জমির দলিলে নাম পরিবর্তন

জমিজমা সংক্রান্ত আমাদের দেশে যতো সমস্যা তৈরি হয়, তার বেশির ভাগ সমস্যারই সৃষ্টি হচ্ছে জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সময়। ‘Manufacture defect বা তৈরির সময়ই ত্রুটি’ বলে একটা কথা আছে। জমিজমার বেলায়ও ত্রুটিটা হয়ই হস্তান্তরের সময় এবং রেকর্ডের সময়।

ভুল সংশোধন দলিলের খরচ

অন্যদিকে প্রতিটি জমির অবস্থান বা দখলের ভিত্তিতে রেকর্ড করে সরকার যে নথি প্রস্তুত করে সেটা হচ্ছে, খতিয়ান। খতিয়ানে প্রতিটি গ্রামকে মৌজা ধরে সিরিয়ালে বিভিন্ন পরিমাণে জায়গা নিয়ে দাগ নাম্বার দিয়ে রেকর্ড করা হয়।

জমির দলিলে নাম পরিবর্তন

জমির ‌দলিলে নাম পরিবর্তন –জমি হলো মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি সম্পদ। আর এই জমি জমা অনেক লোকের মালিকানা থেমে থাকে। যার কারণে সম্পত্তির মালিকের  অফিশিয়াল নাম পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে যে কোন সময়। জমির নিবন্ধন নথিতে নামের আপডেট করার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

জমির দলিল রেজিস্ট্রিতে নাম পরিবর্তন করা বা আপডেট করা সম্পত্তির মালিক কে জমি সংক্রান্ত বিরোধ বা আইনি ঝামেলা থেকে মুক্ত রাখতে সহায়তা করে। আজকে জমির দলিল রেজিস্ট্রেশনে নাম পরিবর্তন নিয়ে আপনাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করব। আশা করি সাথেই থাকবেন এবং পোস্টটি পড়ে উপকৃত হবেন।

১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন আইন অনুযায়ী কোন জমি বা ভূখণ্ড স্থানান্তর করতে হলে বাম মালিকানা পরিবর্তন করতে হলে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে নির্ধারিত ফরমে ক্রেতা বিক্রেতার চাহিদা মাফিক তথ্যাবলি ও দলিলাদি উল্লেখ করে যে নিবন্ধন করা হয় এবং যাতে জমির পরিচিতি উল্লেখ থাকে যা দলিলে লিখা হয় 

এই ধরনের দলিল সাব রেজিস্ট্রেশন এর মাধ্যমে নিবন্ধিত করাকে রেজিস্ট্রি বলে। যে ক্ষেত্রে দলিলদাতা অথবা গ্রহীতা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে পারেন না সে ক্ষেত্রে যে কোন পক্ষের চাহিদা মোতাবেক সাব রেজিস্টার কমিশনের মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রি করতে পারেন।

আরো পড়ুন: জমির দলিল হারিয়ে গেলে করণীয় কি

অর্থাৎ ‌সরকারি তথ্য প্রমাণের মধ্য দিয়ে জমির মালিকানা হকের বিবরণ এবং মালিকানা হক হল জমি রেজিস্ট্রেশন।জমি রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে জমি বিক্রেতার নাম থেকে জমি ক্রেতার নামে স্থানান্তর করা হয় আর সব জায়গাতেই একই ভাবে সাব রেজিস্টার অফিসের রেজিস্টারের সামনে উভয় পক্ষের সহমতে জমি জায়গা রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়।

জমি কেনার পর জমি রেজিস্ট্রেশন করার জন্য সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে টোকেন সংগ্রহ করতে হয় এই টোকেন দুইভাবে সংগ্রহ করা যায়। সাব রেজিস্টার অফিসে  গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে।

নিজের জেলার কিংবা ব্লকের সাব রেজিস্টার অফিসের অনলাইন পোর্টালের নাম ঠিকানা দিয়ে। হলফনামা হবে লিখিত। এতে হরফকারীর কোন নাম ঠিকানা সহ বাবা এবং মায়ের নাম জাতীয়তা বয়স পেশা প্রভৃতি উল্লেখ করতে হবে। 

এর সঙ্গে জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার উল্লেখ করতে হবে।হলফকারী ব্যক্তি কি বিষয় হলো করেছে তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দিতে হবে নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আগের নাম কি ছিল এবং বর্তমান নামে কি সংশোধন হয়েছে তা স্পষ্ট ভাবে বলতে হবে।

এর সঙ্গে কোন সনদপত্রের পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্র হলফনামা সম্পাদনের পর থেকে কি নাম ব্যবহার করা হবে তা সুনির্দিষ্ট ভাবে বলে দিতে হবে।নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অবশ্যই হরফ নামা করার পর দৈনিক পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। 

তবে হলফ নামা দিয়ে বয়স পরিবর্তন করা যাবে না।অনেকের স্ত্রী তার স্বামীর টাইটেল বা নামের অংশ নিজের নামে সঙ্গে জুড়ে দিতে চান। এক্ষেত্রেও হলফ নামা বাধ্যতামূলক।

ভুল সংশোধন দলিলের খরচ

রেজিস্ট্রিকৃত দলিলে কোন ভুল বা বিচ্যুতি ধরা পড়লে তা পুনরায় একটি সংশোধনী দলিল করে সংশোধন করা যায়। যে দলিলের মাধ্যমে পূর্ববর্তী দলিলের করনিক ভুল সংশোধন করা হয়, তাকে ভ্রম সংশোধন দলিল বলে। 

পূর্ববর্তী দলিলের করণিক ভুল (clarical mistake) বা (bonafide mistake) সংশোধন করা যায় এ দলিলের মাধ্যমে, তবে এতে অবশ্যই দলিলের পক্ষ সমূহের উভয় পক্ষের সম্মতি ও উপস্থিতি লাগে।

মনে রাখতে হবে, দলিলে অনিচ্ছাকৃত বানান ত্রুটি, টাইপিং ত্রুটি, সম্পত্তির বিবরণে ভুল ইত্যাদি জড়িত সংশোধন দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তি সংক্রান্ত নথিতে কেবলমাত্র ত্রুটিযুক্ত ত্রুটি সংশোধন করা যেতে পারে। আইনী ভুল থাকলে এবং যদি মূল দলিলের মৌলিক প্রকৃতিটি পরিবর্তন হবে এমন কিছু হলে তা ভ্রম সংশোধন দ্বারা সংশোধিত হবে না।

দলিলের সাথে জড়িত কোন পক্ষই বুঝতে পারে যে সম্পত্তি সম্পর্কিত নথিতে ভুল তথ্য বা টাইপিংয়ের ত্রুটি রয়েছে এবং তা অন্য পক্ষের নজরে এনে দ্রুত সংশোধন করা উচিত। নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই।

সংশোধন দলিল করতে চাইলে

দলিলের উভয় পক্ষকে সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে হবে, যেখানে দলিলটি আগে নিবন্ধিত ছিল। তাদের সমর্থনকারী সমস্ত নথির সাথে ডকুমেন্টে সংশোধন চেয়ে কর্মকর্তাকে একটি আবেদন জমা দিতে হবে। 

মূল নথিতে যদি বড় ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন হয়, সংশোধন দলিলটির নিবন্ধনের জন্য উভয় পক্ষকে প্রত্যেকে দুটি করে সাক্ষী গ্রহণ করতে হবে।

রেজিস্ট্রেশন ফিঃ ১০০ টাকা (ই-ফি)। স্টাম্প শুল্কঃ ৩০০ টাকা (১৮৯৯ সালের স্টাম্প আইনের ১ নম্বর তফশিলের ৫ নম্বর ক্রমিকে উল্লিখিত বর্ণনা অনুসারে)। এছাড়াও যা যা লাগবে তা হচ্ছে ২০০ টাকার স্টাম্পে হলফনামা।

ই- ফিঃ- ১০০ টাকা। এন- ফিঃ- বাংলায় প্রতি ৩০০ (তিন শত) শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ১৬ টাকা। ইংরেজি ভাষায় প্রতি ৩০০ (তিন শত) শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ২৪ টাকা।

আরো পড়ুন: জমির দলিল রেজিস্ট্রেশন খরচ জানুন ২০২৪

(নকলনবিশগনের পারিশ্রমিক) এনএন ফিসঃ-  বাংলায় প্রতি ৩০০ (তিনশত) শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ২৪ টাকা। ইংরেজি ভাষায় প্রতি ৩০০ (তিনশত) শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ৩৬ টাকা।

সকল প্রকার ফি রেজিস্ট্রি অফিসে নগদে জমা করতে হবে। সরকার নির্ধারিত হলফনামা, ২০০ টাকার স্টাম্পে প্রিন্ট করে মূল দলিলের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। 

স্ট্যাম্প আইন, ১৮৯৯ এর ৫ নম্বর ধারায় বেশ কয়েকটি স্বতন্ত্র বিষয় সম্পর্কিত উপকরণগুলি প্রসঙ্গে বলা বলা হয়েছে বলা বলা বলা বলা বলা বলা হয়েছে বলা বলা বলা বলা বলা বলা বলা বলা বলা বলা বলা বলা বলা বলা।

স্টাম্প শুল্ক মওকুফের জন্য স্ট্যাম্প আইন, ১৮৯৯ এর ১৬ ধারা মোতাবেক ২০ টাকার কোর্টফি সহ আবেদন করতে হবে। কবলা দলিল, বন্ধক দলিল এবং নিরুপন পত্র দলিল ব্যতিত অপর কোন দলিলের ক্ষেত্রে শূল্ক মওকুফ হবে না। স্টাম্পশূল্ক মওকুফের আবেদন করা না হলে মূল দলিলের ন্যায় স্টাম্পশুল্ক আদায়যোগ্য।

এ দলিলের মাধ্যমে মূল দলিলের মৌলিক কোন বিষয়বস্তুর পরিবর্তন হবে না। রেজিস্ট্রেশন বিধিমালার ৭৪ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে, কোন রেজিস্ট্রিকৃত বা রেজিস্ট্রেশনের জন্য গৃহীত দলিলে ভুল-ত্রুটি থাকলে এবং তা সংশোধনের জন্য কোন সম্পুরক দলিল 

রেজিস্ট্রেশনের জন্য, উক্ত ভুল-ত্রুটি প্রমানের জন্য মূল দলিল বা অবিকল নকল সহ, দাখিল করা হলে, যে রেজিস্টার বহিতে মূল দলিলটি নকল করা হয়েছে তার মার্জিনে এইরূপ সংশোধনের বিষয়ে নিম্নবর্ণিত নমুনায় একটি টীকা লিখতে হবে: “এই দলিলটি কার্যালয়ের সনের নং দলিল মুলে সংশোধন করা হইয়াছে।”

রেজিস্ট্রেশন বিধিমালার ৭৪ (২) অনুচ্ছেদ অনুসারে, যে রেজিস্টার বহিতে মূল দলিলটি নকল করা হয়েছে, তা যদি সদর রেকর্ড রুমে প্রেরিত হয়ে থাকে, তাহলে যে সাব-রেজিস্ট্রার ভ্রম সংশোধন দলিলটি রেজিস্ট্রি করেছেন, তিনি জেলা রেজিস্ট্রারকে তার নিজ স্বাক্ষরে সংশোধনী সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় টীকা যথাযথ রেজিস্টার বহিতে লেখার জন্য অনুরোধ করে পত্র লিখবেন।

দলিলে নামের ভুল সংশোধন

জমি-জমা, সম্পত্তি লেনদেনের ক্ষেত্রে দলিল একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি নথি। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় দলিলে ভুল তথ্য লেখা থাকে। এই ভুল তথ্য ভবিষ্যতে বড় সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই দলিলে ভুল তথ্য থাকলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

নাম বানান ভুল: দলিলে নামের বানান ভুল থাকলে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে। জমির পরিমাণ ভুল: জমির পরিমাণে ভুল থাকলে সঠিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হয়ে পড়ে। চৌহদ্দি ভুল: চৌহদ্দিতে ভুল থাকলে জমির অবস্থান নির্ধারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

অন্যান্য তথ্য ভুল: দলিলে তারিখ, মৌজা, খতিয়ান, দাগ নম্বর, মালিকানার ধরন ইত্যাদি তথ্য ভুল থাকতে পারে। জমি, বাড়ি, বা অন্য সম্পত্তির লেনদেনের ক্ষেত্রে দলিল একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি নথি। দলিলে সম্পত্তির সঠিক বিবরণ থাকা আবশ্যক, যাতে ভবিষ্যতে কোন জটিলতা তৈরি না হয়। কিন্তু অনেক সময় দলিলে ভুল তথ্য থাকতে পারে, যা বিভিন্ন সমস্যার কারণ হতে পারে।

আইনি জটিলতা: ভুল তথ্যের কারণে সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হতে পারে, যা আইনি জটিলতার দিকে ধাবিত করতে পারে। আর্থিক ক্ষতি: ভুল তথ্যের কারণে সম্পত্তির মূল্য হ্রাস পেতে পারে, এবং লেনদেনে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।

সম্পত্তি হস্তান্তরের সমস্যা: ভুল তথ্যের কারণে সম্পত্তির হস্তান্তর প্রক্রিয়া জটিল হতে পারে। দলিলে ভুল তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা থাকতে পারে। তাই ভুল তথ্য সংশোধনের জন্য একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।

দলিলে ভুল তথ্য থাকলে দ্রুত সংশোধন করা জরুরি। ভুল তথ্য সংশোধনের জন্য প্রশাসনিক পদ্ধতি এবং আদালতের মাধ্যমে দুটি উপায় রয়েছে। ভুল তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা থাকতে পারে, তাই একজন আইনজীবীর পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।

দলিলের ভুল তথ্য ভবিষ্যতে বড় সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই দলিল তৈরির সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত এবং ভুল তথ্য থাকলে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে তা সংশোধন করতে হবে। নাম পরিবর্তন বিজ্ঞপ্তি

মিরাটের চঞ্চল চৌহান তার পদবি পরিবর্তন করতে চান। চঞ্চলের মতোই বিপুল সংখ্যক মানুষ তাদের নাম পরিবর্তন করেন। এর অনেক কারণ থাকতে পারে। কিছু লোক তাদের উপাধি পরিবর্তন করতে চায় আবার কিছু লোক তাদের পুরো নাম পরিবর্তন করে। অনেক সময় নথিতে ভুল নাম এন্ট্রি করা হলে তাও পরিবর্তন করতে হয়।

চঞ্চল যদি তার পদবি পরিবর্তন করতে চান, তবে এর জন্য তাঁকে একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। এ জন্য তাদের কাছে দুটি বিকল্প রয়েছে। প্রথমত, আপনি যদি উত্তর প্রদেশের মিরাট থাকেন তবে আপনি এই তথ্যটি UP গেজেটে প্রকাশ করতে পারেন। 

অন্যরা কেন্দ্রীয় সরকারের গেজেটে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারে। এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চঞ্চল বিনিয়োগ, ব্যাঙ্ক, পিএফ, পেনশন এবং অন্যান্য চাকরি সংক্রান্ত বিভাগ সম্পর্কিত সমস্ত বিভাগে তার নাম পরিবর্তন করতে পারে। আসুন জেনে নেওয়া যাক গেজেট বিজ্ঞপ্তির প্রক্রিয়া ঠিক কী।

হলফনামা এবং গেজেট বিজ্ঞপ্তির জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি প্রয়োজন। এর মধ্যে হলফনামা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলিল। হলফনামায় আপনার নাম, ঠিকানা, বয়সের বিস্তারিত বিবরণ দিতে হবে। আপনি কেন আপনার নাম পরিবর্তন করছেন এবং ভবিষ্যতে নাম কী হবে তাও আপনাকে জানাতে হবে।

আপনার আগের নথিগুলো কোন নামে ইস্যু করা হয়েছে তা হলফনামায় উল্লেখ করতে হবে। এই হলফনামা একজন নোটারি, আইনজীবী এবং শপথ কমিশনার দ্বারা এটেস্ট করাতে হবে।

গেজেট বিজ্ঞপ্তির জন্য দুটি সংবাদপত্রে তথ্য প্রকাশ করতে হবে। এর মধ্যে একটি সংবাদপত্র হিন্দিতে এবং অন্যটি ইংরেজিতে হতে হবে। এটির উদ্দেশ্য হল আপনার নাম পরিবর্তনে কেউ যেন আপত্তি না করে তা নিশ্চিত করা। 

যে সংবাদপত্রে নাম পরিবর্তনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে তার মূল কপি আপনার কাছে থাকতে হবে। সংবাদপত্রের ফটোকপি গেজেট বিজ্ঞপ্তির জন্য বৈধ নয়। আপনাকে আবেদনপত্রের সাথে শুধুমাত্র সংবাদপত্রের মূল কপি সংযুক্ত করতে হবে।

নাম পরিবর্তনের জন্য, আপনার পরিচয় সম্পর্কিত নথি সংযুক্ত করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে ভোটার আইডি, আধার কার্ড, প্যান কার্ড, পাসপোর্ট ইত্যাদি। এগুলোর সাথে দুটি ছবি জমা দিতে হবে। নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং চূড়ান্ত নথি হল আবেদনপত্র। 

এই চিঠিটি প্রকাশনা বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যেতে পারে। এই অ্যাপ্লিকেশনগুলি প্রাপ্তবয়স্ক এবং নাবালক উভয়ের জন্যই আলাদা। যদি কোনও নাবালকের নাম পরিবর্তন করতে হয়, তবে তার অভিভাবক দ্বারা তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে নিজেই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করতে হবে।

এই আবেদনপত্রে দুইজন সাক্ষী স্বাক্ষর করবে। এই সাক্ষীদের ঘোষণা করতে হবে যে যার নাম পরিবর্তন করা হবে তাকে তারা চেনেন।

নাম দিয়ে জমির দলিল

আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদের বলবো নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম সম্পর্কে। আমাদের সকলের কাছে জমি একটি মূল্যবান সম্পদ। আপনার জমি নেই বা অনেক জমি আছে তবুও আরো জমি কিনতে চান।

জমির কেনার আগে অবশ্যই জমির মালিকের নাম যাচাই করে নিতে হবে। এর আগের আর্টিকেলে আমি বলেছি জমির রেকর্ড যাচাই করার নিয়ম সম্পর্কে। বর্তমানে ভূমি মন্ত্রণালয় ভূমি সেবা প্রযুক্তি ডিজিটাল করেছে। যার ফলে আপনারা যেকোউ অনলাইনের মাধ্যমে জমির সকল তথ্য জানতে পারবেন।

তাছাড়া, আপনি চাইলে এখন ঘরে বসে অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধ করতে পারবেন এবং জমির খতিয়ান বের করতে পারবেন।  তাহলে চলুন নিচে থেকে জেনে নিবো কিভাবে নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই বা জমির মালিকানা বের করার উপায় সেই সম্পর্কে।

নাম দিয়ে জমির মালিকানা বের করার জন্য প্রথমে আপনাকে যেতে হবে ভূমি মন্ত্রণালয় এর land.gov.bd এই ওয়েবসাইটে। ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পরে নিচে থেকে ডিজিটাল ল্যান্ড রেকর্ড এই অপশনে ক্লিক করুন।

পরের পেজে আপনাকে নতুন একটি পেজে নিয়ে যাওয়া হবে। নিচে থাকা খতিয়ান অপশনে ক্লিক করুন। তাহলে আপনাকে নাম দিয়ে জমির মালিকানা বের করার পেজে নিয়ে যাবে। 

আবার আপনি চাইলে বামপাশে বাংলাদেশের মানচিত্র জুম করে নিজের জেলা সিলেক্ট করলে সরাসরি এই পেজে যেতে পারবেন।  খতিয়ান অনলাইন আবেদন এর মাধ্যমে নিজের বিভাগ, জেলা, এস এ খতিয়ান, উপজেলা, মৌজা সিলেক্ট করুন।

আরো পড়ুন: অনলাইনে জমির ই-পর্চা দেখার নতুন নিয়ম

এখান থেকে কয়েকটি মাধ্যম (খতিয়ান নং, দাগ নং, মালিকানা নাম এবং পিতা/স্বামীর নাম) ব্যবহার জমির মালিকানা যাচাই করতে পারবেন।

আমরা মালিকানা নাম ব্যবহার করে জমির আসল মালিক কে সেটা যাচাই করবো। এজন্য মালিকানা নাম অপশনে টিক চিহ্ন দিয়ে ক্যাপচা কোড লিখুন। শেষে অনুসন্ধান করুন অপশনে ক্লিক করলে জমির মালিকের নাম দেখতে পাবেন। 

দলিল সংশোধন মামলা

জমি রেজিস্ট্রি করার পর অনেক সময় দেখা যায় দলিলে কোন জায়গায় হয়তো ভুল হয়েছে। দলিল রেজিস্ট্রির পর তাতে দাগ, খতিয়ান, মৌজা, চৌহদ্দি বা নামের বড় ধরনের কোন ভুল ৩ বছরের মধ্যে ধরা পড়লে তা খুব সহজেই সংশোধন করা যায়। 

এরূপ ভুল হওয়ার ৩ বছরের মধ্যে দেওয়ানি আদালতে দলিল সংশোধনের মামলা করতে হবে। ৩ বছর পর এরূপ মামলা তামাদির দ্বারা বারিত হয়ে যায়। তাই তখন আর সংশোধন মামলা করা যায় না, তবে ঘোষণামূলক মামলা করা যায়। এরূপ মামলার রায়ই হল সংশোধন দলিল।

রায়ের ১ কপি আদালত হতে সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার এর নিকট পাঠানো হলে সাব-রেজিস্ট্রার উক্ত রায়ের আলোকে সংশ্লিষ্ট ভলিউম সংশোধন করে নিবেন, ফলে নতুন করে কোন দলিল করার আর কোন প্রয়োজন নেই (সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ৩১ ধারা)।

সাধারণ নাগরিকগণ এখনও মনে করে থাকে যে, জমির দলিল একবার ভুল হয়ে গেলে তা আর সংশোধন করা যায়-এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা – জমির দলিলে দাগ নম্বর ভুল হলে সংশোধনের উপায় দলিল রেজিষ্ট্রির পর তাতে দাগ, খতিয়ান, 

মৌজা, চৌহদ্দি বা নামের বানানে কোন প্রকার ভুল ধরা পড়লে ৩ বছরের মধ্যে দেওয়ানি আদালতে দলিল সংশোধনের মামলা করতে হবে। ৩ বছর পর এই ধরনের মামলা তামাদির কারণে বারিত হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে সংশোধন মামলা করা যায় না, তবে তখন ঘোষণামূলক মামলা করা যায়। 

এক্ষেত্রে আদালত কর্তৃক প্রদানকৃত মামলার রায়ই হচ্ছে সংশোধন দলিল। রায়ের একটি সার্টিফাইড কপি আদালত থেকে সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিষ্টার এর কাছে পাঠানো হলে সাব-রেজিষ্টার উক্ত রায়ের আলোকে সংশ্লিষ্ট ভলিউম সংশোধন করে নিবেন। এক্ষেত্রে আর নতুন করে কোন দলিল করার প্রয়োজন নেই।

দলিল সংশোধন করার নিয়ম

আইন পেশায় থাকার সুবাদে অনেকে আমার কাছে জানতে চান জমির রেজিস্ট্রির পর দলিলে দাগ নম্বরে ভুল আছে, খতিয়ানে ভুল, মৌজা, চৌহদ্দিতে ভুল আবার অনেকে বলে থাকেন নামের বানানে ভুল আবার 

অনেকে বলে থাকেন দলিল লেখার বিবরণে বর্ণিত তারিখ, দলিল নম্বর কিংবা তথ্যের যথার্থ ভুল হয়েছে, এখন কি করা যায়। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি এ ধরনের ভুল আপনি সংশোধন করতে পারেন। কিন্তু কীভাবে সংশোধন করবেন, 

সংশোধন না করলে ভবিষ্যতে ওই দলিল নিয়ে আপনি কি কি সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন, আর দলিল সংশোধনের জন্য আপনাকে কোথায় যেতে হবে, কত টাকা খরচ হবে, কত সময় লাগবে- সেসব বিষয়ে আইনি আলোচনা জানুন।

শুরুতেই জানিয়ে রাখি, এরকম অশুদ্ধ দলিল হলে আপনি যার কাছ থেকে জমি কিনেছেন তাকে বলুন রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে ভ্রম সংশোধনী দলিল করে দিতে। কারণ জমি রেজিস্ট্রি করিয়ে দেওয়ার সময় দাতা একটি হলফনামা সম্পাদন করে যে, দলিলে বর্ণিত কোনো তথ্য ভুলভাবে লিপিবদ্ধ হইয়া থাকিলে তজ্জন্য 

আমি / আমরা দায়ী হইব এবং আমার / আমাদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা করা যাইবে। হস্তান্তরিত জমি সম্পর্কে কোনো ভুল, অসত্য বা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করিয়া থাকলে প্রয়োজনে নিজ খরচায় ভুল শুদ্ধ করিয়া ক্ষতিপূরণসহ নতুন দলিল প্রস্তুত ও রেজিস্ট্রি করিয়া দিতে বাধ্য থাকিব।

দলিলের মূল কাঠামো বা স্বত্বের কোনো পরিবর্তন ঘটবে না সেরূপ ভুল সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার বরাবরে আবেদন করা যাবে। সাব-রেজিস্ট্রার এই ধরনের ছোটখাটো ভুল সংশোধন করতে পারেন। এটাকে ভ্রূম সংশোধনী দলিল বলা হয়। 

কিন্তু জমির দলিল দাতা যদি মৃতু্যবরণ করেন তাহলে তার মৃতু্যর পর ওয়ারেশরা আপনার দাবি অনুযায়ী ওই দলিল সংশোধন করে দিতে পারেন। তবে ওয়ারেশরা অনিচ্ছুক হলে এ ভুল সংশোধনের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩১ ধারা অনুযায়ী উপযুক্ত আদালতে দলিল সংশোধনের মোকদ্দমা করতে হবে। 

১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩১ ধারায় বলা হয়েছে, যেক্ষেত্রে প্রতারণা অথবা পক্ষগণের পারস্পরিক ভুলের জন্য কোনো লিখিত দলিল হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে দলিলের যে কোনো পক্ষ অথবা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি দলিলটি সংশোধনের জন্য মামলা দায়ের করতে পারে। 

তবে মনে রাখবেন, দলিল সংশোধনের মামলায় প্রতারণা বা পারস্পরিক ভুল অবশ্যই থাকতে হবে। তা না হলে দলিল সংশোধনের মামলা দায়ের করা যাবে না। মনে রাখবেন দলিল রেজিস্ট্রির তারিখ থেকে ৩ বছরের মধ্যে দেওয়ানি আদালতে দলিল সংশোধনের মোকদ্দমা করতে হয়।

তবে এ সময়ের মধ্যে দলিলের ভুল উদ্ঘাটিত না হলে তামাদি আইনের ৯১ ও ৯৬নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দলিলের ভুল উদ্ঘাটনের তারিখ থেকে ৩ বছরের মধ্যে মামলাটি আনয়ন করতে হয়। কারণ ৩ বছর পর এই ধরনের মোকদ্দমা তামাদির কারণে বারিত হয়ে যায়। 

সেক্ষেত্রে তখন আর দলিল সংশোধনের মোকদ্দমা করা যায় না, তখন ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করা যায়। এ মামলা ১০০ বছর পরে ভুল উদ্ঘাটিত হলেও করা যায়। এক্ষেত্রেও আদালত কর্তৃক মামলার যে রায় দেয়া হয়, সেটাই হচ্ছে সংশোধন দলিল। 

অর্থাৎ রায়ের একটি সার্টিফাইড কপি আদালত থেকে সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো হলে সাব- রেজিস্ট্রার ওই রায়ের আলোকে সংশ্লিষ্ট ভলিউম সংশোধন করে নিবেন। এক্ষেত্রে আর নতুন করে কোনো দলিল করার প্রয়োজন নেই। 

মনে রাখবেন দলিল সংশোধনের মামলায় আরজিতে ক্ষতিপূরণের বিকল্প প্রার্থনা রাখতে হবে। তবে আরজিতে ক্ষতিপূরণের বিকল্প প্রার্থনা না থাকলেও আদালত তার সুবিবেচনা প্রয়োগ করে ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন।

জমির দলিল নাই কি করবেন

রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯০৮ এর ৫৭(১) ধারা মোতাবেক, প্রয়োজনীয় ফিস পূর্বে পরিশোধ সাপেক্ষে, যে কোন ব্যক্তি ১ নং (স্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত দলিলের) ও ২ নং (রেজিস্ট্রি করতে অস্বীকার করা দলিলের) রেজিস্টার বহি ও 

১ নং রেজিস্টার বহি সম্পর্কিত সূচিবহি পরিদর্শন করতে পারে এবং উক্ত আইনের ৬২ ধারার বিধানাবলি সাপেক্ষে উক্ত বহিসমুহে লিপিবদ্ধ বিষয়ের নকল (অর্থাৎ দলিলের সার্টিফাইড কপি) গ্রহন করতে পারে।

একই আইনের ৫৭(২) ধারা মোতাবেক, প্রয়োজনীয় ফিস পূর্বে পরিশোধ সাপেক্ষে, দলিল সম্পাদনকারী বা তার এজেন্ট এবং সম্পাদনকারীর মৃত্যুর পর (পূর্বে নয়) যে কোন আবেদনকারী ৩ নং বহি (নিবন্ধিত উইলের রেজিস্টার বহি) তে লিপিবদ্ধ বিষয়ের (অর্থাৎ উইল বা অছিয়ত দলিলের নকল বা সার্টিফাইড কপি) এবং ৩ নং বহি সম্পর্কিত সূচিপত্রের নকল গ্রহন করতে পারে।

একই আইনের ৫৭(৩) ধারা মতে, প্রয়োজনীয় ফিস পূর্বে পরিশোধ সাপেক্ষে, দলিলের সম্পাদনকারী বা দাবীদার ব্যক্তি বা তার এজেন্ট অথবা প্রতিনিধি ৪ নং বহিতে লিপিবদ্ধ বিষয়ের নকল গ্রহন করতে পারে।

একই আইনের ৫৭(৪) ধারা মতে, ৩ নং ও ৪ নং বহিতে লিখিত বিষয়ের তল্লাশি, সাব-রেজিস্ট্রার এর মাধ্যমে করা যাবে। যদি মূল দলিল থাকে- রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের রেজিস্ট্রি কার্যক্রম শেষ হলে মূল দলিলের শেষ পৃষ্টার উল্টোদিকে “

দলিলটি কত সালের, কত নম্বর বালাম বইয়ের, কত পৃষ্ঠা থেকে কত পৃষ্ঠায় নকল করা হয়েছে” তা লিখে সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক স্বাক্ষর করা হয়। এটা থেকে সহজেই রেজিস্ট্রি অফিসে থেকে দলিলের নকল উঠানো যায়।

মূল দলিল না থাকলে-  রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল রেজিস্ট্রি শেষ হলে দলিলের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি তথ্য নিয়ে সূচিবহি তৈরি করা হয়। একটি সূচিবহি তৈরি হয় দলিলে উল্লিখিত জমির দাতা/বিক্রেতা, গ্রহিতা/ক্রেতা বা অন্য কোন পক্ষের নাম দিয়ে, আর একটি তৈরি হয় জমির মৌজার নাম দিয়ে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন