জমির দলিল হারিয়ে গেলে করণীয় কি

জমির দলিল হারিয়ে গেলে ব্যক্তি নিজের মালিকানা প্রমাণ করা থেকে শুরু করে খতিয়ান প্রস্তুত তখন নির্ধারণ থেকে শুরু করে জমি বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও দলিলের অভাবে সবকিছু থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন।


যেকোনো অস্বাভাবিক কারণে আমাদের অনেক মূল্যবান কাগজপত্র অনেক সময় হারিয়ে যেতে পারে যার মধ্যে জমির দলিল অন্যতম। জমির দলিল হারানোর সাথে সাথে একটা পরিবার তাদের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকার সহ হয়রানির শিকার হতে পারে।

জমির দলিল হারিয়ে গেলে করণীয় কি

ঘরে আগুন লাগা, ঘরে চুরি-ডাকাতি হওয়া, বন্যা-ঘূর্ণিঝড় সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মত বিভিন্ন অস্বাভাবিক কারণে আমাদের অনেক মূল্যবান কাগজপত্র হারিয়ে যেতে পারে, যার মধ্যে জমির দলিল সবচেয়ে অন্যতম। 

অন্য যেকোনো জরুরী কাগজপত্র হারালেও সেটার জন্য ব্যক্তি নিজে একা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও জমির দলিল হারানোর সাথে সাথেই একটা পরিবার তাদের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকার সহ হয়রানীর শিকার হতে শুরু করে। যেহেতু স্থাবর সম্পত্তিতে দখল হচ্ছে বাহ্যিক ব্যাপার আর দলিল হচ্ছে অফিশিয়াল প্রমাণ, তাই দলিল হারিয়ে গেলে এবং সেটা না পাওয়া গেলে এর ফলশ্রুতিতে 

যেকোনো সময় জমির মালিকানা হারানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়। ক্রিকেটে একটা প্রবাদ রয়েছে, ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস; আবার ফুটবলে বলা হয়, পেনাল্টি মিস তো ম্যাচ মিস; তদ্রূপ জমির দলিল মিস তো জমির মালিকানা মিস। 

আরো পড়ুন: জমির দলিল রেজিস্ট্রেশন খরচ জানুন ২০২৪

আপনার জমিতে দলিল আছে কিন্তু দখল নাই, আপনি উচ্ছেদ বা দখল পুনরুদ্ধারের মামলা করে দখল ফেরত পাবেন কিন্তু দখল আছে, দলিল নাই, সেই জমির দলিল আপনি আদৌ প্রস্তুত করতে পারবেন?

এতো লম্বা ভূমিকা দেওয়ার একটাই উদ্দেশ্য, জমির মালিকানা প্রমাণ করার জন্য জমির দলিল কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা অনস্বীকার্য। জমির দলিল হারিয়ে আপনি কতটা বেকায়দায় পড়তে পারেন, সেটা কেবল দলিল হারানো ব্যক্তিই বলতে পারেন। 

দলিল হারানো ব্যক্তি নিজের মালিকানা প্রমাণ করা থেকে শুরু করে, খতিয়ান প্রস্তুত, দখল নির্ধারণ থেকে শুরু করে জমি বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও দলিলের অভাবে সবকিছু থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন। তাই, যথাসম্ভব দলিলকে সম্ভাব্য নিরাপদ জায়গায় রাখা উচিত এবং এখনকার এই যুগে কখনো দলিলের মাত্র একটি কপি না রেখে যত বেশি সম্ভব ফটোকপি প্রস্তুত করে বিভিন্ন জায়গায় রাখা উচিত। 

আর এখন ডিজিটাল ফরম্যাটেও দলিল সংরক্ষণ করে রাখবেন, অর্থাৎ স্ক্যান করে ইমেইলে একটা কপি রেখে দিবেন যাতে ভবিষ্যতে হার্ড কপি হারিয়ে গেলেও সফট কপি থেকে আবার পুনরুদ্ধার করতে পারেন।

যাই হোক, যারা ইতিমধ্যে হারিয়ে ফেলেছেন, তাদের করণীয় কি তা নিয়ে আসা যাক। অনেকেই আছেন যারা দলিল হারিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে যায় আবার অনেকেই আছেন দালাল চক্রের খপ্পরে পড়েও দিনের পর দিন হয়রানীর শিকার হয়ে থাকেন। 

তাদের জন্য বলছি, দলিল হারিয়ে গেলে আমি কাউকে কিছু না বলে নিজে নিজে দলিল পাওয়ার একটা ব্যবস্থা করতে পারবেন। জাতীয় পরিচয়পত্রসহ আরও কিছু জরুরী কাগজপত্র আছে যেগুলো হারিয়ে গেলে সেগুলো উত্তোলনের জন্য আপনাকে থানায় জিডি করতে হয় কিন্তু দলিল হারিয়ে গেলে এর জন্য থানায় কোন জিডি করতে হবে না। 

আবার, আপনার দলিল তোলার জন্য আপনাকেও আবেদন বা দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না, সম্পূর্ণ অচেনা অজানা কেউও চাইলে আপনার দলিল তুলতে পারবেন। এখন কথা হচ্ছে, বারবার তোলার কথা বলা হচ্ছে যে, এই  দলিল তোলাটা কোথায় থেকে, কিভাবে?

পুরাতন দলিল বের করুন খুব সহজে নিজের মোবাইল দিয়ে

আপনার জমির পুরাতন দলিল বের করুন খুব সহজে নিজের মোবাইল দিয়ে। অর্থ্যাৎ মোবাইলে জমির পুরাতন দলিল বের করার নিয়ম জানুন। আপনার জমি আছে সেটার প্রমান হলো হলো দলিল। তাই আপনার যদি জমি থাকে তাহলে অবশ্যই উক্ত জমির দলিল থাকা জরুরি।

তাছাড়া জমির যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে দলিল ব্যবহার করে সমস্যা সমাধান করতে হবে। আপনার কাছে যদি জমিল দলিল না থাকে তাহলে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।

আবার যারা নতুন জমির ক্রয় করেন তাদের দলিল বের হতে ৩ থেকে ৪ মাস সময় লাগে। তাই অনেকে মোবাইলে পুরাতন দলিল বের করার নিয়ম জানতে চাচ্ছেন। আসলে বাংলাদেশ ভূমি মন্ত্রণালয় এখনো এমন কোনো অনলাইন সিস্টেম বের করেনি যার মাধ্যমে জমির নতুন এবং পুরাতন দলিল বের করা যাবে।

আরো পড়ুন: অনলাইনে জমির ই-পর্চা দেখার নতুন নিয়ম

অর্থ্যাৎ মোবাইল বা কম্পিউটারে অনলাইনের মাধ্যমে জমির দলিল বের করতে পারবেন না। তবে, দলিলের বিভিন্ন বিষয় তথ্য জানতে পারবেন। তাহলে চলুন নিচে থেকে জেনে নিবো অনলাইনের মাধ্যমে কিভাবে পুরাতন দলিল বের করতে হবে মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে। 

পুরাতন দলিল বের করার জন্য প্রথমে আপনার মোবাইল থেকে গুগল ক্রোম ব্রাউজার ওপেন করুন এবং ডেস্কটপ ভার্ষন করে নিবেন। গুগলে গিয়ে সার্চ করুন Wb registration লিখে। প্রথম পেজে Wb registration যে লিংক দেখতে পাচ্ছেন এই লিংকে ক্লিক করুন।

এবার আপনাকে পুরাতন দলিল বের করার ওয়েবসাইটে নিয়ে যাওয়া হবে। ওয়েবসাইট থেকে একটু নিচের দিকে E-SERVICES নামে একটি অপশন দেখতে পাবেন। এই অপশন থেকে Searching of Deep অপশনে ক্লিক করুন। 

এবার Search of Registration Made অপশনে অনেক গুলো অপশন দেখতে পাবেন। এখান থেকে প্রথমে থাকা By Seller/Buyer/Party Name অপশনে ক্লিক করুন। এখানে আপনার ফাস্ট নাম, লাস্ট নাম, সাল, জেলা এবং সিকিউরিটি কোড দিয়ে ডিসপ্লে অপশনে ক্লিক করলে জমির দলিল এর বিভিন্ন তথ্য দেখতে পাবেন। 

ডিসিআর হারিয়ে গেলে করণীয়

রেজিস্ট্রেশনের জন্য দলিল গৃহিত হলে রেজিস্ট্রি অফিস থেকে যে রশিদ দেয়া হয়, তাকে ৫২ ধারার রশিদ বলে। রেজিস্ট্রি শেষে রেজিস্ট্রি অফিস থেকে মূল দলিল ফেরত নিতে এই রশিদ অফিসে জমা দিতে হয়। 

যদি কেউ এই রশিদ হারিয়ে ফেলে তাহলে তাকে অতিরিক্ত কিছু কাজ করতে হবে, যা নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ- রেজিস্ট্রেশন ম্যানুয়েল ২০১৪, এর ৬ষ্ট খণ্ডের ১১১ (চ) ও ১১১ (ছ) অনুচ্ছেদে রশিদ হারিয়ে গেলে মূল দলিল ফেরৎ প্রদানের কার্যপদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে।

১১১ (চ) (১) রসিদ হারানোর অভিযোগ সহকারে দলিল ফেরত প্রদানের অনুরোধ সংবলিত প্রতিটি আবেদন লিখিত এবং মূল রসিদ যাহার নিকট প্রদান করা হইয়াছিল তাহার দ্বারা দাখিলকৃত হইবে।

এইরূপ আবেদন প্রাপ্তির পর নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা দাখিলকারীকে সনাক্তক্রমে রসিদ হারানোর বিষয়টি প্রমাণীত করাইয়া লইবেন। যেক্ষেত্রে দাখিলকারী গ্রহীতা নহেন, সেইক্ষেত্রে প্রাপ্তিস্বীকার পত্র সহ একটি নোটিস গ্রহীতার নিকট প্রেরণ করা হইবে 

(যাহার খরচ আবেদনকারী বহন করিবেন) এবং রসিদ হারানোর বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য তাহাকে যুক্তিসংগত সময় প্রদান করা হইবে। দলিলটি নিবন্ধিত না হইয়া থাকিলে, সাদা কাগজে রসিদের একটি প্রতিলিপি দেওয়া যাইবে;

পক্ষান্তরে যদি দলিলটি নিবন্ধিত হইয়া থাকে, তাহা হইলে দলিলটি ফেরত দেওয়া যাইবে। হারানো রসিদটির পরিবর্তে নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা এক খন্ড সাদা কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায় নিম্নের প্রত্যায়ন লিপিবদ্ধ করিয়া মুড়িপত্রে লাগাইয়া রাখিবার ব্যাবস্থা করিবেনঃ-

“প্রত্যয়ন করা যাইতেছে যে, মূল রসিদ হারানোর বিষয়টি আমার নিকট প্রমাণিত হইয়াছে বিধায় দাখিলকারীকে যথাযথরূপে সনাক্তক্রমে অপর পৃষ্ঠায় প্রাপকের সাক্ষর অনুযায়ী দলিলটি ফেরত দেওয়া হইল।

তারিখ………… নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা।“
(২) যেক্ষেত্রে আবেদনকারী দলিল দাখিলকারী নহেন, সেক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করিতে হইবে;
(অ) গ্রহীতা কর্তৃক রসিদ হারানোর অভিযোগ সহকারে দলিল ফেরত প্রদানের অনুরোধ সংবলিত লিখিত আবেদন দাখিল করিতে হইবে।

(আ) আবেদনের সহিত স্থানীয় থানায় রসিদ হারানোর বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি ভুক্তির ফটোকপি, আবেদনকারীর সাম্প্রতিক তোলা ১(এক) কপি পাসপোর্ট আকারের ফটো, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যুকৃত জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট বা জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি সংলগ্নি আকারে প্রদান করিতে হইবেঃ

তবে শর্ত থাকে যে, গ্রহীতা সরকার বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, তফসিলভুক্ত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিস্থান হইলে সেইক্ষেত্রে উল্লিখিত সংলগ্নির প্রয়োজন হইবেনা।

(ই) নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা উক্তরূপ আবেদন প্রাপ্ত হইয়া গ্রহীতার পরিচয় সম্পর্কে স্বয়ং সন্তুষ্ট হইবেন এবং ক্ষেত্রমত, দলিলের সহিত সংযুক্ত ফটো এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর বা পাসপোর্ট বা জন্ম নিবন্ধন সনদের সহিত যাচাই করিবেন এবং দলিলে সংগৃহীত স্বাক্ষরের সহিত আবেদনে প্রদত্ত স্বাক্ষর মিলাইবেন।

(ঈ) রসিদ হারানোর বিষয়ে নিবন্ধনকারী কর্মকর্তার নিকট হাজির হইয়া সাক্ষ্য প্রদানের নিমিত্ত যুক্তিসঙ্গত সময় প্রদান করিয়া আবেদনকারীর ব্যয়ে দলিলের দাখিলকারী এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অন্যান্য গ্রহীতাগণের বরাবর প্রাপ্তিস্বীকারপত্রসহ রেজিস্টার্ড ডাকযোগে একটি নোটিস প্রেরিত হইবে।

(উ) দলিলের দাখিলকারী বা অন্যান্য গ্রহীতা হাজির হইলে বা নির্ধারিত সময়-সীমা উত্তীর্ণ হইলে, নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা দফা (১) এ বর্ণিত পদ্ধতি, যতদুর প্রযোজ্য, অনুসরন করিবেন এবং দলিলটির নিবন্ধন কার্যক্রম ইতোমধ্যে সম্পন্ন হইয়া থাকিলে রসিদ হারানো সংক্রান্ত নিম্নরূপ প্রত্যায়ন প্রদান করিবেনঃ

“প্রত্যায়ন করা যাইতেছে যে, মূল রসিদ হারানোর বিষয়টি আমার নিকট প্রমাণীত হইয়াছে বিধায় দলিলের গ্রহীতাকে যথাযথরূপে সনাক্তক্রমে অপর পৃষ্ঠায় প্রাপকের সাক্ষর অনুযায়ী দলিলটি ফেরত প্রদান করা হইল।

তারিখ…………. নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা।”
(৩) ফিসের তালিকার দফা ‘চ (১) (অ) বা (আ)’ এর অধীন তল্লাশি ফিস আদায় করিতে হইবে এবং সাদা কাগজে উপর্যুক্ত (১) অনুচ্ছেদে উল্লিখিত প্রত্যায়ন লিপিবদ্ধ করিতে হইবে। যেক্ষেত্রে তল্লাশী বা পরিদর্শন ফিস আদায়যোগ্য সেইক্ষেত্রে, নির্ধারিত ফরমে, আবেদনপত্র প্রযোজ্য।

১১১ (ছ) রসিদ হারানোর ক্ষেত্রে আবেদনকারীর টিপছাপ প্রদান করিতে হইবেঃ রসিদ হারানোর অভিযোগে দলিল ফেরত প্রদানের আবেদনের ক্ষেত্রে এই উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত ভিন্ন টিপছাপ রেজিস্টারে আবেদনকারীর টিপছাপ গ্রহন করিতে হইবে। 

রেজিস্টারের ২ নং কলামের শিরোনামের স্থলে “আবেদনকারীর নাম, স্বাক্ষর ও দলিলে বর্ণিত তাহার সামাজিক ও পেশাগত অবস্থান” হাতে লিখিয়া পরিবর্তন করিতে হইবে।

দলিলটি ফেরত দেওয়ার পূর্বে, নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা দলিলে বিদ্যমান পূর্বের টিপছাপের সহিত, যদি থাকে, বর্তমানে গৃহীত টিপছাপের তুলনা করিয়া স্বয়ং সন্তুষ্ট হইবেন যে, এইরূপ ক্ষেত্রে সন্দেহের কোনো অবকাশ নাই।

পুরাতন জমির দলিল ডাউনলোড করুন শুধুমাত্র নাম দিয়ে

আপনার জমির পুরাতন দলিল বের করুন খুব সহজে নিজের মোবাইল দিয়ে। অর্থ্যাৎ মোবাইলে জমির পুরাতন দলিল বের করার নিয়ম জানুন। আপনার জমি আছে সেটার প্রমান হলো হলো দলিল। তাই আপনার যদি জমি থাকে তাহলে অবশ্যই উক্ত জমির দলিল থাকা জরুরি।

তাছাড়া জমির যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে দলিল ব্যবহার করে সমস্যা সমাধান করতে হবে। আপনার কাছে যদি জমিল দলিল না থাকে তাহলে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।

আবার যারা নতুন জমির ক্রয় করেন তাদের দলিল বের হতে ৩ থেকে ৪ মাস সময় লাগে। তাই অনেকে মোবাইলে পুরাতন দলিল বের করার নিয়ম জানতে চাচ্ছেন। আসলে বাংলাদেশ ভূমি মন্ত্রণালয় এখনো এমন কোনো অনলাইন সিস্টেম বের করেনি যার মাধ্যমে জমির নতুন এবং পুরাতন দলিল বের করা যাবে।

অর্থ্যাৎ মোবাইল বা কম্পিউটারে অনলাইনের মাধ্যমে জমির দলিল বের করতে পারবেন না। তবে, দলিলের বিভিন্ন বিষয় তথ্য জানতে পারবেন। তাহলে চলুন নিচে থেকে জেনে নিবো অনলাইনের মাধ্যমে কিভাবে পুরাতন দলিল বের করতে হবে মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে। 

পুরাতন দলিল বের করার জন্য প্রথমে আপনার মোবাইল থেকে গুগল ক্রোম ব্রাউজার ওপেন করুন এবং ডেস্কটপ ভার্ষন করে নিবেন। গুগলে গিয়ে সার্চ করুন Wb registration লিখে। প্রথম পেজে Wb registration যে লিংক দেখতে পাচ্ছেন এই লিংকে ক্লিক করুন।

এবার আপনাকে পুরাতন দলিল বের করার ওয়েবসাইটে নিয়ে যাওয়া হবে। ওয়েবসাইট থেকে একটু নিচের দিকে E-SERVICES নামে একটি অপশন দেখতে পাবেন। এই অপশন থেকে Searching of Deep অপশনে ক্লিক করুন।  এবার Search of Registration Made অপশনে অনেক গুলো অপশন দেখতে পাবেন। এখান থেকে প্রথমে থাকা By Seller/Buyer/Party Name অপশনে ক্লিক করুন। 

এখানে আপনার ফাস্ট নাম, লাস্ট নাম, সাল, জেলা এবং সিকিউরিটি কোড দিয়ে ডিসপ্লে অপশনে ক্লিক করলে জমির দলিল এর বিভিন্ন তথ্য দেখতে পাবেন।  Fast Name – আপনার নামের প্রথম অংশ লিখুন। Last Name – নামের শেষ অংশ লিখুন। 

Year – কত সালে জমি রেজিষ্ট্রেশন করেছেন সেটা লিখুন।  District Where Registration – জেলা সিলেক্ট করুন।  Security Code – নিচের সংখ্যা কোডটি লিখুন।  শেষে Display অপশনে ক্লিক করুন। এবার আপনার জমির বিভিন্ন তথ্য দেখতে পাবেন। এখানে আপনার নামের সাথে মিল এবং একই বছর, একই জেলা থেকে যারা জমি কিনতে তাদের তথ্য গুলো দেখানো হবে।

তাই আপনি অবশ্যই নিজের নাম, পিতার নাম এবং ঠিকানা মিলিয়ে নিবেন। আরো বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে View অপশনে ক্লিক করুন।

এখানে আপনি আরো বিস্তারিত তথ্য দেখতে পাবেন। যেমন – আপনার সম্পূর্ণ ঠিকানা, জমি কোন অফিস থেকে রেজিষ্ট্রেশন করা হয়েছে, দাগ নং, খতিয়ান নং, জমির পরিমান, দলিল নং, কত তারিখে জমি রেজিষ্ট্রেশন করছেন সহ আরো বিস্তারিত তথ্য দেখতে পাবেন।

এভাবে আপনি অনলাইনে নতুন দলিল এবং পুরাতন দলিল তল্লাশি করতে পারবেন বা অনলাইনে দলিল অনুসন্ধান করতে পারবেন।

নাম দিয়ে জমির দলিল

জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে জমির প্রকৃত মালিকের নাম জানা থাকলে কোন রকম ঝামেলায় পড়ার সুযোগ নেই। আপনি যখন কারো জমি ক্রয় করবেন অবশ্যই জমির মালিকানা যাচাই করে কেনা উচিত। 

তাছাড়া আপনি বিভিন্ন ঝামেলায় পড়তে পারেন যেমন জমির ভুয়া দলিল দিয়ে আপনাকে জমি বিক্রি করতে পারে, এক্ষেত্রে আপনি যদি সচেতন হন তাহলে অবশ্যই নাম দিয়ে জমির দলিল বা মালিকানা অনলাইনে যাচাই করে নিতে পারবেন।

পূর্বে আমরা দেখিয়েছি কিভাবে দাগ নম্বর, এবং খতিয়ান নাম্বার দিয়ে জমির মালিকানা বের করতে হয়। তবে অনেকে আমাদের কাছে প্রশ্ন করেন নাম দিয়ে জমির দলিল বের করা যায় কিনা। এক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই জানতে হবে দলিল কাকে বলে?

সাধারণত যে কোন লিখিত বিবরণ যা আইনগত সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণযোগ্য তাকে দলিল বলে। তবে ভূমি নিবন্ধন আইন মোতাবেক জমি ক্রেতা এবং বিক্রেতা সম্পত্তি হস্তান্তর করার জন্য যে চুক্তিপত্র সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করেন তা ই হলো দলিল। তবে আপনার জন্য জানার বিষয় হল অনলাইন থেকে আপনি শুধু জমির মালিকানা যাচাই করতে পারবেন, এবং দেখতে পারবেন জমির দাগ নাম্বার এবং ক্ষমতা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য।

তবে অনলাইনে মাধ্যমে আপনি দলিলের কোন কপি বের করতে পারবেন না। কিন্তু নির্দিষ্ট পরিমানে ফি প্রদানের মাধ্যমে আপনি খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি বের করতে পারবেন।

নাম দিয়ে জমির মালিকানা তথ্য যাচাই করার জন্য সরকারি ই পর্চা ওয়েবসাইট ভিজিট করতে হবে এবং সেখানে গিয়ে আপনার পর্চা সিলেকশন করে অধিকতর অনুসন্ধানে যেতে হবে। এরপরে নির্দিষ্ট জমির মালিকের নাম দিয়ে সার্চ করলে জমি সংক্রান্ত তথ্য খুঁজে পাওয়া যাবে।

দলিলের রশিদ হারিয়ে গেলে

আপনি জমি কিনেছেন, নিয়ম মেনে জমি রেজিস্ট্রি করেছেন, যে দলিলে দাতা, গ্রহীতা, সাক্ষী, সনাক্তকারী, দলিল লেখক, সাব-রেজিস্টার স্বাক্ষর করেছেন সেই মূল দলিলটি প্রাপ্তি আপনার অধিকার। 

কিন্তু আপনি কিভাবে দলিলটি হাতে পাবেন, মূল দলিলটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে ফেরত গ্রহনের পদ্ধতি কি এবং দীর্ঘ বিলম্ব হলে কত টাকা জরিমানা দিয়ে মূল দলিলটি তোলা যায় সেসকল বিষয়ে আইনী আলোচনা নিয়ে আজকের নিবন্ধ।

মনে রাখবেন জমি রেজিস্ট্রেশনের জন্য দলিল গৃহীত হলে দলিলের দাখিলকারীকে একটি রশিদ দেয়া হয়। রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর ৫২ ধারার অধীন এ রশিদ দেয়া হয় বলে সাধারণের ভাষায় একে “৫২ ধারার রশিদ” বলা হয়। 

এই রশিদে মুল দলিল ফেরৎ গ্রহনের একটি সম্ভাব্য তারিখ দেয়া থাকে। দলিলে প্রয়োজনীয় পৃষ্টাঙ্কন, বালাম বহিতে দলিলের নকলকরন ও সূচি বহিতে সূচীকরন শেষ হলে ফেরৎ প্রদানের জন্য প্রস্তুতকৃত দলিল সমুহের একটি তালিকা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নোটিশ বোর্ডে দেয়া হয়। 

এরপর ৫২ ধারার রশিদ জমা দিয়ে দলিল দাখিলকারী মূল দলিল উত্তোলন করতে পারেন অথবা দলিল গ্রহনের জন্য রশিদে অন্য কোন ব্যক্তিকে মনোনিত করে মূল দলিল গ্রহন করতে পারেন। এসময় কোনোরুপ টাকা পয়সা দিতে হয় না। 

তবে আপনি মূল দলিল রেজিস্ট্রির সময় ‘এন- ফি’এবং নকলনবিশগনের পারিশ্রমিক ‘এনএন- ফি’ কম প্রদান করে থাকলে মূল দলিল গ্রহণের সময় উক্ত ফি পরিশোধ করতে হবে।

তবে মনে রাখবেন দলিল ফেরত গ্রহনের তালিকা টাঙানোর তারিখ হতে এক মাসের মধ্যে মূল দলিল ফেরত না নিলে পরবর্তী প্রতি মাস বা তার অংশ বিশেষের জন্য ৫ টাকা হারে জরিমানা আদায়ের বিধান রয়েছে। তবে বিলম্ব যত মাসই হোক না কেন, জরিমানা ১০০ টাকা এর বেশী আদায়ের বিধান নাই।

১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন আইন এর ৮৫ ধারার বিধান মতে রেজিস্ট্রেশন শেষ হওয়ার পর কোন দলিল দাবীবিহীন অবস্থায় ২ (দুই) বছরের বেশি রেজিস্ট্রি অফিসে পরে থাকলে সেগুলো ধ্বংস করে ফেলা যায়। ব্যতিক্রম শুধু উইল দলিল ব্যতিত। 

সুতরাং সময়মত মূল দলিল সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। আর মূল দলিল উত্তোলনের ক্ষেত্রে ৫২ ধারার রশিদ কোনভাবে হারিয়ে গেলে কিংবা বিনষ্ট হলে দলিলগ্রহীতা রসিদ হারানোর বিষয় অবগতি করে দলিল ফেরত প্রদানের অনুরোধ সংবলিত আবেদন জানাবেন। আবেদন প্রাপ্তির পর নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা দাখিলকারীকে সনাক্তক্রমে রসিদ হারানোর বিষয়টি সত্যতা যাচাই করবেন।

এরপর হারানো রসিদটির পরিবর্তে নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা এক খন্ড সাদা কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায় “প্রত্যয়ন করা যাইতেছে যে, মূল রসিদ হারানোর বিষয়টি আমার নিকট প্রমাণিত হইয়াছে বিধায় দাখিলকারীকে যথাযথরূপে সনাক্তক্রমে অপর পৃষ্ঠায় প্রাপকের স্বাক্ষর অনুযায়ী দলিলটি ফেরত দেওয়া হইল” 

প্রত্যায়ন লিপিবদ্ধ করে মুড়িপত্রে লাগিয়ে রাখার ব্যবস্থা করবেন। আর দলিল দাখিলকারী কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তির কাছ থেকে রশিদ হারিয়ে যায়-সেক্ষেত্রে আবেদনের সহিত স্থানীয় থানায় রসিদ হারানোর 

বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি ভুক্তির ফটোকপি, আবেদনকারীর সাম্প্রতিক তোলা ১(এক) কপি পাসপোর্ট আকারের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট বা জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি সংযুক্ত করতে হবে।

তবে শর্ত থাকে যে, গ্রহীতা সরকার বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, তফসিলভুক্ত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলে সেক্ষেত্রে উল্লিখিত কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন