কান পাকা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

কান পাকা রোগের লক্ষণ আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকেন তাহলে কান পাকলে করণীয় কি ও কান পাকা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে পারবেন। এছাড়াও জানতে পারবেন কান পাকলে করণীয় কি ও কান পাকা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নিন শুরু থেকে অনেক বিষয় সম্পর্কে। কান পাকা রোগের এন্টিবায়োটিক

কান পাকা রোগের এন্টিবায়োটিক

কান এমন এক জিনিস যার মাধ্যমে আমরা বাইরের শব্দ শুনতে পাই। কান হচ্ছে মানবদেহের মাথার দুইপাশের একটি অঙ্গ যার মাধ্যমে কথা শুনে মস্তিষ্ক কাজ করে থাকে। কান চোখ মাথার সাথে সংযুক্ত থাকে। কান পাকা রোগ সাধারণ বিষয় নয়। কান পাকা রোগ প্রায় সবার হয়ে থাকে। কান পাকার কারণ মাথার যন্ত্রণা বেড়ে যায়।

কান পাকা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

কান আমাদের শ্রবণ অঙ্গ। এটা আমাদের শরীরে ভারসাম্য রক্ষা করে। কানের তিনটি অংশ : বহিঃকর্ণ, মধ্যকর্ণ ও অন্তঃকর্ণ। কান দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পুঁজ বা পানি পড়াকে আমরা সাধারণত কান পাকা রোগ বলে থাকি।

এটি সাধারণত মধ্যকর্ণের রোগ। এতে কানের পর্দায় ছিদ্র হয়। তবে অনেক সময় বহিঃকর্ণের কিছু প্রদাহের কারণেও কানে পুঁজ বা পানি জমা হতে পারে। এটি খুবই অপ্রীতিকর এবং ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে।

কিন্তু আমাদের দেশে প্রধানত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। আবার শহরের মানুষের তুলনায় নানা কারণে গ্রামের মানুষের মধ্যে রোগটি বেশি হতে দেখা যায়।

আরো পড়ুন: হাত পা চাবানোর ঘরোয়া চিকিৎসা

মানুষের কানের তিনটি অংশ: বহিঃকর্ণ, মধ্যকর্ণ ও অন্তঃকর্ণ। কান দিয়ে যদি পুঁজ বা পানি পড়ে, তবে বুঝতে হবে এটি মধ্যকর্ণের রোগ। সাধারণ মানুষ একেই কান পাকা বলে থাকে। যেকোনো বয়সেই এটি দেখা দিতে পারে। তবে আমাদের দেশে শিশুদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়। আবার শহরের মানুষের তুলনায় নানা কারণে গ্রামের মানুষের মধ্যে রোগটি বেশি হতে দেখা যায়। 

আমাদের সবার খুলির মধ্যে ইউস্টেশিয়ান টিউব নামের একটা নল আছে, যার এক মাথা থাকে মধ্যকর্ণে, আরেক মাথা নাকের পেছনে অবস্থিত ন্যাজোফেরিংস নামক স্থানে। শিশুদের ক্ষেত্রে এই নলটি খাটো, প্রশস্ত এবং একদম সোজাসুজি থাকে। 

তাই মায়েরা বুকের দুধ অথবা বোতলের দুধ কিংবা কোনো তরল পদার্থ খাওয়ানোর সময়, শিশুদের মাথার দিকটা একটু উঁচু করে না ধরলে এই তরল কিছুটা হলেও মধ্যকর্ণে চলে যেতে পারে। এ থেকে পরে মধ্যকর্ণ সংক্রমিত হয়ে কান পাকতে পারে।

কান পাকা রোগের ঔষধের নাম

কান পাকা রোগের ঔষধের নাম জানা প্রয়োজন কান পাকা রোগ থেকে মুক্তি পেতে। কান আমাদের দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের অন্যতম। আমাদের পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের মধ্য শ্রবণ অন্যতম। আর কান হচ্ছে আমাদের একমাত্র শ্রবণ অঙ্গ। সুতরাং, 

কানের প্রয়োজন আমাদের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের কাজ দেখলেই স্পষ্ট হয়। কান শুধু আমাদের শ্রবণ না, কান আমাদের শরীরের ভারসাম্যও রক্ষা করে।

কানের মতো অপরিহার্য অঙ্গের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজন কানের যত্ন নেওয়ার বিকল্প নেই। কানের যত্ন না নিলে যেকোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে কান আমাদের শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে না। ফলে, আমাদের জীবন যাপনে জটিলতা সৃষ্টি হয়। আজকের আর্টিকেলে কান পাকা রোগের ঔষধের নাম সহ বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

আরো পড়ুন: কোমর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা বিস্তারিত জানুন

কানের তিনটি অংশ (বহিঃকর্ণ, মধ্য কর্ণ, অন্তঃকর্ণ) এর মধ্য মধ্য কর্ণের প্রদাহ কে মূলত কান পাকা রোগ বলে। সাধারণত এই ধরনের কান পাকা রোগ দুই প্রকারের হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে নিরাপদ কান পাকা, যার মাধ্যমে কান থেকে গন্ধহীন পূঁজের মতো তরল নির্গত হয়। সাধারণত এক্ষেত্রে তেমন কোনো জটিলতা থাকে না।

অপরদিকে, অনিরাপদ কান পাকা হচ্ছে জটিল কান পাকা রোগ। এই ধরণের রোগে কান থেকে নির্গত হয় দুর্গন্ধ যুক্ত, ঘন পুঁজ। কোলোস্টেটেমা যুক্ত থাকে এই প্রকারের প্রদাহে, যেখানে কোলোস্টেটেমা কানের হাঁড় ও নরম অংশের ক্ষতিসাধন করে। ফলে কানের অভ্যন্তরে হাঁড় ও কোষকলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কানের পুঁজ অনেক সময় মস্তিস্কে পৌঁছে যেতে পারে। মস্তিস্কের ঝিল্লি, সাইনাসে এটি মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন করে। ফলশ্রুতিতে মৃত্যু ও হতে পারে। কিন্তু কান পাকা রোগের ঔষধের নাম জানা থাকলে সমস্যার প্রথমাবস্থায় সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। আর কান পাকা রোগের যথাযথ চিকিৎসা শুরুতেই করলে, এই রোগ দীর্ঘস্থায়ী, জটিল রোগে পরিণত হতে পারবে না।

যারা কান পাকা রোগের ঔষধের নাম ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান তাদের জন্য এই আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে। অবশ্যই শেষ পর্যন্ত সবকিছু মনোযোগ দিয়ে পড়ার অনুরোধ রইল। কান আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। 

দীর্ঘদিন আমাদের কান দিয়ে পানি কিংবা পুঁজের মতো তরল পদার্থ বের হলে সেটাকে আমরা কান পাকা রোগ হিসেবে বিবেচনা করে থাকি। এটি হলে কানের পর্দা ছিড়ে যেতে পারে। এটি যে কোন সময় অপ্রীতিকর এবং ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। গ্রাম অঞ্চলের শিশুদের মধ্যে এই রোগ হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। তাই কানের ইনফেকশনের ঔষধ এর নাম জেনে সেবন করতে হবে।

কান পাকা রোগের এন্টিবায়োটিক

কান পাকা রোগ আমাদের দেশে একটি সচরাচর বিরাজমান স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেকেই এই রোগটিকে খুব সাধারণ মনে করে থাকেন এবং ঠিকমত চিকিৎসাও করান না। কিন্তু এই রোগের ঠিকমত চিকিৎসা না করালে নানারকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় রোগী মারাত্মক জটিলতা নিয়ে আমাদের কাছে এত দেরীতে আসে যে তখন সর্বপ্রকার চেষ্টা করেও রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব হয় না।

বহিঃকর্ণ, মধ্যকর্ণ ও অন্তঃকর্ণ। মধ্যকর্ণের প্রদাহকেই আমরা সাধারনত কানপাকা রোগ বলে থাকি। কান দিয়ে পুঁজ পড়া ও কানে কম শোনা এ দুটি এই রোগের প্রধান উপসর্গ। কানপাকা রোগ দুই ধরণের হয়ে থাকে। 

আরো পড়ুন: বিনা অপারেশনে ফিস্টুলা চিকিৎসা বিস্তারিত

একটি হল- সাধারণ বা নিরাপদ কানপাকা রোগ, যা সাধারণত কোনো মারাত্মক জটিলতা তৈরি করে না এবং এ ক্ষেত্রে সাধারণত দুর্গন্ধবিহীন, পাতলা পুঁজ কান থেকে বের হয়। অন্যটি হল, অনিরাপদ কান পাকা রোগ, যা জীবন হানিকর জটিলতা তৈরি করতে পারে। এক্ষেত্রে কানে দুর্গন্ধযুক্ত, ঘন পুঁজ কান থেকে বের হয় ও সেখানে সাধারণত কোলেস্টেটোমা উপস্থিত থাকে। 

কোলেস্টেটোমা এমন একটি জিনিস, যেটি কানের আশেপাশের হাড় এবং অন্যান্য নরম কোষকলাকে সহজেই ধ্বংস করে কানের প্রদাহ মস্তিষ্কের বাহিরে ও ভিতরে ছড়িয়ে দিতে পারে। ফলে অনিরাপদ কানপাকা রোগে মধ্যকর্ণের প্রদাহ ইহার অস্থি প্রাচীর ভেদ করে মধ্যকর্ণের সাথে নিবিড় 

সম্পর্কযুক্ত শরীরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ যেমন- মস্তিষ্কের ঝিল্লী, মস্তিষ্ক, মস্তিষ্কের রক্তবাহী সাইনাস, ফেসিয়াল নার্ভ ও অন্তঃকর্ণ ইত্যাদিতে প্রদাহ সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে; যার পরিণতি অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে।

কান পাকা রোগ শুধু রোগীর রোগ লক্ষণ, রোগীর কান পরীক্ষা ও প্রয়োজনে সামান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেমন কানের এক্সরে ইত্যাদি করেই নিণর্য় করা যায়। কান পরীক্ষা করলে সকল ক্ষেত্রেই কানের পর্দায় ছিদ্রের উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়। 

অনিরাপদ কানপাকা রোগে কানের পর্দায় ছিদ্র ছাড়াও সাদা বলের মত কোলেস্টেটোমা দেখা যায়। অডিওমেট্রি পরীক্ষা করে রোগী কানের বধিরতার পরিমাপ করা হয়। কিন্তুু রোগের মস্তিস্কের ভিতরের জটিলতা নির্ণয় করতে হলে উপরোক্ত রোগ লক্ষণের সাথে কিছু 

পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেমন শিরদাড়ার পানি পরীক্ষা ও মস্তিষ্কের সিটি স্ক্যান করতে হবে। এছাড়াও কোন কোন ক্ষেত্রে রক্তের মধ্যে জীবাণুর উপস্থিতি নির্ণয়ের জন্য রক্ত কালচার পরীক্ষাও করা লাগতে পারে।

কান পাকা রোগের হোমিও ঔষধের নাম

কানে পানি যাওয়া, ঠান্ডা লাগা, কাঠি দিয়ে কান খোঁচানো, আঘাত লাগা, প্রদাহ, হাম জ্বর বসন্তাদির পর কানে পুঁজ হওয়া, বধিরতা। Belladona: কান অত্যান্ত গরম, লাল, চিরিকমারা, দপদপে ব্যথা। ৩x-৬ সেব্য।

Arnica Mont: কানে কটন বাড প্রবেশ করানো বা কোন আঘাত থকে উপসর্গের উৎপত্তি হলে নতুনদের জন্য ৩x-৩০, পুরাতন অবস্থায় ২০০- ১০এম। Tellurium: নতুন পুরাতন কান পাকা। লালচে পাতলা পানি, ভীষণ দূর্গন্ধ। নতুনদের জন্য ৬-৩০ শক্তি, পুরনো হলে ২০০ থেকে উচ্চশক্তি।

Chamomilla: রুক্ষ মেজাজী শিশু, খিটখিটে স্বভাব, গালাগালি, ঝগড়াঝাটি, কান্নাকাটি ক্যামোমিলার চরিত্র। এমন রোগীদের কান ব্যথায় ৬-২০০ ফলপ্রদ। Cal.Pic: কানের ভিতর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফোঁড়ার মত উদ্ভেদ, ব্যথা। ৩x-৬ শক্তি।

Psorinum: যেকোন কান পাকায়, দূর্গন্ধযুক্ত হলুদ বর্ণের পুঁজ, কানে চুলকানি, প্রস্রাব-পায়খানা বা ঘামে দূর্গন্ধ, অপরিস্কার নোংরা, শীতকাতর রোগীদের ঔষধ। ২০০-উচ্চক্রম। Merc.Sol: রাতে রোগ লক্ষণ বৃদ্ধি, হলুদ বা সবুজ পুঁজ, লালচে পানি। ২০০-১এম।

আরো পড়ুন: পাইলস এর চিকিৎসা কোথায় ভালো হয়

Plantego, Mulen Oil: ঔষধ দু’টি Q শক্তি বাহ্যিক ব্যবহার্য্য। সাধারণত, একটি কানের সংক্রমণ, যা তীব্র ওটিটিস মিডিয়া নামে পরিচিত, ব্যাকটেরিয়া* বা মধ্যকর্ণকে প্রভাবিত করে ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়। কানের পর্দার পিছনে অবস্থিত এই অঞ্চলটি একটি বায়ু-ভরা স্থান যেখানে কানের ছোট কম্পনশীল হাড় রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের মধ্যে কানের সংক্রমণ বেশি হয়।

ওটিটিস মিডিয়া হল একটি সাধারণ প্রদাহজনিত ব্যাধি যা মধ্যকর্ণের টাইমপ্যানিক মেমব্রেনে অস্বাভাবিক তরল সংগ্রহ (বা নির্গমন) বা রোগগত পরিবর্তনের কারণে ঘটে। এর ফলে ব্যাকটেরেমিয়া হতে পারে বা সমস্ত বয়সের শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে পারে যা হয় অস্থায়ী বা স্থায়ী হতে পারে

মিশরীয় জার্নাল অফ ইয়ার, নোজ, থ্রোট এবং অ্যালাইড সায়েন্সেস- এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষা বলছে যে ওটিটিস মিডিয়া প্রধানত সমস্ত বয়সের গোষ্ঠীকে প্রভাবিত করে এবং শ্রবণশক্তি হ্রাস এবং এর সাথে সম্পর্কিত সহ-অসুস্থতার সাথে আক্রান্ত ক্ষেত্রে একটি গুরুতর স্বাস্থ্য উদ্বেগ রয়েছে।

কারণ : মধ্য কানের সংক্রমণ কিছু নাক বা গলা সংক্রমণের জন্য গৌণ। ঠান্ডা, গলার সংক্রমণ সাধারণত মধ্যকর্ণকে সংক্রামক প্রক্রিয়ায় আটকে রাখে। গলা থেকে সংক্রমণ ইউস্টাচিয়ান টিউবের মাধ্যমে মধ্যকর্ণে যায়। ইউস্টাচিয়ান টিউব হল সেই চ্যানেল যা গলাকে মধ্য কানের সাথে সংযুক্ত করে।

* স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনিয়া এবং হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা হল দুটি সাধারণ ব্যাকটেরিয়া যা মধ্য কানের সংক্রমণ ঘটায়।

ডাঃ বিকাশ শর্মা বলেছেন "কানের সংক্রমণের জন্য হোমিওপ্যাথিক ওষুধগুলি প্রচলিত নিরাময়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল যে তারা নিরাময়ের জন্য একটি সামগ্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে কাজ করে এবং শুধুমাত্র উপসর্গই নয়, সংক্রমণের মূল কারণও চিকিত্সা করে।"

কান পাকা রোগের লক্ষণ

আমাদের পঞ্চইন্দ্রিয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কান। কানের বিভিন্ন সমস্যায় ছোট-বড় অনেকেই ভোগেন। কানে ব্যথা, চুলকানি, পানি ঢুকে যন্ত্রণা, শোঁ শোঁ শব্দ করা কিংবা সংক্রমণের মতো সমস্যা দেখা যায়। কান দিয়ে পুঁজ/পানি পড়া সাধারণত মধ্যকর্ণের রোগ। 

কান পাকা যেহেতু মধ্যকর্ণের সংক্রমণ, তাই এতে কানের পর্দা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে অনেক সময় বহিঃকর্ণের কিছু প্রদাহের কারণেও কানে পুঁজ/পানি হতে পারে। এই কান দিয়ে পুঁজ/পানি পড়া খুবই অপ্রীতিকর এবং যে কোনো বয়সে দেখা দিতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে প্রধানত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

আমাদের সবারই ইউস্টেশিয়ান টিউব নামক একটা টিউব আছে, যার এক মাথা থাকে মধ্যকর্ণে এবং আরেক মাথা থাকে নাকের পেছনে ন্যাজোফেরিংস নামক স্থানে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এ টিউবটা থাকে খাটো, প্রশস্ত এবং একদম সোজাসুজি। 

তাই মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ অথবা বোতলের দুধ/তরল মাথার দিকটা একটু উঁচু না করে ফ্লাট/কাত অবস্থায় খাওয়ালে তখন এই দুধ/তরল কিছুটা হলেও মধ্যকর্ণে চলে যায় এই টিউব দিয়ে। পরবর্তীতে যা থেকে মধ্যকর্ণে ইনফেকশন হয়ে কান পাকা রোগ সৃষ্টি হয়।

যেসব বাচ্চার ঘন ঘন ঠান্ডা লাগে, আপার রেসপিরেটরি ট্রাক্ট ইনফেকশন বেশি হয়, টনসিলে ইনফেকশন হয়, ঘন ঘন সর্দি থেকে সাইনোসাইটিস হয়, এডিনয়েড বেশি থাকে, তাদের ক্ষেত্রে ইউস্টেশিয়ান টিউবের নরমাল কর্মক্ষমতা কমে গিয়ে টিউবের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। 

এসব কারণে প্রথম দিকে হঠাৎ করে কানে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়, জ্বর থাকে, এরপর কানের পর্দা ফুটো হয়ে পানি বেরিয়ে আসে। ওই সময় ঠিকমতো এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেলে পর্দার ছিদ্রটি স্থায়ী হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে কানে ইনফেকশন হওয়ার কারণে কান দিয়ে পানি/পুঁজ আসে। বড়দের ক্ষেত্রেও দীর্ঘদিন ভুগলে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে

কানের ড্রপ এর নাম

ব্যাকটেরিয়া: কানের সংক্রমণের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো একটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, যেটি ঘটতে পারে যখন নাক বা গলা থেকে ব্যাকটেরিয়া ইউস্টাচিয়ান টিউবের মাধ্যমে কানে প্রবেশ করে। ভাইরাস: ভাইরাল সংক্রমণ যেমন সর্দি, ফ্লু, এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতার কারণেও কানের সংক্রমণ হতে পারে।

অ্যালার্জি: অ্যালার্জি অনুনাসিক প্যাসেজে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এবং কানের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। বর্ধিত এডিনয়েডস: এডিনয়েড হলো গলার পিছনে অবস্থিত গ্রন্থি, এবং যখন তারা বড় হয়ে যায়, তারা ইউস্টাচিয়ান টিউবকে ব্লক করতে পারে এবং মধ্যকর্ণে তরল জমা হতে পারে।

আরো পড়ুন: মাথা ব্যথার প্রাথমিক চিকিৎসা বিস্তারিত জানুন

বায়ুচাপের পরিবর্তন: বায়ুর চাপের দ্রুত পরিবর্তন, যেমন বিমান ভ্রমণ বা স্কুবা ডাইভিংয়ের সময় ঘটে, মধ্যকর্ণে চাপের ভারসাম্য ব্যাহত করতে পারে এবং কানের সংক্রমণ হতে পারে। জলের সংস্পর্শ: ব্যাকটেরিয়া ধারণ করে এমন জলে সাঁতার কাটা বা গোসল করলেও কানের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

ক্যান্ডিসটিন ইয়ার ড্রপ: কান পাকলে, কানে পুঁজ হলে ও কানে ভু ভু করলে ব্যবহার করতে হবে। Waxsol Ear Drop: কানের খৈল বা ময়লা দূর করার জন্য ব্যবহার করতে পারবেন। Clarizol Ear Drop: কান পাকলে, কানে পুঁজ হলে ব্যবহার করতে হবে।

সিপ্রোসিন ড্রপ: চোখ/কানের জন্য। জেন্টাব্যাক এইচসি ইয়ার ড্রপ: কানে ইনফেকশন হলে ব্যবহার করতে পারবেন। Audicare Ear Drops: কানের যেকোনো ইনফেকশন যেমন কানপাকা, পুঁজ পড়া, চুলকানি হলে ব্যবহার করতে পারবেন। Gento-HC Ear Drops: কানে ইনফেকশন ও চুলকানি হলে ব্যবহার করতে পারবেন।

কান দিয়ে পানি পড়ার ড্রপ

সাঁতার কাটা, গোসল করা অথবা চুল ধোয়ার সময় কানে পানি প্রবেশ করতে পারে। কান বা মাথার সংস্পর্শে পানি আসলে অনেক সময় অসাবধানতায় কানে পানি প্রবেশ করতে পারে।

হেল্থশটস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যাঙ্গালুরু’র ‘অ্যাস্টার হোয়াইটফিল্ড হসপিটাল’য়ের নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ডা. জ্যোতির্ময় এস.হিজড়ি বলেন, “কানের গহব্বর এমনভাবে তৈরি যেন তা নিজে থেকেই পরিষ্কার হতে আর বাইরের জীবাণু থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। তবে অনেক সময় কানে পানি প্রবেশ করতে পারে বিশেষত যদি এর প্রাকৃতিক পরিষ্কার ক্রিয়া ব্যাহত হয়।”

মাধ্যাকর্ষণ: মাথা একপাশে কাত করে যে কানে পানি ঢুকেছে তা নিচের দিকে রাখতে হবে এবং এক পায়ের লাফ দিতে হবে। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের কারণে পানি কানের সুরঙ্গ পথে বের হয়ে যাবে।  হাই তোলা বা চিবানো: হাই তোলার মতো করে মুখ দিখে জোড়ে বাতাস নিয়ে ছাড়া বা চুইংগাম চিবানোর মাধ্যমে কানের আশপাশের পেশিগুলো প্রভাবিত হয়।

“এই পদ্ধতিগুলো ‘ইউস্টেইশন টিউব’ অর্থাৎ কানের মধ্যবর্তী অংশ থেকে নাক ও গলার পেছনে যে নলের মাধ্যমে সংযোগ থাকে, তা খুলতে সহায়তা করে। ফলে নিষ্কাশনে সুবিধা হয়” বলেন এই চিকিৎসক।

তাপ ও ভাপ: যে কানে পানি ঢুকেছে সেখানে গরম পানির ভাপ অথবা হেয়ার ড্রায়ারের মাধ্যমে কম তাপমাত্রায় দূর থেকে হাওয়া দেওয়া যেতে পারে। এই প্রক্রিয়াতে কানের ভেতরের পানি বাষ্পিভূত হতে বা গড়িয়ে পড়তে সহায়তা করবে।

রাবিং অ্যালকোহল ও ভিনেগার: সমপরিমাণ রাবিং অ্যালকোহল ও সাদা ভিনেগার মিশিয়ে, সেটা ড্রপারের সাহায্যে কানের প্রবেশ করাতে হবে। এই দ্রবণ কানের পানির বাষ্পীভবনে সহায়তা করবে এবং ব্যাক্টেরিয়ার বৃদ্ধি নিরসনে ভূমিকা রাখে।

পানি বের করার ইয়ার ড্রপ ব্যবহার করা: এই ধরনের ড্রপ কান থেকে পানি বের করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি। এতে থাকা উপাদান কানে প্রবেশ করে আর্দ্রতা শুষে নেয় এবং কান পানি মুক্ত করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন