রক্তে উচ্চ শর্করা উপস্থিতির ১০ টি লক্ষণ

রক্তে গ্লুকোজ কমে গেলে তাকে কি বলে রক্তে যাতে শর্করার মাত্রা না কমে সেজন্য উপায় হল নিয়মিত পুষ্টিগুণে ভরপুর খাবার খাওয়া। প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের মধ্যে থাকতে হবে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং ‘কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেইট।রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেলে ক্ষুধাবোধ হওয়ার পাশাপাশি মেজাজ খারাপসহ নানান রকম লক্ষণ দেখা দেয়। আর ডায়াবেটিসের সমস্যা না থাকার পরও এই সমস্যা হতে পারে। রক্তে শর্করার স্বাভাবিক পরিমাণ কত

রক্তে গ্লুকোজ কমে গেলে তাকে কি বলে

আমাদের শরীরের অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন তৈরি করে। একটি স্বাভাবিক শরীর রক্তে উচ্চ শর্করা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন করে। একজন ডায়াবেটিক ব্যক্তির রক্তে শর্করার উচ্চ মাত্রা শরীর দ্বারা নিজে নিজে নিয়ন্ত্রিত হয় না এবং কমে না। এই উচ্চ শর্করার মাত্রা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ এবং কোষের উপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে।

রক্তে উচ্চ শর্করা উপস্থিতির ১০ টি লক্ষণ

রক্তে উচ্চ শর্করার উপস্থিতির ১০ টি লক্ষণ হল:

  • ঘন ঘন প্রস্রাব: রক্তে উচ্চ শর্করার উপস্থিতি কিডনিকে অতিরিক্ত পরিমাণে কাজ করতে বাধ্য করে, ফলে শরীর থেকে অতিরিক্ত তরল বেরিয়ে যায়। এর ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়।
  • অতিরিক্ত তৃষ্ণা: রক্তে উচ্চ শর্করার উপস্থিতি শরীরকে পানি হারাতে বাধ্য করে। এর ফলে অতিরিক্ত তৃষ্ণা হয়।
  • অতিরিক্ত ক্ষুধা: রক্তে উচ্চ শর্করার উপস্থিতি শরীরকে শক্তির জন্য আরও বেশি কার্বোহাইড্রেট ভেঙে ফেলতে বাধ্য করে। এর ফলে অতিরিক্ত ক্ষুধা হয়।
  • ওজন হ্রাস: রক্তে উচ্চ শর্করার উপস্থিতি শরীরের শক্তির জন্য প্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেট ব্যবহার করতে বাধা দেয়। এর ফলে ওজন হ্রাস হতে পারে।
  • ঝাপসা দৃষ্টি: রক্তে উচ্চ শর্করার উপস্থিতি চোখের লেন্সে তরলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। এর ফলে ঝাপসা দৃষ্টি হতে পারে।
  • ক্ষত নিরাময়ের ধীরগতি: রক্তে উচ্চ শর্করার উপস্থিতি ক্ষত নিরাময়ের প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়।
  • যৌন ক্ষমতা হ্রাস: রক্তে উচ্চ শর্করার উপস্থিতি যৌন ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে।
  • মানসিক পরিবর্তন: রক্তে উচ্চ শর্করার উপস্থিতি মানসিক পরিবর্তন, যেমন উদ্বেগ, হতাশা এবং বিভ্রান্তি হতে পারে।
  • শরীরে ব্যথা: রক্তে উচ্চ শর্করার উপস্থিতি শরীরে ব্যথা হতে পারে।
  • উল্লেখ্য যে, এই লক্ষণগুলি সবসময়ই রক্তে উচ্চ শর্করার উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয় না। তবে, যদি আপনি এই লক্ষণগুলির মধ্যে কোনওটি অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

আরো পড়ুন: মাথা ব্যাথা – কেন হয়? বিভিন্ন ধরণ ও করণীয় কি কি

  • রক্তে উচ্চ শর্করার উপস্থিতি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি ডায়াবেটিস নামে পরিচিত। ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তাহলে এটি অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন কিডনি রোগ, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং অন্ধত্ব।
  • রক্তে উচ্চ শর্করার উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করুন:
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, ফলমূল, ওটস, গম, বাজরা, কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখী বীজ ইত্যাদি।
  • নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদি ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা: অতিরিক্ত ওজন রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • ধূমপান ছেড়ে দেওয়া: ধূমপান রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। তাই ধূমপান ছেড়ে দিন।
  • নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করা: নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পদক্ষেপ নিন।

রক্তে শর্করার পরিমাণ কমানোর উপায়

রক্তে শর্করার পরিমাণ কমানোর জন্য কিছু উপায় এবং পরামর্শ নিতে হতে পারে:
আপনার খাদ্য পদার্থ নিরীক্ষণ করুন: শর্করা বেশি থাকতে পারে বৃষ্টির, খাদ্যাদির মধ্যে। অনেক খাদ্য পদার্থে মিষ্টি, বাটাসা, রস, হলুদ, গুড়ি ইত্যাদি যোগ করা থাকে যা অতিরিক্ত শর্করা যোগ করতে পারে। তাই, খাদ্য লেবেল পড়ে তাতে কত পরিমাণে শর্করা আছে তা দেখুন এবং সুস্থ পরিমাণের মধ্যে থাকার চেষ্টা করুন।

স্বাস্থ্যকর খাবার পরিস্থিতি মেনে চলুন: প্রচুর প্রমাণে প্রস্তুত ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যাদি এবং বৃহত্তর পরিমাণে মিষ্টির খাবার এড়িয়ে শক্তি বৃদ্ধি করতে হতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাবার এবং প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার, ওমেগা-৩ ফ্যাট, ফল, সবজি ইত্যাদি মেনে চলুন।

খাওয়ার পর সাবধানে সংযোজন করুন: ভারী খাবার বা মিষ্টির পরে প্রোটিন যুক্ত খাদ্য বা উচ্চ ফাইবার সাবধানে খাওয়া যেতে পারে, কারণ এগুলি শর্করা অণুর উপাদানের প্রসারে সাহায্য করতে পারে।

পর্যাপ্ত পানি পান: পর্যাপ্ত পানি পান খুব গুরুত্বপূর্ণ। পানি শর্করার অণুকে অস্তিত্ব দেয় এবং শর্করা বাহক হিসেবে কাজ করতে সাহায্য করে।

আপনার কার্ডিওভাসকুলার কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ব্যায়াম করুন: নিয়মিত ব্যায়াম করা শর্করার স্তরকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে এবং প্রতিবার খাওয়ার পরে কিছু হালকা ব্যায়াম করতে এটি ইষ্টেমাল করা যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন: আপনি একজন চিকিৎসকে সাধারিত চেকআপ এবং পরামর্শের জন্য দেখতে চান। একজন বৈদ্যুতিন বা পুষ্টিবিদের সাথে কথা বলতে হতে পারে শর্করার নিয়ন্ত্রণ এবং ম্যানেজমেন্টের জন্য।

এই সকল উপায়ে আপনি আপনার রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে সাহায্য পাতে পারেন। তবে, এই সারমর্মে কাজ করতে আগেই চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা গুরুত্বপূর্ণ।

রক্তে শর্করার স্বাভাবিক পরিমাণ কত

রক্তে শর্করার স্বাভাবিক পরিমাণ বয়স, লিঙ্গ এবং খাদ্য গ্রহণের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, রক্তে শর্করার স্বাভাবিক পরিমাণ নিম্নরূপ:

  • ফাস্টিং ব্লাড সুগার (FBS): ৮ ঘন্টা উপোস করার পর রক্তের শর্করার মাত্রা ৭০ থেকে ১০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (mg/dL) এর মধ্যে থাকা উচিত।
  • পোস্টপ্যারানডিয়াল ব্লাড সুগার (PPBS): খাওয়ার ২ ঘন্টা পর রক্তের শর্করার মাত্রা ১৪০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার এর বেশি হওয়া উচিত নয়।

আরো পড়ুন: অতিরিক্ত ওজন কমানোর সহজ উপায়

  • উল্লেখ্য যে, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রক্তে শর্করার স্বাভাবিক পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাদের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
  • রক্তে শর্করার মাত্রা যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে তা ডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে। ডায়াবেটিস একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। তাই রক্তে শর্করার মাত্রা যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে কি রোগ হয়

রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস নামক একটি রোগ হতে পারে। ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা শরীরের ইনসুলিন উৎপাদন বা ইনসুলিনের কার্যকারিতা ব্যাহত করে। ইনসুলিন একটি হরমোন যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিসের দুইটি প্রধান ধরন রয়েছে: টাইপ ১ ডায়াবেটিস: এই ধরণের ডায়াবেটিস অটোইমিউন রোগের কারণে হয়। এই রোগে শরীরের ইমিউন সিস্টেম ভুলবশত ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলিকে ধ্বংস করে দেয়।

টাইপ ২ ডায়াবেটিস: এই ধরণের ডায়াবেটিস সাধারণত অত্যধিক ওজন বা অতিরিক্ত ওজনের কারণে হয়। এই রোগে শরীর ইনসুলিনের প্রতি কম সংবেদনশীল হয়ে পড়ে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে এটি বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন: কিডনি রোগ: ডায়াবেটিস কিডনিতে ক্ষতি করতে পারে এবং কিডনি ফেইলিউরের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

  • হার্ট অ্যাটাক: ডায়াবেটিস হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • স্ট্রোক: ডায়াবেটিস স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • অন্ধত্ব: ডায়াবেটিস চোখের ক্ষতি করতে পারে এবং অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
  • নিউরোপ্যাথি: ডায়াবেটিস স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যথা, সংবেদনশীলতা হ্রাস এবং অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজিজ: ডায়াবেটিস পায়ের রক্তনালীগুলিকে ক্ষতি করতে পারে এবং পায়ের ক্ষত, আলসার এবং কেটে যাওয়ার ক্ষত সারতে দেরি করতে পারে।

আরো পড়ুন: হার্ট ভালো রাখার জন্য কি খাওয়া দরকার ও হার্টের ঔষধের নাম জানুন

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, ফলমূল, ওটস, গম, বাজরা, কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখী বীজ ইত্যাদি।

নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদি ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা: অতিরিক্ত ওজন রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

ধূমপান ছেড়ে দেওয়া: ধূমপান রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। তাই ধূমপান ছেড়ে দিন। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করা: নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পদক্ষেপ নিন। ডায়াবেটিস রোগীদের ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা উচিত।

রক্তে শর্করা কমে গেলে কি হয়

রক্তে গ্লুকোজ কমে যেতে থাকলে হাত বা শরীর কাঁপা, বুক ধড়ফড়, ঘামতে থাকা, অস্থির লাগা, মেজাজ খারাপ হওয়া, চোখ ঝাপসা হয়ে আসা, মাথাব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ শুরু হয়। যদি দ্রুত গ্লুকোজ না গ্রহণ করা হয়, তবে মস্তিষ্কে শর্করা 

কমে যেতে থাকে আর রোগী ভুল, অসংলগ্ন কথা বলতে থাকেন, অর্ধচেতন বা অচেতন হয়ে পড়েন।রক্তে শর্করা কমে গেলে এটি হতে পারে একটি সময়গুলির সমস্যা বা রোগের সঙ্গে সংযোজিত হতে পারে। এটি অনেকগুলি কারণে হতে পারে, তাদের মধ্যে কিছু হলো:

ডায়াবিটিস (Diabetes): ডায়াবিটিস হলে, শরীর শক্তি উৎপন্ন করতে পারতে না পারে অথবা শরীর প্রসারিত শর্করা ব্যবহার করতে সক্ষম না হতে পারে, যা শর্করার কমতি উৎপন্ন করতে বা প্রসারিত শর্করার মাত্রা কমাতে ভারী দায়িত্ব প্রদান করতে পারে।

আরো পড়ুন: হার্ট অ্যাটাকের কারন ও প্রতিকার

থাইরয়েইড সমস্যা (Thyroid Disorders): থাইরয়েইড অস্তির হলে, থাইরয়েইড হরমোন এবং অন্যান্য হরমোনের সমস্যা উত্পন্ন হতে পারে যা রক্তে শর্করা মেটাবলিজমেন্ট এবং বিনিয়োগে প্রভাবিত করতে পারে।

কিডনি সমস্যা (Kidney Disorders): কিডনির অসুস্থতা রক্তে শর্করা নির্ভর হতে পারে এবং কিডনি সমস্যা হলে রক্তে শর্করার উচ্চ মাত্রা বা কম মাত্রা হতে পারে।

অজ্ঞানে অলক্ষণীয় রক্ত হারিয়ে যাওয়া (Unintentional Weight Loss): কিছু মেডিকেল সমস্যার কারণে রক্তে শর্করা কমে যেতে পারে, যা অজ্ঞানে অলক্ষণীয় ওজন হারিয়ে যাওয়ার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।

আটিক্যাল ক্যালোরি গোলাপ (Malnutrition): অপুষ্টি বা খাদ্যের অসঠিক উপভোগের কারণে শর্করা কমে যেতে পারে। এই সমস্যাগুলির জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি এই ধরনের সমস্যার সামী হন, তবে তা উল্লেখযোগ্য হবে যে, আপনি তারাতারি একজন চিকিৎসকে দেখতে বলতে হবে এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

রক্তে শর্করা বেড়ে গেলে কি হয়

মার্শেজ বলেন, “রক্তে অতিরিক্ত শর্করা শরীরের সংবেদনশীল টিস্যু যেমন- রক্তনালী, স্নায়ুকোষ ইত্যাদির ক্ষতি করে। হৃদরোগ, বৃক্ক নষ্ট হওয়া, দৃষ্টিশক্তি লোপ পাওয়া, 'নিউরোপ্যাথি', দাঁত ও মাড়ির সমস্যা, হাড় ও হাড়ের জোড়ের সমস্যা এসব কিছুর পেছনেই নীরবে কলকাঠি নাড়ে রক্তে থাকা অতিরিক্ত শর্করা।”রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে হঠাৎ দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যেতে পারে। 

চিকিৎসকেরা বলছেন, রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে তা রেটিনার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত রক্তজালিকাগুলির ক্ষতি করে। ফলে দেখতে সমস্যা হয়। চিকিৎসা পরিভাষায় একে 'ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি' বলা হয়।

বার বার প্রস্রাবের বেগ সারা দিন কাজের মধ্যে থেকে জল খেতে ভুলে যান অনেকেই। কিন্তু তার পরও যদি দু’মিনিট অন্তর প্রস্রাবের বেগ আসে তখন অবশ্য সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এমন লক্ষণ কিন্তু রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে হতে পারে।

গলা শুকিয়ে যাওয়া গরমকালে এমনিতেই তেষ্টা বেশি থাকে। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেয়েও যদি সব সময়ে গলা শুকিয়ে থাকে, তা হলে বুঝতে হবে রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি।

ক্লান্তি বার বার প্রস্রাবের ফলে শরীর থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে শর্করা এবং বিভিন্ন খনিজ বেরিয়ে গেলে ক্লান্ত লাগা স্বাভাবিক। ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হলে প্রস্রাবের পরিমাণও বেড়ে যায়।

রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে গেলে কি রোগ হয়

রক্তে গ্লুকোজ বা সুগারের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কমে গেলে তাকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলা হয়। অনেকে একে সংক্ষেপে 'হাইপো' হিসেবে চেনেন। মূলত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের, বিশেষ করে ইনসুলিন নিতে হয় এমন রোগীদের, হাইপোগ্লাইসেমিয়া দেখা দেয়।

আরো পড়ুন: অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

হাইপোগ্লাইসিমিয়া (ইংরেজি: hypoglycemia) বা রক্তশর্করাস্বল্পতা হলো এমন একটি অবস্থা যখন রক্তের শর্করা মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়, সাধারণত ৩.৯ mmol/L (৭০ mg/dL)- এর কম। রক্তশর্করাস্বল্পতার ঘটনা যথাযথভাবে শনাক্ত করার জন্য হুইপলের ত্রয়ী নীতির ব্যবহার করা হয়।

সময়মতো চিকিৎসা শুরু না করলে আরও কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন

দুর্বলতা
দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া
কাজে মনোযোগ দিতে কষ্ট হওয়া
বিভ্রান্তি
অসংলগ্ন আচরণ, কথা জড়িয়ে যাওয়া ও ভারসাম্যহীন হয়ে পড়া (মাতাল হলে যেমনটা হয়)
ঘুম ঘুম লাগা
খিঁচুনি
জ্ঞান হারিয়ে ফেলা বা ফিট হয়ে যাওয়া

রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে কে

রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে প্রধানত দুটি হরমোন: গ্লুকাগন এবং কর্টিসল। গ্লুকাগন হল অগ্ন্যাশয়ের আলফা কোষ দ্বারা উৎপাদিত একটি হরমোন। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়। গ্লুকাগন নিঃসৃত হয় যখন শরীরের শক্তির চাহিদা বেশি থাকে, যেমন খাওয়ার পর বা শরীরের শক্তির স্তর কমে গেলে।

কর্টিসল হল অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি দ্বারা উৎপাদিত একটি স্টেরয়েড হরমোন। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়। কর্টিসল নিঃসৃত হয় যখন শরীর চাপের মধ্যে থাকে। অন্যান্য কিছু কারণও রয়েছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে, যেমন: খাদ্য: শর্করা এবং কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে।

অতিরিক্ত ওজন: অতিরিক্ত ওজন বাস্থুলতা রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। অ্যাক্টিভিটি স্তর: শারীরিক পরিশ্রম কমে গেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। অসুস্থতা: কিছু অসুস্থতা, যেমন ইনফেকশন, রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি বা খুব কম হলে তা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।

রক্তে গ্লুকোজ কমে গেলে তাকে কি বলে

রক্তে গ্লুকোজ কমে গেলে তাকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলে। এটি একটি মেডিকেল জরুরি অবস্থা যাতে শরীরের কোষগুলি পর্যাপ্ত শক্তি পায় না। হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে মাথা ঘোরা, কাঁপুনি, ঘাম, ঝাপসা দৃষ্টি, অস্বস্তি, দুর্বলতা, খিঁচুনি এবং এমনকি অজ্ঞানতা হতে পারে।

  • রক্তে গ্লুকোজ কমে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
  • ইনসুলিন বা ইনসুলিন-উৎপাদনকারী ওষুধের অতিরিক্ত ডোজ গ্রহণ
  • পর্যাপ্ত খাবার না খাওয়া বা অতিরিক্ত ব্যায়াম করা
  • অ্যালকোহল সেবন
  • কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
  • ডায়াবেটিস রোগীদের হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। কারণ তারা তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ইনসুলিন বা অন্যান্য ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন।

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণগুলি দেখা দিলে দ্রুত চিনিযুক্ত খাবার বা পানীয় গ্রহণ করা জরুরি। এছাড়াও, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রতিরোধের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, যেমন:

  • নিয়মিত রক্তের শর্করা পরীক্ষা করা
  • নির্ধারিত সময়ে খাবার খাওয়া
  • ব্যায়ামের আগে এবং পরে অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া
  • অ্যালকোহল সেবনের পরিমাণ সীমিত করা
  • হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণগুলি দেখা দিলে এবং চিনিযুক্ত খাবার বা পানীয় গ্রহণের পরেও লক্ষণগুলি না কমলে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরল

রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরল হল একটি স্বাস্থ্য সমস্যা যাতে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেশি থাকে। কোলেস্টেরল হল একটি চর্বি জাতীয় পদার্থ যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। তবে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল হৃদরোগ, স্ট্রোক, ধমনী সংকোচন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।

রক্তে কোলেস্টেরলের তিনটি প্রধান ধরন রয়েছে:

  • লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (LDL): LDL কোলেস্টেরলকে "খারাপ" কোলেস্টেরল বলা হয়। এটি ধমনীর দেয়ালে জমা হতে পারে, যা রক্ত ​​প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
  • হাই-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (HDL): HDL কোলেস্টেরলকে "ভালো" কোলেস্টেরল বলা হয়। এটি LDL কোলেস্টেরলকে ধমনী থেকে অপসারণে সাহায্য করে।
  • ট্রাইগ্লিসারাইডস: ট্রাইগ্লিসারাইডস হল আরেক ধরণের চর্বি যা রক্ত ​​প্রবাহে পাওয়া যায়। অতিরিক্ত ট্রাইগ্লিসারাইডসও হৃদরোগ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।

রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণগুলি:

বংশগত কারণ: কিছু লোকের জিনগতভাবে উচ্চ কোলেস্টেরলের ঝুঁকি থাকে। অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিস LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় এবং HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।

অল্প শারীরিক কার্যকলাপ: শারীরিক কার্যকলাপ LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। ধূমপান: ধূমপান LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় এবং HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। অ্যালকোহল পান: অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়।

আরো পড়ুন: মানসিক টেনশন দূর করার কিছু উপায়

কিছু ওষুধ: কিছু ওষুধ, যেমন স্টেরয়েড এবং কিছু হরমোন থেরাপি, LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে।

রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরলের লক্ষণগুলি:

রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরলের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণ থাকে না। যাইহোক, কিছু ক্ষেত্রে, উচ্চ কোলেস্টেরল নিম্নলিখিত লক্ষণগুলির কারণ হতে পারে:
  • পিঠে ব্যথা
  • হৃদস্পন্দন
  • শ্বাসকষ্ট
  • পায়ে ব্যথা

রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরলের চিকিৎসা:

রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরলের চিকিৎসার লক্ষ্য হল LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো এবং HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ানো। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:

স্বাস্থ্যকর জীবনধারা পরিবর্তন: স্বাস্থ্যকর জীবনধারা পরিবর্তন, যেমন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, ওজন নিয়ন্ত্রণ করা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা, রক্ত ​​কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ওষুধ: যদি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা পরিবর্তনগুলি যথেষ্ট না হয় তবে ডাক্তার ওষুধ লিখে দিতে পারেন। ওষুধগুলি LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় বা উভয়ই করে।

রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরলের প্রতিরোধ:

রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরলের ঝুঁকি কমাতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে: স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া: স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, যেমন ফল, সবজি, whole grains এবং lean protein, রক্ত ​​কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন