পনিরের বহুবিধ উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

পনির ও মাখনের পার্থক্য পনির একটি উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। এতে প্রাণিজ উৎস থেকে পাওয়া অন্যান্য খাবারের থেকে বেশি পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। এই উপাদান শরীরের বিভিন্ন উপকার যেমন মাংসপেশি মজবুত ও দেহের সার্বজনীন গঠন নিশ্চিত করে। পনিরে প্রোটিন সহ ক্যালসিয়াম, ফ্যাট, ফলেট ও ফসফরাস সহ আরও অনেক খনিজ উপাদান থাকে। বিভিন্ন ধরনের খাবার রান্নার পাশাপাশি পনির খালি হিসেবেও খাওয়া যায়। পনিরের বহুবিধ উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

পনির ও মাখনের পার্থক্য


আপাত দৃষ্টিতে পনিরকে একটি ভারতীয় খাবার মনে হলেও এটি মূলত দক্ষিণ এশিয়ার খাবার। বিভিন্ন ধরনের খাবার রান্নার পাশাপাশি পনির খালি হিসেবেও খাওয়া যায়। এতে রয়েছে অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ যা শরীরের গঠনগত উন্নয়নে সহায়তা করে।

পনিরের বহুবিধ উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

পনিরের উপকারিতা

পনির একটি পুষ্টিকর খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান রয়েছে। পনিরের উপকারিতাগুলির মধ্যে রয়েছে: হাড় মজবুত করে: পনিরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা হাড়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

ক্যালসিয়াম হাড়কে শক্তিশালী করে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: পনিরে ভিটামিন এ, সি এবং ই রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ওজন কমাতে সাহায্য করে: পনিরে প্রোটিন এবং ফাইবার রয়েছে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। 

আরো পড়ুন: টক দই এর উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

হজম শক্তি বাড়ায়: পনিরে প্রোবায়োটিক রয়েছে, যা হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। দাঁত মজবুত করে: পনিরে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস রয়েছে, যা দাঁত মজবুত করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: পনিরে পটাসিয়াম রয়েছে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে: পনিরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

পনির খাওয়ার নিয়ম

পনির একটি সুস্বাদু খাবার হলেও এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। পনির খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: 
  • পনির তাজা ও টাটকা কিনা তা দেখে নিন।
  • পনির খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
  • পনিরের পরিমাণ বেশি না খাওয়াই ভালো।
  • যারা ওজন কমাতে চান তারা পনিরের সাথে ফল বা বাদাম মিশিয়ে খেতে পারেন।
যারা অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগেন তারা পনির খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

পনিরের বিভিন্ন প্রকার

পনিরের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
  • নরম পনির: নরম পনিরের মধ্যে রয়েছে মোজারেলা, চেডার, কাঁচা টক দই ইত্যাদি।
  • কঠিন পনির: কঠিন পনিরের মধ্যে রয়েছে চেডার, পনির, পার্মেসান ইত্যাদি।
  • শুকনো পনির: শুকনো পনিরের মধ্যে রয়েছে পোর্টো সালাডা, ফেটা ইত্যাদি।
  • ভাজা পনির: ভাজা পনিরের মধ্যে রয়েছে পনিরের চপ, পনিরের নাগেটস ইত্যাদি।

পনিরের ব্যবহার

পনির বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে:
  • সালাদ: সালাদকে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর করে তুলতে পনির ব্যবহার করা যায়।
  • স্যান্ডউইচ: স্যান্ডউইচে পনির ব্যবহার করে স্বাদ বাড়ানো যায়।
  • পিৎজা: পিৎজায় পনির একটি অপরিহার্য উপাদান।
  • কেক: পনির দিয়ে তৈরি কেক খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।
  • চপ: পনিরের চপ, পনিরের নাগেটস ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ভাজা খাবারে পনির ব্যবহার করা হয়।
পনির একটি পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু খাবার। এটি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পনির রাখার চেষ্টা করুন।

কাঁচা পনির খাওয়ার উপকারিতা

কাঁচা পনির একটি জনপ্রিয় দুগ্ধজাত খাবার। এটি প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি১২, এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। কাঁচা পনির খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে, যেমন: ওজন কমাতে সাহায্য করে: কাঁচা পনির একটি উচ্চ-প্রোটিন খাবার। প্রোটিন আমাদের ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে এবং আমাদের পেটকে দীর্ঘ সময় ধরে ভরিয়ে রাখে। 

আরো পড়ুন: অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও এটি খাওয়ার নিয়ম

এতে করে আমরা কম ক্যালোরি গ্রহণ করি এবং ওজন কমাতে সহায়তা পাই। হাড়কে শক্তিশালী করে: কাঁচা পনির ক্যালসিয়ামের একটি দুর্দান্ত উৎস। ক্যালসিয়াম হাড়ের একটি প্রধান উপাদান এবং এটি হাড়কে শক্তিশালী এবং মজবুত রাখতে সাহায্য করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: কাঁচা পনির ভিটামিন বি১২ এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি ভালো উৎস। 

ভিটামিন বি১২ আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: কাঁচা পনির পটাশিয়ামের একটি ভালো উৎস। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। দাঁতকে সুস্থ রাখে: কাঁচা পনির ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের একটি ভালো উৎস।

ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস দাঁতকে শক্তিশালী এবং মজবুত রাখতে সাহায্য করে। ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে: কাঁচা পনির ভিটামিন এ এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি ভালো উৎস। ভিটামিন এ ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। 

কাঁচা পনির খাওয়ার কিছু টিপস: কাঁচা পনির খাওয়ার আগে এটি ভালভাবে ধুয়ে নিন। কাঁচা পনিরকে অতিরিক্ত লবণ বা মশলা দিয়ে খাওয়া এড়িয়ে চলুন। কাঁচা পনিরকে বিভিন্ন খাবারে ব্যবহার করতে পারেন, যেমন সালাদ, স্যান্ডউইচ, বার্গার, পিজ্জা, ইত্যাদি।

কাঁচা পনির একটি স্বাস্থ্যকর খাবার, তবে এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। কারণ এতে চর্বি এবং ক্যালোরির পরিমাণ বেশি। প্রতিদিন ২০০-২৫০ গ্রাম কাঁচা পনির খাওয়া যথেষ্ট।

পনির কতদিন ভালো থাকে

পনিরের ধরন, তাপমাত্রা এবং সংরক্ষণ পদ্ধতির উপর পনিরের স্থায়িত্ব নির্ভর করে। সাধারণত, ফ্রিজে রাখা পনির ৫-৭ দিন ভালো থাকে। তবে, কিছু পনির, যেমন চেডার, পেরমেসান এবং ফটা, দীর্ঘদিন ভালো থাকে। এই পনিরগুলিকে সাধারণত ঠান্ডা, অন্ধকার জায়গায় সংরক্ষণ করা হয় এবং এগুলির উৎপাদন প্রক্রিয়াতে ব্যাকটেরিয়া যোগ করা হয় যা পনিরের স্থায়িত্ব বাড়ায়। 

পনির সংরক্ষণের জন্য নিম্নলিখিত টিপসগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে: পনির কেনার সময় তার উৎপাদন তারিখ এবং এক্সপায়ারি ডেট পরীক্ষা করে নিন। পনির কেনার পর তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফ্রিজে রাখুন। পনিরকে ফ্রিজে সংরক্ষণ করার সময় তা মুখবন্ধ পাত্রে রাখুন।

এটি পনিরের উপর থেকে বাতাস বের করে দিতে সাহায্য করবে। পনির রান্না করার আগে তা ফ্রিজ থেকে বের করে এনে কিছুক্ষণ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখুন। এতে পনির সহজে কাটা যাবে এবং এর স্বাদও ভালো হবে। পনিরের গায়ে যদি কোনও ছত্রাক বা দাগ দেখা যায়, তাহলে তা খাওয়া উচিত নয়। এছাড়াও, যদি পনিরের স্বাদ বা গন্ধ পরিবর্তিত হয়, তাহলে তাও খাওয়া উচিত নয়।

পনির খেলে কি ওজন বাড়ে

পনির খেলে কি ওজন বাড়ে তা নির্ভর করে পনিরের পরিমাণ এবং অন্যান্য খাবারের সাথে পনিরের সংমিশ্রণের উপর। সাধারণত, পনির একটি উচ্চ-ক্যালোরি খাবার। প্রতি ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে প্রায় ৪০০-৫০০ ক্যালোরি থাকে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে পনির খেলে ওজন বাড়তে পারে। 

তবে, পনির একটি পুষ্টিকর খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান রয়েছে। প্রোটিন ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে এবং পেটকে দীর্ঘ সময় ধরে ভরিয়ে রাখে। তাই পনির পরিমিত পরিমাণে খেলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা কম। 

আরো পড়ুন: মোটা হওয়ার সহজ উপায় কী? চলুন জেনে নেই

পনির খেলে ওজন বাড়া রোধ করার জন্য নিম্নলিখিত টিপসগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে: পনিরের পরিমাণ সীমিত করুন। প্রতিদিন ১০০-২০০ গ্রাম পনির খাওয়া যথেষ্ট। পনিরকে অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবারের সাথে মিশিয়ে খান, যেমন ফল, শাকসবজি, বা বাদাম। 

পনির রান্না করার সময় কম তেল বা চর্বি ব্যবহার করুন। যারা ওজন কমাতে চান তারা পনিরের পরিবর্তে অন্যান্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন মাছ, মাংস, বা ডাল খেতে পারেন।

পনির এর দাম কত

পনিরের দাম নির্ভর করে পনিরের ধরন, মানের উপর। সাধারণত, ফ্রিজে রাখা পনিরের দাম বেশি এবং তাজা পনিরের দাম কম। বাংলাদেশে, বিভিন্ন ধরণের পনির পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে: মোজারেলা পনির: মোজারেলা পনির একটি নরম পনির যা পিজ্জা, স্যান্ডউইচ, সালাদ ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়। মোজারেলা পনিরের দাম প্রতি কেজি ১৫০-২০০ টাকা। 

চেডার পনির: চেডার পনির একটি কঠিন পনির যা বিভিন্ন খাবারে ব্যবহৃত হয়। চেডার পনিরের দাম প্রতি কেজি ৩০০-৪০০ টাকা। ফেটা পনির: ফেটা পনির একটি শুকনো পনির যা সালাদে, সালাদ ড্রেসিংয়ে, বা স্যুপে ব্যবহৃত হয়। ফেটা পনিরের দাম প্রতি কেজি ২০০-২৫০ টাকা। 

পার্মেসান পনির: পার্মেসান পনির একটি কঠিন পনির যা বিভিন্ন খাবারে ব্যবহৃত হয়। পার্মেসান পনিরের দাম প্রতি কেজি ৫০০-৬০০ টাকা। বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরের বাজারে পনিরের দাম নিম্নরূপ: ঢাকা: মোজারেলা পনির: প্রতি কেজি ১৫০-২০০ টাকা, চেডার পনির: প্রতি কেজি ৩০০-৪০০ টাকা, ফেটা পনির: প্রতি কেজি ২০০-২৫০ টাকা, পার্মেসান পনির: 

প্রতি কেজি ৫০০-৬০০ টাকা। চট্টগ্রাম: মোজারেলা পনির: প্রতি কেজি ১৬০-২০০ টাকা, চেডার পনির: প্রতি কেজি ৩২০-৪২০ টাকা, ফেটা পনির: প্রতি কেজি ২২০-২৭০ টাকা, পার্মেসান পনির: প্রতি কেজি ৫২০-৬২০ টাকা। রাজশাহী: মোজারেলা পনির: প্রতি কেজি ১৪০-১৮০ টাকা, চেডার পনির: 

প্রতি কেজি ২৮০-৩৬০ টাকা, ফেটা পনির: প্রতি কেজি ১৮০-২৩০ টাকা, পার্মেসান পনির: প্রতি কেজি ৪৮০-৫৮০ টাকা। পনির কেনার সময় পনিরের উৎপাদন তারিখ এবং এক্সপায়ারি ডেট পরীক্ষা করে নিন। পনিরের গায়ে যদি কোনও ছত্রাক বা দাগ দেখা যায়, তাহলে তা খাওয়া উচিত নয়।

পনির কিভাবে তৈরি হয়

পনির তৈরির প্রক্রিয়াটি সাধারণত নিম্নরূপ:

দুধের প্রক্রিয়াকরণ: প্রথমে দুধকে গরম করে জীবাণুমুক্ত করা হয়। তারপর দুধের তাপমাত্রা ৮০-৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উত্তপ্ত করা হয়। এতে দুধের প্রোটিন কেসিন জমাট বাঁধতে শুরু করে। জমাট বাঁধা: দুধের তাপমাত্রা কমিয়ে ৫০-৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত আনলে কেসিন সম্পূর্ণরূপে জমাট বাঁধে। জমাট বাঁধা দুধকে "রাঁজ" বলা হয়। ছানা তৈরি: রাঁজকে একটি সুতির কাপড়ে চেপে ছানা তৈরি করা হয়।

ছানা থেকে তরল পদার্থ বেরিয়ে যায় এবং ছানা শক্ত হয়ে যায়। পনির তৈরি: ছানাকে চাপ দিয়ে পানি বের করে দেওয়া হয়। তারপর ছানাকে বিভিন্ন আকারে কেটে নেওয়া হয় এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে পনিরের ধরন নির্ধারণ করা হয়। পনির সংরক্ষণ: পনিরকে ফ্রিজে বা ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করা হয়।

আরো পড়ুন: ছোলা বুট ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

পনির তৈরির প্রক্রিয়াটি বিভিন্ন ধরণের পনিরের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু পনির তৈরির সময় রেনেট নামক একটি এনজাইম ব্যবহার করা হয়। রেনেট কেসিন জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। আবার, কিছু পনির তৈরির সময় ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়। 

ব্যাকটেরিয়া পনিরের স্বাদ এবং গন্ধ উন্নত করতে সাহায্য করে। পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরণের পনির রয়েছে। এই পনিরগুলির ধরন, স্বাদ এবং গন্ধ তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে।

পনিরের পুষ্টি উপাদান

পনির একটি পুষ্টিকর খাবার। এতে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান রয়েছে। প্রোটিন: পনির একটি ভালো প্রোটিন উৎস। ১০০ গ্রাম পনিরে প্রায় ১৮ গ্রাম প্রোটিন থাকে। প্রোটিন শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় একটি পুষ্টি উপাদান। এটি শরীরের কোষ, টিস্যু এবং পেশী তৈরি করতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম: পনির একটি ভালো ক্যালসিয়াম উৎস। 

১০০ গ্রাম পনিরে প্রায় ১,০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। ক্যালসিয়াম হাড় এবং দাঁত শক্ত রাখতে সাহায্য করে। ফসফরাস: পনির একটি ভালো ফসফরাস উৎস। ১০০ গ্রাম পনিরে প্রায় ৭০০ মিলিগ্রাম ফসফরাস থাকে। ফসফরাস হাড়, দাঁত, কোষ এবং কোষের ঝিল্লি তৈরি করতে সাহায্য করে। ভিটামিন: পনির ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি এর একটি ভালো উৎস। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স শক্তি উৎপাদন, স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং রক্ত ​​কোষের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

আরো পড়ুন: নিমের পাতার উপকার ও ব্যবহার

ভিটামিন এ দৃষ্টি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ডি হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য খনিজ উপাদান: পনির অন্যান্য খনিজ উপাদানেরও একটি ভালো উৎস, যেমন: জিঙ্ক: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ম্যাগনেসিয়াম: শক্তি উৎপাদন, পেশী এবং স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেলেনিয়াম: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, থাইরয়েডের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পনিরের পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ বিভিন্ন ধরণের পনিরের উপর নির্ভর করে।

উদাহরণস্বরূপ, কঠিন পনিরগুলি নরম পনিরের তুলনায় বেশি ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ। পনির একটি স্বাস্থ্যকর খাবার হতে পারে, তবে এটি পরিমিতভাবে খাওয়া উচিত। পনিরে চর্বি এবং সোডিয়াম থাকতে পারে, তাই অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

পনির ও মাখনের পার্থক্য

পনির এবং মাখন উভয়ই দুধ থেকে তৈরি হয়, তবে তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং পুষ্টি উপাদানগুলির মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। উৎপাদন প্রক্রিয়া পনির তৈরির জন্য দুধকে গরম করে জীবাণুমুক্ত করা হয়। তারপর দুধের তাপমাত্রা ৮০-৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উত্তপ্ত করা হয়। এতে দুধের প্রোটিন কেসিন জমাট বাঁধতে শুরু করে। জমাট বাঁধা দুধকে "রাঁজ" বলা হয়। রাঁজকে একটি সুতির কাপড়ে চেপে ছানা তৈরি করা হয়। ছানা থেকে তরল পদার্থ বেরিয়ে যায় এবং ছানা শক্ত হয়ে যায়।

ছানাকে চাপ দিয়ে পানি বের করে দেওয়া হয়। তারপর ছানাকে বিভিন্ন আকারে কেটে নেওয়া হয় এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে পনিরের ধরন নির্ধারণ করা হয়। মাখন তৈরির জন্য দুধকে ঘন করে সর তৈরি করা হয়। সরকে ঘন ঘন নাড়তে থাকে এবং তাপমাত্রা বাড়ানো হয়। সর গলে গেলে এবং মাখনের দানা তৈরি হলে তাপমাত্রা কমিয়ে মাখনকে জমাট বাঁধা হয়। 

তারপর মাখনকে পানিতে ধুয়ে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। পুষ্টি উপাদান পনির একটি পুষ্টিকর খাবার। এতে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান রয়েছে। ১০০ গ্রাম পনিরে প্রায় ১৮ গ্রাম প্রোটিন, ১,০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৭০০ মিলিগ্রাম ফসফরাস থাকে।

আরো পড়ুন: তুলসীর উপকারিতা ও ব্যবহার

মাখন একটি চর্বিযুক্ত খাবার। ১০০ গ্রাম মাখনিতে প্রায় ৮২ গ্রাম চর্বি, ১০ গ্রাম প্রোটিন এবং ০.৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে। মাখনিতে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং অন্যান্য খনিজ উপাদানের পরিমাণ খুব কম। স্বাদ এবং গন্ধ পনিরের স্বাদ এবং গন্ধ বিভিন্ন ধরণের পনিরের উপর নির্ভর করে। 

কিছু পনির নরম এবং মিষ্টি স্বাদের হয়, আবার কিছু পনির কঠিন এবং ঝাঁঝালো স্বাদের হয়। পনিরের গন্ধেও বিভিন্নতা রয়েছে। কিছু পনিরের গন্ধ হালকা হয়, আবার কিছু পনিরের গন্ধ তীব্র হয়। মাখনের স্বাদ এবং গন্ধ সাধারণত নরম এবং মিষ্টি হয়। মাখনের গন্ধে দুধের স্বাদ এবং গন্ধ থাকে। ব্যবহার পনির বিভিন্ন ধরণের খাবারে ব্যবহার করা হয়। 

এটি সালাদ, স্যান্ডউইচ, পিৎজা, পাস্তা, স্যুপ এবং অন্যান্য খাবারের উপর ব্যবহার করা হয়। পনিরকে কাঁচা, রান্না করা বা ভেজে খাওয়া যায়। মাখন বিভিন্ন ধরণের খাবারে ব্যবহার করা হয়। এটি রান্নায়, বেকিংয়ে এবং অন্যান্য খাবারের উপর ব্যবহার করা হয়। মাখনকে কাঁচা, রান্না করা বা ভেজে খাওয়া যায়।

পনির কোথায় পাওয়া যায়

পনির বিভিন্ন ধরণের দোকানে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে, পনির সাধারণত নিম্নলিখিত স্থানে পাওয়া যায়: সুপারমার্কেট: সুপারমার্কেটে বিভিন্ন ধরণের পনির পাওয়া যায়। এগুলি সাধারণত প্যাকেটজাত অবস্থায় বিক্রি হয়। খাবারের দোকান: খাবারের দোকানে বিভিন্ন ধরণের পনির পাওয়া যায়। 

এগুলি সাধারণত খোলা অবস্থায় বিক্রি হয়। গ্রামীণ এলাকা: গ্রামীণ এলাকায়, পনির সাধারণত স্থানীয়ভাবে তৈরি হয়। এগুলি সাধারণত বাজারে বা দোকানে বিক্রি হয়। বাংলাদেশে, পনিরের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল মোজারেলা, চেডার, এবং পার্মেসান পনির। এছাড়াও, বিভিন্ন ধরনের দেশি পনির পাওয়া যায়, যেমন অষ্টগ্রামের পনির, বাগেরহাটের পনির, এবং রাজশাহীর পনির। 

পনির কেনার সময় পনিরের উৎপাদন তারিখ এবং এক্সপায়ারি ডেট পরীক্ষা করে নিন। পনিরের গায়ে যদি কোনও ছত্রাক বা দাগ দেখা যায়, তাহলে তা খাওয়া উচিত নয়। পনির সংরক্ষণের জন্য এটিকে ফ্রিজে বা ঠান্ডা জায়গায় রাখুন। 

উপসংহার

পনির এবং মাখন উভয়ই দুধ থেকে তৈরি হয়, তবে তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং পুষ্টি উপাদানগুলির মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। পনির একটি পুষ্টিকর খাবার, তবে এতে চর্বি এবং সোডিয়াম থাকতে পারে। মাখন একটি চর্বিযুক্ত খাবার, তবে এতে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের পরিমাণ খুব কম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন