ইউরিক এসিডের ঘরোয়া চিকিৎসা ২০২৪ বিস্তারিত
ইউরিক এসিড কমাবে যে তিন খাবার ইউরিক অ্যাসিড শরীরে উৎপন্ন একটি টক্সিন। যার গঠনে কোনও সমস্যা নেই, তবে শরীর থেকে বের না হওয়াই রোগের মূল। শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে জয়েন্টগুলোতে ব্যথা ও ফোলাভাব হয়। ইউরিক এসিডের আয়ুর্বেদিক ঔষধ
যাদের ইউরিক অ্যাসিড বেশি তাঁদের পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডাল, কিডনি বিন, ছোলা, তরকারি, পনির, অ্যালকোহল এবং বাইরের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ভূষণ রিসার্চ ল্যাবে ডক্টর ভূষণ বলেন, যাদের ইউরিক অ্যাসিড বেশি তাঁদের খাদ্যতালিকায় পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
ইউরিক এসিডের ঘরোয়া চিকিৎসা ২০২৪
বর্তমানে বহুমানুষ যারা ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের মনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন যে এটাকে কিভাবে কমানো যায়। দেহের অন্তরে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ার কারণে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয় । তাই শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ কমানোর জন্য রোগীক তার পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া কমাতে হবে।
বিভিন্ন ধরনের খাদ্য, পানীয় যার মধ্যে পিউরিন পাওয়া যায় এবং অনেক সময় শরীরেও পিউরিন উৎপাদিত হতে পারে । তাই ' ইউরিক অ্যাসিড ' কীভাবে কমানো যায়, সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। রক্ত প্রবাহে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ার ফলে আর্থেরাইটিস দেখা দেয় যাকে বাত বলা হয়ে থাকে। বাতকে প্রতিরোধ করার জন্য সঠিক খাদ্য এবং সঠিক ঔষধ গ্রহণ করা দরকার।
যদি ইউরিক এসিড স্বাভাবিকভাবে নির্মূল হয় না যার ফলে বাত দেখা যায়, এবং যেটি রক্ত প্রবাহের সাথে মিশে জয়েন্ট পেইন এবং ব্যথা সৃষ্টি করে। যদি কোন ব্যক্তির বেশি পরিমাণে ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা থাকে তাহলে তাকে সঠিক খাদ্য তালিকা অনুসরন করতে হবে। ইউরিক অ্যাসিডে কি কি খাবার এবং পানীয় গ্রহণ করা যাবে তার একটি তালিকা নিম্নে দেওয়া হল।
জল জল শরীর থেকে অতিরিক্ত ইউরিক এসিড সহ টক্সিন বের করে দেয় । তাই একজন ব্যক্তির প্রতিদিন অন্তত ১০ থেকে ১২ গ্লাস জল পান করতে হবে । বেরি বেরি বিশেষ করে স্ট্রবেরি, এবং ব্লুবেরির মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে যা শরীরকে জয়েন্টের ব্যথা থেকে আরাম দেয়। তাই এদের ইউরিক অ্যাসিডের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করুন।
আপেল আপেল হল ম্যালিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ যা ইউরিক এসিড নিষ্ক্রাষণে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন একটি করে আপেল খাওয়ার চেষ্টা করুন। বিনসের রস বাতের ব্যথা থেকে আরাম পাওয়ার জন্য আরেকটি কার্যকরী ঘরোয়া উপায় হল বিন্সের রস। বাত বা উচ্চ ইউরিক অ্যাসিডের চিকিৎসার জন্য প্রতিদিন দুবার করে স্বাস্থ্যকর রস খাওয়া যেতে পারে।
পিন্টো বিন ফোলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ এই খাদ্যটি প্রাকৃতিকভাবে ইউরিক এসিড কমাতে সাহায্য করে। ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ পিন্টো বিন্স, সূর্যমুখী বীজ এবং ডাল আপনার খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ যা আপনার ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করবে।
আরো পড়ন: ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিরোধ করার ঘরোয়া চিকিৎসা
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার শরীরে ইউরিক অ্যাসিড কমানোর জন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার ও সাপ্লিমেন্ট অন্তর্ভুক্ত করুন । এটি ইউরিক অ্যাসিডকে সংহত করে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয় ।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন আম্লকি, পেয়ারা, কিউই, মিষ্টি লেবু, কমলা লেবু, ক্যাপসিকাম, লেবু, টমেটো এবং সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি খাওয়া উচিৎ। উচ্চমাত্রায় ফাইবার জাতীয় খাবার
মেরিল্যান্ড মেডিকেল সেন্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুযায়ী, খাদ্যতালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য শরীরেইউরিক অ্যাসিডের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তে এর পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমিয়ে কিডনির সাহায্যে তা শরীরের বাইরে বের করে দেয়।
ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য হিসাবে ইসবগুল, ওটস, ব্রোকলি, আপেল, কমলা, নাশপাতি, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, শসা, সেলারি, এবং গাজর, বার্লি ইত্যাদি খেতে পারেন। কলাও ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে। মাংস, সামুদ্রিক খাবার এসব খাবার গুলির মধ্যে প্রচুর মধ্যে প্রোটিন রয়েছে যা শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রাকে বাড়াতে সাহায্য করে।
ডাল ডালে পিউরিনের পরিমাণ বেশি থাকে তাই এটিকে কম খাওয়া উচিৎ। সবজি ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেশি থাকলে বেশি পরিমাণে সবুজ শাকসসব্জি খাওয়া উচিত। তবে এমন কিছু সবজি রয়েছে যাতে পিউরিন রয়েছে যেমন ফুলকপি, অ্যাসপারাগাস, পালং শাক, মটর ও মাশরুম এই ধরনের সব্জি এড়িয়ে চলুন।
কার্বোহাইড্রেট কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যেমন পাউরুটি, কেক এবং কুকিজ আপনার ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে, সুতরাং এগুলি এড়িয়ে চলা উচিৎ।
ইউরিক এসিডের ব্যায়াম
ডায়াবিটিস, আর্থ্রাইটিসের মতো ইউরিক অ্যাসিডও স্বাভাবিক জীবনযাপন কিছুটা স্তব্ধ করে দেয়। মূত্রের মধ্যে থাকা বিভিন্ন যৌগের মধ্যে ইউরিক অ্যাসিডও একটি। কার শরীরে কতটা পরিমাণ ইউরিক অ্যাসিড থাকবে, তা নির্ভর করে সেই ব্যক্তির খাদ্যতালিকায় প্রোটিনের পরিমাণ এবং বিপাকহার কেমন, তার উপর।
চিকিৎসকেদের মতে, রক্তে এই অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে না পারলে ভবিষ্যতে বিস্তর রোগ জাঁকিয়ে বসতে পারে। ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে ঝুঁকি আরও দ্বিগুণ হয়। সুস্থ থাকতে তাই খাওয়াদাওয়ায় রাশ টানতে হবে। তবে শুধু নিয়ম মেনে খেলেই হবে না।
আরো পড়ন: কিডনির সমস্যা বোঝার ১০টি উপায়?
সেই সঙ্গে করতে হবে শরীরচর্চাও। তবে ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁরা কোন শরীরচর্চাগুলি করলে বেশি সুফল পাবেন? পশ্চিমোত্তাসন সামনের দিকে পা ছড়িয়ে বসুন। পায়ের পাতার অভিমুখ রাখুন আপনার দিকে। শিরদাঁড়া সোজা রাখুন। এ বার শ্বাস নিন।
দুটো হাত একসঙ্গে মাথার উপর সোজা করে তুলুন। এর পরে শ্বাস ছাড়ুন। এ বার আস্তে আস্তে সামনের দিকে ঝুঁকুন। হাত দু’টি গোড়ালি পর্যন্ত পৌঁছলে একটির কব্জি দিয়ে আর একটি ধরে রাখুন। মাথা রাখুন হাঁটুতে। এর পর শ্বাস ছাড়ুন।
খেয়াল রাখুন শিরদাঁড়া যেন সামনের দিকে প্রসারিত থাকে। শ্বাস নিন। এর পরে আস্তে আস্তে হাত দু’টি সরিয়ে মাথার উপর নিয়ে গিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। এ বার হাত দু’টি নামিয়ে নিয়ে পূর্বের ভঙ্গিতে ফিরে যান। মানসিক উদ্বেগ কমাবে এই ব্যায়াম।
ভুজঙ্গাসন উপুড় হয়ে ম্যাটের উপর শুয়ে পড়ুন। দুই হাত ভাঁজ করে বুকের দু’পাশে রাখুন। এ বার শ্বাস নিতে নিতে মাথা এবং বুক মাটি থেকে উপরের দিকে তোলার চেষ্টা করুন। মাথা এবং ঘাড়ও যতটা সম্ভব পিছন দিকে হেলিয়ে রাখুন।
খেয়াল রাখবেন, কোমরের নীচ থেকে বাকি অংশ যেন মাটি স্পর্শ করে থাকে। এই অবস্থায় থাকুন ১০ সেকেন্ড। তার পর আবার আগের ভঙ্গিতে ফিরে আসুন। অর্ধ মৎস্যেন্দ্রাসন
দু’পা সামনের দিকে ছড়িয়ে বসুন। প্রথমে একটি পা, অন্য আর একটি পায়ের উপর তুলে সোজা করে রাখুন। এর পর যে পা রেখেছেন তার উল্টো দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে রাখুন। একটি হাতে সামনের পায়ের পাতা স্পর্শ করে থাকবেন। আর অন্য হাতটি ঘুরিয়ে রাখবেন কোমরে। কিছু ক্ষণ এই ভঙ্গিতে থাকার পর আগের অবস্থায় ফিরে আসুন।
ইউরিক এসিডে নিষিদ্ধ খাবার
সকালে ঘুম থেকে উঠেই পায়ের আঙুলে ব্যথা বা হাতের আঙুল ভাঁজ করতে না পারা, হাত বা পায়ের অস্থিসন্ধিগুলি ফুলে থাকা যে ইউরিক অ্যাসিডের লক্ষণ, এ কথা অনেকেই জানেন। কারণ রক্তচাপ, ডায়াবিটিসের মতো ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা এখন জীবনধারা-নির্ভর রোগের মধ্যে পড়ে।
ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে তাই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগেই খাওয়ার তালিকা থেকে টম্যাটো, ঢ্যাঁড়শ, মুসুর ডাল বাদ দিয়ে দেন অনেকে। পুষ্টিবিদদের মতে, বেশ কয়েক বছর আগেও ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে নানা খাবারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু এখন নির্দিষ্ট কিছু খাবার ছাড়া, নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে সবই খাওয়া যায়। তবে খেয়াল রাখতে হয় ওজন যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে। ইউরিক অ্যাসিড হলে কী কী খাওয়া বারণ, তা প্রায় সকলেই জানেন।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে ভিটামিন সি, ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। শুধু লেবু বা সাইট্রাসজাতীয় ফল নয়, চেরি, স্ট্রবেরি বা টকজাতীয় যে কোনও ফলেই অল্প হলেও ভিটামিন সি থাকে। তাই প্রতি দিন সামান্য হলেও টক ফল খাওয়া উচিত।
আরো পড়ন: লিচু খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন
খেতে ভাল লাগলেও ‘ফুল ক্রিম’ বা ‘ফুল ফ্যাট’ যুক্ত দুধ এবং সেই দুধ দিয়ে বানানো খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। বদলে প্রতি দিন ‘ডবল টোনড’ বা ‘স্কিমড’ দুধ থেকে বাড়িতে পাতা দই খেতে পারেন। বানাতে পারেন ঘোল, পনিরও।
হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য সামুদ্রিক মাছে থাকা ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ভাল। কিন্তু এই ফ্যাটি অ্যাসিডের পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছে ক্ষতিকারক ‘পিউরিন’ নামক একটি যৌগ থাকে, যা ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। তাই সার্ডিন, ট্রাউট বা টুনার মতো সামুদ্রিক মাছ না খেয়ে পমফ্রেট বা ইলিশের উপর ভরসা করতেই পারেন।
ইউরিক এসিড কমানোর ঔষধ
ইউরিক অ্যাসিড বেশি মানেই বড় রকমের শারীরিক সমস্যা আছে এমন নয়। অনেকের ক্ষেত্রেই জিনগত কারণে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি থাকতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ইউরিক অ্যাসিড শরীরে কোনো সমস্যা তৈরি করে না।
তবে কিছু ক্ষেত্রে ইউরিক অ্যাসিড শরীরের বিভিন্ন অস্থিসন্ধিতে (হাড়ের জোড়া) ক্রিস্টাল হিসেবে জমা হয়ে প্রদাহ তৈরি করতে পারে। এর ফলে অস্থিসন্ধি লাল হয়ে ফুলে যায় এবং প্রচণ্ড ব্যথার সৃষ্টি করে বলে জানান ডা. আবেদ হোসেন। এই অবস্থাকে গাউট বা গেঁটে বাত বলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে গেঁটে বাতে পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির গোঁড়ার অস্থিসন্ধি আক্রান্ত হয়।
এ ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড কিডনিতে পাথর বা অন্যান্য সমস্যা তৈরি করতে পারে বলে জানান এই চিকিৎসক।
সুস্থ থাকতে শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায় যেসব খাবার সেগুলো পরিহার করা উচিত। যেমন-
লাল মাংস, যেমন- গরু, খাসি, ভেড়া বা হাঁসের মাংস, মগজ, কলিজা, গুর্দা (কিডনি), ফুসফুস, মুরগির চামড়া, চিংড়ি, কাঁকড়া, শুঁটকি ও অন্যান্য সামুদ্রিক খাবার, কোমল পানীয়, বিয়ার জাতীয় অ্যালকোহল, অতিরিক্ত লবণ। কী খেতে পারবেন শাকসবজি, ডাল, ডিম, দুধ এগুলো খেতে কোনো বাধা নেই বলে জানান ডা. আবেদ হোসেন।
ডাল, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বীজ এবং অন্যান্য কিছু সবজি আগে ইউরিক অ্যাসিড বেশি থাকলে খেতে নিষেধ করা হতো। কিন্তু এখন দেখা গেছে, এই সবজিগুলো ইউরিক অ্যাসিড বাড়ানোতে বা রোগ সৃষ্টিতে কোনো ভূমিকা রাখে না।
এ ছাড়া অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। চিকিৎসকের পরার্মশ অনুযায়ী কিছু ওষুধ পরির্বতন করার প্রয়োজন হতে পারে, যদি রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, কিডনির সমস্যা বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানান ডা. আবেদ হোসেন।
সব ওষুধের কিছু পার্শ্বঃপ্রতিক্রিয়া থাকে তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজ থেকে কোনো ওষুধ সেবন না করা এবং বন্ধ না করার পরামর্শ দেন তিনি। নিজ থেকে কোন পরীক্ষা করা বা কোনো ওষুধ সেবন করার প্রয়োজন নেই।
ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত জীবন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার পরামর্শ দেন ডা. আবেদ হোসেন।
বয়স বাড়লে যে সমস্যাগুলি দেখা দিতে শুরু করে, ইউরিক অ্যাসিড সেই তালিকায় একেবারে প্রথমের দিকে থাকে। হাঁটুতে প্রচণ্ড ব্যথা, অস্থিসন্ধি ফুলে গিয়ে তীব্র যন্ত্রণা এবং সেই সঙ্গে গাঁটে গাঁটে ব্যথা— ইউরিক অ্যাসিডের অন্যতম লক্ষণ।
খাবার থেকে তৈরি হওয়া অ্যাসিড রক্তে মিশে কিডনিতে গিয়ে পৌঁছয়। কিডনি এই দূষিত পদার্থ ছেঁকে মূত্রের মাধ্যমে শরীরের বাইরে বার করে দেয়। কিন্তু যকৃত যদি নির্গত ইউরিক অ্যাসিডের চেয়ে বেশি পরিমাণ অ্যাসিড তৈরি করে,
তখন কিডনি সেই মাত্রাতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড শরীরের বাইরে পাঠাতে ব্যর্থ হয়। আর তাতেই রক্তে বাড়ে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা। ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে হাঁটাচলা বন্ধ হয়ে যায় অধিকাংশ সময়ে। তাই এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
ইউরিক এসিডের এলোপ্যাথিক ঔষধ
ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যায় এখন বহু মানুষ আক্রান্ত। প্রতিদিন অসংখ্য রোগীর শরীরে চিহ্নিত হচ্ছে এই রোগ। তাই প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই এই অসুখটি নিয়ে সচেতন থাকতে হবে।
ইউরিক অ্যাসিড (Uric Acid) হল শরীরে বিপাকের ফলে তৈরি হওয়া একটি উপাদান। আসলে আমরা প্রোটিন খাই। এবার সেই প্রোটিন শরীরে বিপাক হয়। এই বিপাকের পর প্রোটিন থেকে তৈরি হয় ইউরিক অ্যাসিড। এই প্রসঙ্গে কলকাতার ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালের বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: রুদ্রজিৎ পাল বলেন, আমাদের শরীরে বিপাকক্রিয়া চলতে থাকে।
এবার বিপাকের (Metabolism) শেষে কিছু পদার্থ শরীরে তৈরি হয়ে যায়। এমনই একটি পদার্থ হল ইউরিক অ্যাসিড। এবার ইউরিক অ্যাসিড সকলের শরীরেই থাকে। তবে সেই ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে গেলে সমস্যা তৈরি হয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, আসলে পুরুষের ক্ষেত্রে ৭ এর নীচে এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৬-এর নীচে ইউরিক অ্যাসিড থাকলে ভালো। তবে এর তুলনায় বেশি হলেই সমস্যা তৈরি হয়ে যায়। তাই প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই এই বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে।
এক্ষেত্রে ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে তা জয়েন্টে জমা হতে পারে। তখন (Uric Acid Symptoms) জ্বালা, ব্যথা, ফুলে ওঠা সম্ভব। এই অবস্থার নাম গাউট (Gout)। এছাড়া দেখা যায়, ইউরিক অ্যাসিড জমতে পারে আপনার কিডনিতেও। সেই সমস্যার নাম ইউরিক অ্যাসিড স্টোন (Uric Acid Stone)।
যে কোনও মানুষের ইউরিক অ্যাসিড হতে পারে। তবে দেখা গিয়েছে যে মধ্যবয়স্ক পুরুষের এই সমস্যা বেশি হয়। এছাড়া এই মধ্যবয়স্ক পুরুষের মধ্যে যাঁরা মদ্যপান (Alcoholic) করেন তাঁদের সমস্যার আশঙ্কা আরও বেশি। এছাড়া মহিলাদেরও এই সমস্যা কিন্তু দেখা দিতে পারে। এছাড়াও কেমো থেরাপি চলছে, ক্যানসার রয়েছে এমন মানুষের শরীরেও এটা বেশি থাকে।
ইউরিক এসিডের আয়ুর্বেদিক ঔষধ
ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়া বর্তমানে খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে সেখান থেকে হাইপারইউরিসেমিয়ার মত সমস্যা দেখা দেয়। ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে জয়েন্টে ফোলাভাব, ব্যথা এসব লেগে থাকে। ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে সেখান থেকে কিডনিতে পাথরও হতে পারে।
পিউরিন নামের একটি রাসায়নিক যৌগ ভেঙে সেখান থেকে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে এই সমস্যা বেশি হয়। বেশ কিছু খাবার আর পানীয়ের মধ্যে ইউরিক অ্যাসিড বেশি পরিমাণে থাকে।
ইউরিক অ্যাসিড কিডনি দিয়ে পরিস্রুত হয়ে প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। তবে যখন এই পরিমাণ বেড়ে যায় তখন গাঁটে গাঁটে ইউরিক অ্যাসিড জমতে শুরু করে। ইউরিক অ্যাসিড কমানোর জন্য অনেক রকম চিকিৎসা রয়েছে। তবে আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা এই তিন ভেষজের উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। এতে ইউরিক অ্যাসিড দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসবে।
হরিতকী, আমলা, বহেড়া এই তিনের মিশ্রণ দিয়ে তৈরি হয় ত্রিফলা। আর ত্রিফলা যেমন পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে তেমনই ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখতেও কাজে আসে। এই তিনের মিশ্রণে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণ। রোজ সকালে খালিপেটে ইষদুষ্ণ জলে এই মিশ্রণ মিশিয়ে খেলে কাজ হবেই।
বহু বছর ধরেই গাউটের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় নিম। নিমের মধ্যে প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা গেঁটেবাত নিরাময়ের জন্য খুব ভাল। রোজ সকালে একটু নিমপাতা আর কাঁচা হলুদ চিবিয়ে খেলে শরীরের জন্য যেমন ভাল, শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বেরিয়ে যায় তেমনই ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখতেও কাজে আসে। গাঁটে ব্যথা হলে নিমপাতা বেটে লাগালেও অনেক উপকার হয়।
আয়ুর্বেদের সব চিকিৎসাতেই হলুদ ব্যবহার করা হয়। হলুদের মধ্যে রয়েছে কারকিউমিন নামের একরকম যৌগ। এছাড়াও হলুদের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। হলুদ বাতের চিকিৎসায় ভাল কাজ করে। সেই সঙ্গে ফোলা ভাবও কমিয়ে দেয়।
ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখতে আদাও খুব ভাল কাজ করে। নিয়মিত ভাবে আদার চা খেলে উপকার হয় তেমনই আদা দিয়ে জল ফুটিয়েও খেতে পারেন। এছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শে ডায়েট মেনে চলতেই হবে। প্রয়োজনে ওষুধও খেতে হবে।
ইউরিক এসিড কমাবে যে তিন খাবার
মানবদেহের অন্যতম উপাদান হচ্ছে ইউরিক এসিড। কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন দিয়ে তৈরি এই যৌগ আমাদের খাবার হজমে সহয়তা করে। শরীরের পিউরিন নামে অর্গান ইউরিক এসিড তৈরি করার মূল কারিগর। তবে শরীরের জন্য ইউরিক এসিডের যেমন ভালো দিক রয়েছে, তেমনি শরীরের ওপর এর বাজে প্রভাবও রয়েছে। তাই শরীরের ইউরিক এসিডের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি
ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়ার কারণগুলো হচ্ছে অতিরিক্ত ওজন, অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান, পিউরিন অর্গানকে ভারী করে এমন খাবার খাওয়া, হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড গ্রন্থির কম হরমোন উৎপাদন), নির্দিষ্ট ডিউরেটিকস (ক্রমাগত কিডনির পানি ও লবণের পরিমাণ কমতে থাকা)। এ ছাড়া অতিরিক্ত প্রোটিনও ইউরিক এসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী।
রক্তে উচ্চমাত্রায় ইউরিক এসিড থাকাকে বলা হয় হাইপারুরিকেমিয়া। উচ্চমাত্রায় ইউরিক এসিডের ফলে বাতরোগের মতো রোগের আশঙ্কা দেখা দেয়। তবে কিছু এমন খাবার রয়েছে, যা শরীর এবং রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। চলুন, জীবনধারাবিষয়ক সাময়িকী বোল্ডস্কাইয়ের সৌজন্যে জেনে আসি সেই সব খাবারের নাম, যা খেলে ইউরিক এসিডের চিন্তা থেকে চিরমুক্তি মিলবে।
শরীরে ইউরিক এসিডের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসতে অলিভ অয়েলের জুড়ি নেই। অলিভ অয়েলে রয়েছে প্রদাহরোধী ক্ষমতা। তাই ইউরিক এসিডের প্রদাহ থেকে বাঁচতে সবজি, সালাদ ও পাস্তাতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
বিশেষ ধরনের, মানে ব্রাজিলে উৎপাদিত বাদাম, আমন্ড, ম্যাকাডেমিয়া বাদাম ও আখরোটে সাধারণত পিউরিনের পরিমাণ কম থাকে, যা ইউরিক এসিডের মাত্রাকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
ব্রাজিলে উৎপাদিত বাদামে পিউরিনের পরিমাণ মাত্র ৪০ মিলিগ্রাম। তবে রাস্তায় আমরা সচরাচর যে বাদামগুলো দেখতে পাই, ইউরিক এসিড নিয়ন্ত্রণে সেগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ, প্রতি কাপে সেগুলোতে পিউরিনের পরিমাণ ৮০ মিলিগ্রাম।
ইউরিক এসিডের ডায়েট চার্ট
কয়েক দিন ধরে বেড়েছে পায়ের গাঁটে ব্যথা (Gout Health)। ডাক্তারের কাছে যেতে প্রেসক্রিশনে লিখে দিয়েছেন ইউরিক অ্যাসিড স্টেট। রিপোর্ট হাতে পেতেই মুসুর ডাল থেকে টমেটো সব বর্জন করা শুরু করে দিয়েছেন। সমস্যা একটাই- ইউরিক অ্যাসিডের (Uric Acid) মাত্রা বেড়ে গিয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ ইউরিক অ্যাসিডে গাঁটের ব্যথায় (Joint Pain) কষ্ট পাচ্ছেন। অন্তত এমনই তথ্য প্রকাশ করছে আমেরিকান কলেজ অফ রিউম্যাটোলজির এক গবেষণাপত্র। কিন্তু শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়লেই যে সব খাওয়া ত্যাগ করে সেদ্ধ খাবারের উপর জীবন কাটাতে হবে এমনটা কিন্তু মোটেও নয়।
শরীরের দূষিত রেচক হল এই ইউরিক অ্যাসিড। শরীরে পিউরিন ভেঙে তৈরি হয় ইউরিক অ্যাসিড। ইউরিক অ্যসিড রক্তে দ্রবীভূত হয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে কিডনি দিয়ে যায়। কিন্তু অনেক সময় তা বেরোতে না পেরে রক্তেই জমা হতে শুরু করে। আর রক্তে ইউরিক অ্যাসিড একবার বাড়তে শুরু করলেই শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। তখন গাঁটে ব্যথা শুরু হয়ে যায়।
আরো পড়ন: লিচু খাওয়ার উপকারি ও অপকারিতা
জায়গাটা লাল হয়ে যায়। তবে এই লক্ষণটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শুধু পায়েতেই দেখা দেয়। কিন্তু শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে খাদ্যের ব্যাপারে কতটা কড়া নিয়ম মেনে চলতে হয়, এর কি কোনও মাপকাঠি রয়েছে?
এই প্রসঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আগেই বেশির ভাগ মানুষ টমেটো, মুসুর ডাল, ঢেঁড়শ, দানা-যুক্ত সব আনাজ খাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছেন। এটা কি ঠিক করছেন? বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবার খাওয়া কমিয়ে দিলেই যে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে যাবে, এমনটা কিন্তু নয়। বরং বুঝে-শুনে খাবার খেলে শরীর বেশি ভাল থাকবে।
আসলে খাবার হজম হওয়ার সময় শরীরে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। সাধারণত এটি প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে নির্গত হয়ে যায়। কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে কিংবা ওজন বেড়ে গেলে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আর যখন ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি হয় এবং সেটা শরীর থেকে বেরোতে পারে না তখন সেটা ক্রিস্টালের আকার নিয়ে শরীরে জমা হয়ে থাকে। আর এখান থেকে গাঁটে ব্যথা ও প্রস্রাবের সংক্রমণ এবং কিডনিতে পাথর হওয়ার মতো রোগগুলো তৈরি হয়। তাই দানা-যুক্ত সব সব্জি, ডাল খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিলেই যে আপনি সুস্থ থাকবেন তা কিন্তু নয়।
একটা সময় ছিল যখন ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে খাবারের উপর নানা নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু এখন পরিমাণ কম খেতে বললেও খাদ্যতালিকা থেকে পুরোপুরি বাদ দিতে বলে না কেউ। বরং ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে সবই খাওয়া যায়।
তবে চেষ্টা করুন পালং শাক, বিনস, বরবটি, রাজমার মতো খাবারগুলো কম খাওয়ার। ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ অত্যধিক বেড়ে গেলে পালং শাক, পুঁই শাক, মুসুর ডাল, বিউলি ডাল, মাটন, সামুদ্রিক মাছ এড়িয়ে চলুন। তবে প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে মাছ, চিকেন বা ডিম খেতেই পারেন। পাশাপাশি টমেটো, ঢেঁড়শ রান্না করে খেলে কোনও ক্ষতি নেই।
এর সঙ্গে শুধু নজর রাখতে হবে খাবারের পরিমাণের দিকে। পাশাপাশি এমন কোনও খাবার খাবেন না যাতে ওজন বেড়ে যেতে পারে। ওজন বেড়ে গেলে তা ইউরিক অ্যাসিডের উপর কু-প্রভাব ফেলে। প্রয়োজনে প্রতিদিন ৩০-৪৫ মিনিট ব্যায়াম করুন।
ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় হল প্রচুর পরিমাণে জল পান করা। দিনে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ লিটার পান করতে হবে। এতে আপনি সহজেই এড়াতে পারবেন ইউরিক অ্যাসিড সহ নানা রোগের ঝুঁকি।
ইউরিক এসিডের ব্যথা কমানোর উপায়
আমাদের শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের প্রতি ডেসিলিটারে ৩.৫ থেকে ৭.২ mg/dL মিলিগ্রাম থাকা উচিত কিন্তু অনেক কারণে আমাদের রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মিটার ৭ mg/dL অতিক্রম করে। সাধারণত, অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড শরীর থেকে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়,
কিন্তু যখন ইউরিক অ্যাসিড শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে তৈরি হয়, তখন এটি ইউরিক অ্যাসিড ক্রিস্টাল আকারে হাড়ের জয়েন্টগুলির মধ্যে জমা হতে শুরু করে। এই কারণেই জয়েন্টে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। যাকে বাত বা বাতের ব্যথা বলা হয় ৷
বাতের ব্যথার ওষুধ অনেকেই খান৷ ব্যথা বাড়লে ওষুধ খেলে কিছুক্ষণের জন্য উপশম পাওয়া যায়, কিন্তু চিরতরে এই ব্যথা সেরে যায় না। তবে ওষুধের থেকে বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে আয়ুর্বেদিক ভেষজ দারুজ কাজ করে। সকালে এই ৫ পাতা চিবিয়ে খেলেই বাতের ব্যথা থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন৷
ধনে পাতা- Onmanorama ওয়েবসাইট অনুসারে, ধনে পাতায় ইউরিক অ্যাসিড কমানোর অনেক গুণ রয়েছে। ধনে পাতা ঔষধি গুণে পরিপূর্ণ। ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, থায়ামিন, ফসফরাস, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে সহ অনেক পুষ্টি উপাদান ধনে পাতায় রয়েছে৷ ধনে পাতা খেলে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা এবং ইউরিক অ্যাসিড কমে।
তেজপাতা - তেজপাতা শুধুমাত্র রান্নাতেই নয় বরং তেজপাতা অনেক ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ। তেজপাতা রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি যা রক্ত থেকে ইউরিক অ্যাসিড পরিষ্কার করে। তেজপাতা তৈরি করে চায়ের মতো পান করলে হাঁটুর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
পুদিনা পাতা- পুদিনা পাতা ঔষধি গুণে পরিপূর্ণ। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এ এবং ফোলেট পাওয়া যায়, যা রক্ত থেকে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড পরিষ্কার করে। পুদিনা পাতায় রয়েছে প্রদাহরোধী যা রক্তের ময়লা পরিষ্কার করে। পুদিনা পাতা খেলে প্রস্রাব থেকে পিউরিন বের করে দিতে সাহায্য করে। এছাড়াও পুদিনা শরীর থেকে টক্সিন দূর করে।
কারি পাতা- কারি পাতা অনেক কিছুতে ব্যবহার করা হয়। কারি পাতায় অনেক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ইউরিক অ্যাসিড দূর করতে সাহায্য করে। কারি পাতা খেলে রক্তে জমে থাকা নোংরা ইউরিক অ্যাসিড প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। এতে বাতের ব্যথা কমে।
পান পাতা - পান পাতার অনেক গুণ রয়েছে। পান শুধু শখ করে খাওয়া হয় না, এর রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। পান পাতা ইউরিক অ্যাসিড কমাতে দারুণ কাজ করে। বাতের ব্যথা হলে পান পাতা খেলে উপকার পাবেন।