুণ্ডানো, কেননা এটা হারাম। নারীদের জন্য ঈদগাহে যাওয়া বৈধ, তবে আতর ও সৌন্দর্য প্রদর্শন পরিহার করবে। মুসলিম নারীদের জন্য কখনো শোভা পায় না যে সে আল্লাহর ইবাদতের জন্য তাঁরই গুনাহতে লিপ্ত হয়ে ধর্মীয় কোনো ইবাদতে অংশ গ্রহণ করবে। যেমন, সৌন্দর্য প্রদর্শন, সুগন্ধি ব্যবহার ইত্যাদি করে ঈদগাহে উপস্থিত হওয়া।

বস্তুত ঈদের দিন গোসল করার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা মোস্তাহাব। কেননা এ দিনে সকল মানুষ সালাত আদায়ের জন্য মিলিত হয়। যে কারণে জুমার দিন গোসল করা মোস্তাহাব সে কারণেই ঈদের দিন ঈদের সালাতের পূর্বে গোসল করাও মোস্তাহাব। হাদিসে এসেছে—

صح عن ابن عمر- رضى الله عنهما- أنه كان يغتسل يوم الفطر قبل أن يغدوا إلى المصلى. رواه الإمام مالك في أول كتاب العيدين وقال سعيد بن المسيب سنة الفطر ثلاث: المشي إلى المصلى، والأكل قبل الخروج، والاغتسال. [ إرواء الغليل للألباني]

ইবনে উমর রা. থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত, তিনি ঈদুল-ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন।[5] সায়ীদ ইবনে মুসাইয়াব রহ. বলেন: ঈদুল ফিতরের সুন্নত তিনটি: ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া, ঈদগাহের দিকে রওয়ানার পূর্বে কিছু খাওয়া, গোসল করা। এমনি ভাবে সুগন্ধি ব্যবহার ও উত্তম পোশাক পরিধান করা মোস্তাহাব।


৪. কুরবানির গোস্ত ভক্ষণ করাঃ ঈদুল আজহার দিন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খানা খেতেন না, যতক্ষণ না তিনি ঈদগাহ থেকে ফিরে আসতেন, অতঃপর তিনি কুরবানি গোস্ত থেকে ভক্ষণ করতেন।

তাই সুন্নত হল ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে খাবার গ্রহণ করা। আর ঈদুল আযহা-তে ঈদের সালাতের পূর্বে কিছু না খেয়ে সালাত আদায়ের পর কুরবানির মাংস খাওয়া সুন্নত। হাদিসে এসেছে—

عن بريدة- رضى الله عنه- قال: كان النبي صلى الله عليه وسلم لا يخرج يوم الفطر حتى يأكل، ولا يأكل يوم الأضحى حتى يرجع، فيأكل من أضحيته . [رواه أحمد، وصححه الألباني في صحيح ابن ماجه]

বুরাই-দা রা. থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বের হতেন না, আর ঈদুল আজহার দিনে ঈদের সালাতের পূর্বে খেতেন না। সালাত থেকে ফিরে এসে কুরবানির মাংস খেতেন।


৫. সম্ভব হলে পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া: ঈদগাহতেই সালাত আদায় করা সুন্নত। তবে বৃষ্টি বা অন্য কোনো কারণে মসজিদে পড়া বৈধ, যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পড়েছেন।

ঈদগাহে তাড়াতাড়ি যাওয়া উচিৎ। যাতে ইমাম সাহেবের নিকটবর্তী স্থানে বসা যায় ও ভাল কাজ অতি তাড়াতাড়ি করার সওয়াব অর্জন করা যায়, সাথে সাথে সালাতের অপেক্ষায় থাকার সওয়াব পাওয়া যাবে। ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া হল মোস্তাহাব। হাদিসে এসেছে—

عن علي- رضى الله عنه- قال: من السنة أن تخرج إلى العيد ماشيا. رواه الترمذي وحسنه وقال: والعمل على هذا عند أكثر أهل العلم: يستحبون أن يخرج الرجل إلى العيد ماشيا، وأن لا يركب إلا بعذر. [حسنه الألباني في صحيح سنن الترمذي]

আলী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: সুন্নত হল ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া। ইমাম তিরমিযি হাদিসটি বর্ণনা করে বলেন হাদিসটি হাসান। তিনি আরও বলেন: অধিকাংশ আলেম এ অনুযায়ী আমল করেন। এবং তাদের মত হল পুরুষ ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাবে, এটা মোস্তাহাব। আর গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ ছাড়া যানবাহনে আরোহণ করবে না।


৬. মুসলিমদের সাথে সালাত আদায় করা এবং খুতবায় অংশ গ্রহণ করা: উলামায়ে কেরামদের প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে, ঈদের সালাত ওয়াজিব। এটাই ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ ٢ ﴾ [الكوثر: ٢]

“অতএব তোমরা রবের উদ্দেশ্যেই সালাত পড় এবং নহর কর”।[9]

উপযুক্ত কোনো কারণ ছাড়া ঈদের সালাতের ওয়াজিব রহিত হবে না। মুসলিমদের সাথে নারীরাও ঈদের সালাতে হাজির হবে। এমনকি ঋতুমতী নারী ও যুবতী মেয়েরাও। তবে ঋতুমতী নারীরা ঈদগাহ থেকে দূরে অবস্থান করবে।


৭. রাস্তা পরিবর্তন করা: এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া ও অপর রাস্তা দিয়ে ঈদগাহ থেকে বাড়ি ফেরা মোস্তাহাব। যেহেতু তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম করেছেন।

আর একটি সুন্নত হল যে পথে ঈদগাহে যাবে সে পথে না ফিরে অন্য পথে ফিরে আসবে। যেমন হাদিসে এসেছে—

عن جابر- رضى الله عنه- قال: كان النبي إذا كان يوم العيد خالف الطريق. ]رواه البخاري [

জাবের রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিনে পথ বিপরীত করতেন।[10] অর্থাৎ যে পথে ঈদগাহে যেতেন সে পথে ফিরে না এসে অন্য পথে আসতেন।


৮. ঈদের শুভেচ্ছা জানানো: ঈদের দিন একে অপরকে শুভেচ্ছা বিনিময় করা: যেমন বলা

تقبل الله منا ومنكم. أو تقبل الله منا ومنكم صالح الأعمال.

অর্থ: আল্লাহ আমাদের থেকে ও তোমাদের থেকে নেক আমলসমূহ কবুল করুন। বা এ ধরনের অন্য কিছু বলা।

একে অপরকে শুভেচ্ছা জানানো, অভিবাদন করা মানুষের সুন্দর চরিত্রের একটি দিক। এতে খারাপ কিছু নেই। বরং এর মাধ্যমে একে অপরের জন্য কল্যাণ কামনা ও দোয়া করা যায়। পরস্পরের মাঝে বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়।

ঈদুল আযহার দোয়া

কুরবানি দোয়া আরবী উচ্চারণঃ- اَللَّهُمَّ إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَى مِلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ - إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ - لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ - بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر - اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ

কুরবানি দোয়া বাংলা উচ্চারণ- ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলা মিল্লাতি ইবরাহিমা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন