ঘুম ঘুম ভাব কিসের লক্ষণ? অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির ঔষধ
ঘুম ও অলসতা দূর করার উপায় সারাদিনের কাজের পর রাতে টানা ঘুম। কর্মব্যস্ত জীবনে এটাই ডেইলি রুটিন। তবে সকালে উঠে ফ্রেশ লাগবে তার উপায় নেই। কেমন একটা দুর্বলভাব অনুভূত হয়। ঘুম ঘুম ভাব কিসের লক্ষণ? অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির ঔষধ
রাতের ঘুমটা ঠিকঠাক। তবু সকালে ঘুম কিছুতেই কাটছে না। ক্লান্তি নিয়েই আপনি অফিস-ব্যবসা বা ঘর সামলাচ্ছেন। সারাদিন ঘুম চোখে নানা ভুলও করে যাচ্ছেন। লিখছেন ভুল, শুনছেন ভুল। মনে হচ্ছে, আরেকটু ঘুমোলে হয়তো ভালো হতো। ঘুম জড়ানো চোখে বাসে ট্রামে ঢুলেও পড়ছেন। সহযাত্রীরা বিরক্ত হচ্ছেন। আপনিও বিরক্ত।
ঘুম ঘুম ভাব কিসের লক্ষণ? অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির ঔষধ
পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হ'ল আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি রয়েছে। যেমন প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর কার্বস, ভিটামিন, খনিজ ইত্যাদি। এছাড়াও, সঠিক সময়ে খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। কারণ ভারী রাতের খাওয়ার পরে অস্বস্তি বোধ হয় এবং এতে করে ঘুম আসে না এবং পরেরদিন আপনার ঘুম আসবে।
অতিরিক্ত ওজন হওয়ায় ক্লান্তি ও অবসন্নতা দেখা দেয়, যার কারণে সবসময় আপনার মাথা ঘুরে ওঠে। আপনার ওজন আপনার পেশী এবং জয়েন্টগুলিকেও চাপ দেয় এবং ব্যাথা হয়। স্লিপ হেলথ জার্নালটির গবেষণা অনুসারে ঘুম এবং ওজন সরাসরি একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। এজন্য ঘুম জরুরী।
আরো পড়ুন: পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
আপনি ঠিক সময়ের বেশি ঘুমোচ্ছেন, আপনি রুটিন এড়িয়ে যাচ্ছেন, আপনার শরীরের ঘড়িটি সামঞ্জস্য করবে না। আপনি কখনই এভাবে বেশি ঘুমাতে পারবেন না। অতএব আপনি নিজের দিনটি এমনভাবে পরিকল্পনা করুন যাতে আপনার ঘুম পরিপূর্ণ হয়। সর্বোচ্চ আট ঘন্টা আপনি ঘুমান।
যাদের ডেস্ক জব নেই এবং কঠোরভাবে প্রতিটি দিনই ব্যায়াম হয় না, আপনার জন্য সংবাদ আছে। আপনার সক্রিয় জীবনধারা আপনাকে খুব বেশি সহায়তা করবে না, কারণ এটি আপনাকে উত্সাহিত করার পরিবর্তে ক্লান্ত করে তুলছে। অতিরিক্ত ব্যায়াম করা আপনার পেশীগুলিকে অপ্রয়োজনীয় চাপ দেয় যা আপনাকে ক্লান্ত ও দুর্বল করে তোলে। এতে করে ঘুম আসে সবসময়।
যদি আপনি আপনার খাবার এড়িয়ে চলেন এবং অনাহারে থাকেন তবে আপনি সব সময় নিদ্রাহীন বোধ করতে বাধ্য। ক্ষুধা আপনার শরীরকে শিথিল হতে দেয় না এবং হরমোনগুলো প্রকাশ করে যা আপনাকে বিরক্ত করে তোলে, যার কারণে আপনার ঘুম খারাপ হয়।
যদি আপনার শরীর হাইড্রেটেড হয় তবে এটি আপনাকে আপনার দেহের শক্তির স্তর বজায় রাখতে সহায়তা করে। ব্রিটিশ জার্নাল অফ নিউট্রিশনে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে সামান্য ডিহাইড্রেশন শক্তির স্তর হ্রাস করতে পারে এবং এতে করে স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব পরে।
অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির উপায়
এগুলো নিদ্রাহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা আমাদের অতিরিক্ত ঘুমাতে বাধ্য করে। এছাড়াও ঘুমের মধ্যে অনেকের শ্বাসকষ্ট হয়, যা অনেক সময় অতিরিক্ত ঘুমানোর চাহিদা তৈরি করে। তবে সাময়িক অসুস্থতার জন্য কারো ঘুম অনেক বেশি হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে শরীর সুস্থ হবার পাশাপাশি এই অতিরিক্ত ঘুমানোর চাহিদাও দূর হয়ে যায়।
আমরা যারা নিজেদের এবং আশেপাশের লোকজনের এই অতিরিক্ত ঘুমানো নিয়ে বিরক্ত, তারা প্রায় সবাই এর থেকে বের হয়ে আসার উপায় খুঁজে থাকি। ঘুম কমানোর কয়েকটি উপায় চলুন জেনে নেই।
যখন অ্যালার্ম বাজবে তখনই উঠে পড়বেন। ৫ মিনিট বেশি ঘুমানোর জন্য আপনার ১ ঘণ্টার দেরি হয়ে যেতে পারে!
আরো পড়ুন: ঘুমের অভাবের প্রভাব এবং দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার ১২টি কার্যকরী ঘরোয়া উপায়
খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা অনেকেই নাস্তা করতে চাই না। কিন্তু বলা হয়, যদি আপনি ঘুম থেকে ওঠার ৩০ মিনিটের মধ্যে সকালের নাস্তা সেরে ফেলেন, তাহলে আপনি সারাদিনের জন্য কিছু বাড়তি শক্তি পাবেন এবং এটি আপনাকে রাতে ভালো মতো ঘুমাতেও সাহায্য করবে। রাতে ১-২ ঘণ্টা সময়ের ব্যবধানে একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিদিন শুয়ে পড়ার চেষ্টা করবেন।
সাধারণত সপ্তাহের বন্ধের দিন আমরা একটু বেশি ঘুমাই। এই অভ্যাসটি না করাই ভালো। এটি আপনার নিয়মিত ঘুমের ধারায় ব্যাঘাত আনতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম করুন, স্বাস্থ্যকর খাবার খান। এটি আপনার শরীর ও মন ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
সকালে ঘুম ঘুম ভাব দূর করার উপায়
খাওয়ার পর অনেকের মাঝেই ঘুম ঘুম ভাব লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে দুপুরে হয় বেশি। এর কারণ হচ্ছে দুপুরে খাওয়ার পর আমাদের মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ হ্রাস পাওয়ার কারণেই এ ঘুম ভাব আসে। তবে এটি একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। কয়েকটি কাজ করলে খুব সহজেই এই স্বাভাবিক ব্যাপারটি দূর করা যাবে।
পানি ঘুম ঘুম ভাব দূর করার সবচেয়ে ভালো ওষুধ। পানি পান করলে আমাদের দেহের কোষগুলো নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। এক গ্লাস পানি পান করে নিন। দেখবেন ঝিম ঝিম ঘুম ধরা ভাব কেটে গেছে। একই সঙ্গে পানি পান করলে মস্তিষ্ক নতুন করে কাজ করার জন্য তৈরি হয়ে যায়।
চা বা কফি ঝিম ভাব দূর করার জন্য সবচেয়ে কার্যকর একটি পানীয়। দুপুরের খাবারের শেষে এক কাপ চা-কফি খেলে এক নিমেষে দূর হবে ঝিম ধরা ভাব। চা-কফির ক্যাফেইন আমাদের মস্তিষ্ককে সজাগ রাখতে বেশ কার্যকর।
বসে থাকলে কিংবা চেয়ারে একটু গা এলিয়ে পড়ে থাকলে ঘুম ঘুম ভাব আরো জেঁকে বসে। তাই পাঁচ মিনিটের জন্য হলেও হাঁটুন। এতে শরীরের আলস্য কেটে যাবে। আর ঘুম ঘুম ভাবও দূর হবে। চোখে পানির ঝাপটা দিন। চোখে মুখে ঠান্ডা পানির একটু ঝাপটা দিলে মাথা ঝিম ধরা এবং শরীরে অলসভাব একেবারে দূর হয়ে যায়।
অতিরিক্ত ঘুম কি কোন রোগের লক্ষণ
ঘুমকাতুরে স্বভাব আছে অনেকেরই। একটু সুযোগ মিললো এমন সময়ে ঘুম এড়ানোটা কষ্টকর। বিছানায় একটু আরাম করে শুলেন - আবহাওয়াও চনমনে। ব্যাস বেশ একটু ঘুম। বয়োজ্যেষ্ঠরা অবশ্য বলেন, বেশি ঘুম ভালো নয়। কথাটা কিন্তু ভুল নয়।
মূলত একজন প্রাপ্তবয়স্কের দিনে ৮-৯ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। মস্তিষ্ক এতে খুব একটা ক্লান্ত হয় না। দিনে চার ঘণ্টা ঘুমোতে পারলেও আপনি সুস্থ থাকবেন। তবে ৮-৯ ঘণ্টাই আদর্শ। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের অভাবে বদহজম, ক্লান্তি, স্মৃতিশক্তি লোপের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কম ঘুম যেমন হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণ, বেশি ঘুমও হৃদযন্ত্র বিকলের কারণ হতে পারে। যারা দিনে ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমান, তাদের হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি ৮৫ শতাংশ বেড়ে যায়।
আরো পড়ুন: অতিরিক্ত গরমে সুস্থ্য থাকার ৭ টি দুর্দান্ত টিপস
সচরাচর মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কমে গেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। স্ট্রোকের উপসর্গ প্রথম থেকেই আন্দাজ করা সম্ভব হয় না। অনেকের ঘুমের মধ্যেও স্ট্রোক হয়। অবশ্য সাময়িক গবেষণা থেকে জানা যায় না ঘুমের সাথে স্ট্রোকের সম্পর্কটা আদৌ কিভাবে সম্ভব। তবে পর্যবেক্ষণ থেকে এমনটাই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আমরা এর সম্ভাব্য কারণগুলো বলতে পারি। বেশি ঘুমালে দেহে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে শুরু করে৷ এতে শরীরে মেদ জমে। মেদ অবশ্যই স্ট্রোকের কারণ। এছাড়াও প্রচণ্ড মানসিক অবসাদ শরীরে ক্লান্তি আনে। তাতে অনেকে বেশি ঘুমান। আর এসব কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়তে শুরু করে।
ঘুম ঘুম ভাব কিন্তু ঘুম আসে না
Iron Deficiency: সকালে ঘুম থেকে উঠে ক্লান্ত লাগে? কিন্তু এমনটা হওয়ার তো কথা নয়। কোনও কাজে এনার্জি পাওয়া যায় না। মনে হয় আরেকটু ঘুম হলে ভালো হতো। কেন এমন হয়? শুধুই কি আলসেমি নাকি কোনও ভয়ঙ্কর রোগের ইঙ্গিত?
সারাদিনের কাজের পর রাতে টানা ঘুম। কর্মব্যস্ত জীবনে এটাই ডেইলি রুটিন। তবে সকালে উঠে ফ্রেশ লাগবে তার উপায় নেই। কেমন একটা দুর্বলভাব অনুভূত হয়। সারাক্ষণ হাই ওঠে। কাজে মন বসে না। মনে হয় আর কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলে বোধহয় ভালো হতো। এই ভাবনা কি সঠিক, না এর পেছনে রয়েছে অন্য কারণ?
শরীরে আয়রনের প্রয়োজন কতটা তা বলাই বাহুল্য। আয়রন আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক রাখে। এই অক্সিজেনের ঘাটতি হলেই দুর্বল লাগতে থাকে শরীর। হাঁপ ধরা, মাথা ঝিমঝিম করা, চোখে মুখে অবসন্ন ভাব চোখে পড়ে।
আরো পড়ুন: গর্ভাবস্থায় কিভাবে ঘুমানো উচিত জেনে নিন
যদি নিয়মিত এমন লক্ষণ চোখে পড়ে তাহলে আগে থেকেই সাবধান হয়ে যাওয়া উচিত। বুঝবেন কীকরে আয়রনের ঘাটতি রয়েছে কিনা? এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করালেই ধরা পড়বে আয়রনের ঘাটতি।
যারা ভেজিটিয়ান-- মাছ, মাংস একেবারেই খান না তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হতে পারে। খাদ্যনালীর সমস্যা থাকলেও এই সমস্যা হয়। এছাড়া প্রেগনেন্সি বা মহিলাদের ব্লিডিং আইরন ডেফিসেন্সির প্রধান কারণ।
চোখে ঘুম ঘুম ভাব দূর করার উপায়
আপনার কি সব সময় ক্লান্ত লাগে? কেবলই ঘুম পায় সারা দিন? মনে রাখবেন, এই সমস্যা শুধু আপনার একার না।
গবেষণা বলছে, প্রতি পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্কের একজন সপ্তাহে অন্তত তিন দিন দিনের বেলায় অত্যধিক ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন। দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি আপনার জীবনযাত্রার মান যেমন কমিয়ে দিতে পারে, অন্যদিকে এই ঘুম ঘুম ভাব হতে পারে কোনো রোগেরও লক্ষণ। তাই বিষয়টিকে হেলাফেলা করার সুযোগ নেই।
সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম দরকার। অপর্যাপ্ত ঘুম ক্লান্তির একটি সাধারণ কারণ। মানসিক চাপ, রোগ ও পরিবেশ ঘুমকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে, ফলে কাটাতে হতে পারে নিদ্রাহীন রাত।
আপনার যদি ইনসমনিয়া থাকে, তবে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। আয়রন, ভিটামিন বি১২, ডি-র মতো কিছু পুষ্টিঘাটতি ক্লান্তির কারণ হতে পারে। অত্যধিক চাপ ক্লান্তি তৈরি করতে পারে। নিজের জন্যও সময় রাখুন।
অনেক রোগ ক্লান্তির সঙ্গে যুক্ত যেমন স্লিপ অ্যাপনিয়া, হাইপোথাইরয়েডিজম, ক্যানসার, ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, কিডনি রোগ, বিষণ্নতা, ডায়াবেটিস ও ফাইব্রোমায়ালজিয়া। অনেকদিন ধরে আপনার যদি ক্লান্ত ভাব থাকে, তবে উপযুক্ত পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।
ঘুম ও অলসতা দূর করার উপায়
অলস ব্যক্তির জীবনে সারা বছরে একটিই দিন, তা হলো আগামীকাল।' কিন্তু এই আগামীকাল কবে হবে, তার নেই কোনো নিশ্চয়তা। তার উপর ছুটি কাটালে বা ঘুরতে গেলে সেই রেশ কাটিয়ে কাজে ফিরতেই ভীষণ আলসেমি লাগে, ফিরলেও মন বসানো দায়।
বয়স, অভ্যাসগত আচরণ, পরিবেশ, সামর্থ্য, ইচ্ছাশক্তি, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি বিভিন্ন কারণেও অলস অনুভূতি ভর করতে পারে শরীরে। অলসতা কাটাতে নিচের ১০টি উপায় থেকে বেছে নিতে পারেন আপনার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতিটি।
আরো পড়ুন: কোন পাশে কাত হয়ে ঘুমাবেন? পাশ পরিবর্তন করবেন কীভাবে?
সকালের নাশতায় পুষ্টিকর খাবার রাখুন। পর্যাপ্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার মন এবং শরীরে প্রভাব ফেলে। আনন্দ থাকলে কাজে মনও বসে, আর অলসতাও সহজে ভর করতে পারে না।জটিল কাজ ফেলে রাখা থেকেই আলসেমির সূত্রপাত। যথাসময়ে কাজ শেষ করার জন্য নিজেকে কোনো পুরস্কার দেবেন এই প্রতিজ্ঞা করুন।
পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, জিমে ব্যায়াম করার সময় অডিও বুকস শুনতে থাকা ভালো কাজে দেয়। অর্থাৎ সেটিই জিমের সময় নিজেকে দেওয়া তাৎক্ষণিক পুরস্কার। জটিল, কঠিন কিংবা অলসতা ভেঙে কোনো কাজ শুরু বা শেষ করলে নিজের প্রিয় খাবার খাবেন-এমন কিছু পুরস্কার ঠিক করুন নিজের জন্য।
অতিরিক্ত ঘুম নিয়ে হাদিস
রাতে জলদি ঘুমাতে যাওয়া আর সকালে জলদি ঘুম থেকে উঠা সুস্বাস্থ্য, সম্পদ আর জ্ঞানের পূর্বশর্ত। বিষয়টি রাসুল (সা.)-এর হাদিসের সঙ্গেও মিলে যায়। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) রাতে দেরি করে ঘুমানো অপছন্দ করতেন। সাহাবায়ে কিরামকে তাগিদ দিতেন এশার পরপরই ঘুমিয়ে যাওয়ার।
রাসুলুল্লাহ (সা.) এশার নামাজ এক-তৃতীয়াংশ রাত পরিমাণ দেরি করে পড়া পছন্দ করতেন, আর এশার আগে ঘুমানো এবং এশার পর না ঘুমিয়ে গল্পগুজব করা অপছন্দ করতেন। মানুষের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম।
এর জন্য সবচেয়ে উপযোগী সময় হলো রাত। কেননা আল্লাহ তাআলা রাতকে বিশ্রামের উপযোগী করেই বানিয়েছেন। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি তোমাদের বিশ্রামের জন্য নিদ্রা দিয়েছি, তোমাদের জন্য রাত্রিকে করেছি আবরণস্বরূপ আর দিনকে বানিয়েছি তোমাদের কাজের জন্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যান্সারবিষয়ক গবেষণা বিভাগ ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারের তথ্য মতে, যখন সূর্যের আলো থাকে না তখন শরীরকে কাজ করতে বাধ্য করা বা জাগিয়ে রাখা শরীরে মেলাটনিন হরমোন তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে।
আর এই মেলাটনিনই মানুষের দেহে টিউমারের বৃদ্ধিকে রোধ করে। ফলে তাদের ধারণা, রাত জাগা মানুষদের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। অর্থাৎরাতের ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং এটি কোনোভাবেই দিনের বেলায় ঘুমিয়ে পুষিয়ে নেওয়া যায় না।
তাই রাতের বেলা গল্পগুজব, সিনেমা, ফেসবুকিংসহ সব অহেতুক কাজ থেকেই বিরত থাকা প্রয়োজন। কারণ রাতে অহেতুক দেরি করে ঘুমানো মানুষকে শেষরাতের ইবাদত ও ফজর নামাজ থেকে যেমন বঞ্চিত করে, তেমনি এটি স্বাস্থ্যের জন্যও মোটেই শুভকর নয়। যুক্তরাজ্যের এক দল গবেষকের মতে, যারা দেরিতে ঘুমায় ও দেরিতে ঘুম থেকে ওঠে, তাদের অকালমৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।
যুক্তরাজ্যের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. পিরেঞ্জ লেভি বলেন, রাত জাগার বদ-অভ্যাস যারা গড়ে তুলেছে, তাদের ৯০ শতাংশই মানসিক রোগের শিকার। ৩০ শতাংশে থাকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। এছাড়া স্নায়বিক সমস্যা থেকে শুরু করে অন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।
অতিরিক্ত ঘুমালে কি ক্ষতি হয়
ঘুমকাতুরে স্বভাব আছে অনেকেরই। একটু সুযোগ মিললো এমন সময়ে ঘুম এড়ানোটা কষ্টকর। বিছানায় একটু আরাম করে শুলেন - আবহাওয়াও চনমনে। ব্যাস বেশ একটু ঘুম। বয়োজ্যেষ্ঠরা অবশ্য বলেন, বেশি ঘুম ভালো নয়। কথাটা কিন্তু ভুল নয়।
ঘুমকাতুরে স্বভাব আছে অনেকেরই। একটু সুযোগ মিললো এমন সময়ে ঘুম এড়ানোটা কষ্টকর। বিছানায় একটু আরাম করে শুলেন - আবহাওয়াও চনমনে। ব্যাস বেশ একটু ঘুম। বয়োজ্যেষ্ঠরা অবশ্য বলেন, বেশি ঘুম ভালো নয়। কথাটা কিন্তু ভুল নয়।
সচরাচর মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কমে গেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। স্ট্রোকের উপসর্গ প্রথম থেকেই আন্দাজ করা সম্ভব হয় না। অনেকের ঘুমের মধ্যেও স্ট্রোক হয়। অবশ্য সাময়িক গবেষণা থেকে জানা যায় না ঘুমের সাথে স্ট্রোকের সম্পর্কটা আদৌ কিভাবে সম্ভব। তবে পর্যবেক্ষণ থেকে এমনটাই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আমরা এর সম্ভাব্য কারণগুলো বলতে পারি। বেশি ঘুমালে দেহে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে শুরু করে৷ এতে শরীরে মেদ জমে। মেদ অবশ্যই স্ট্রোকের কারণ। এছাড়াও প্রচণ্ড মানসিক অবসাদ শরীরে ক্লান্তি আনে।
তাতে অনেকে বেশি ঘুমান। আর এসব কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়তে শুরু করে। তাই বেশি ঘুমানোর অভ্যাস থাকলে দ্রুত পরিহার করুন। আরামপ্রিয়তাকে কিছুটা সংযত রাখতে পারলে আপনারই লাভ।