ইলিশ মাছ – পুষ্টিগুণ ও পদ্মার ইলিশ চেনার উপায়
ইলিশ মাছের বৈজ্ঞানিক নাম ইলিশের প্রতি বাঙালির ভালোবাসা তুলনাহীন। বর্ষায় ইলিশ ভাজা, ইলিশের ভর্তা, শর্ষে ইলিশ, ভাপা ইলিশ, ইলিশ পাতুরি, দই ইলিশ, পান্তা ইলিশ, ইলিশের ডিম ছাড়া যেন বাঙালির রসনায় তৃপ্তি আসে না। ইলিশ মাছ স্বাদে যেমন অতুলনীয়, তেমনি পুষ্টি উপাদানেও ভরপুর।চলছে ইলিশের মৌসুম। বছরের অন্যান্য সময় না হলেও এসময় সবাই ইলিশ কেনার চেষ্টা করেন। বাংলাদেশে দুই ধরনের ইলিশ পাওয়া যায়। নদী আর সাগরের। ইলিশ মাছ চেনার উপায়
মাছে-ভাতে বাঙালির অন্যতম প্রিয় খাদ্য হলো মাছ। আর এই মাছের মধ্যে ইলিশ মাছ হলো বাঙলির সবচেয়ে প্রিয় খাদ্য। শুধু জাতীয় মাছ বলেই নয়, স্বাদে ও পুষ্টিগুণে ইলিশ অনন্য। এই মাছের স্বাদ অতুলনীয়। শুধু স্বাদই নয় পুষ্টিতেও এই মাছের রয়েছে অনেক অবদান। মানুষের পুষ্টির অনেকটা চাহিদাই পূরণ করে এই মাছ। এই মাছ বাঙালির সংস্কৃতির একটি অন্যতম অংশ।
ইলিশ মাছ – পুষ্টিগুণ ও পদ্মার ইলিশ চেনার উপায়
ইলিশ মাছ
ইলিশ মাছ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। এটি একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর মাছ। ইলিশ মাছ সাধারণত নদী ও সমুদ্রের মিশ্রিত জলে বাস করে। বর্ষা মৌসুমে ইলিশ মাছ নদীতে প্রজনন করতে আসে।
ইলিশ মাছের পুষ্টিগুণ
ইলিশ মাছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। ইলিশ মাছের পুষ্টিগুণগুলির মধ্যে রয়েছে:প্রোটিন: ইলিশ মাছে প্রায় ২৫% প্রোটিন থাকে। প্রোটিন শরীরের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: ইলিশ মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।ভিটামিন: ইলিশ মাছে ভিটামিন A, C, D, E এবং K থাকে। এই ভিটামিনগুলি দৃষ্টিশক্তি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, হাড়ের স্বাস্থ্য এবং রক্ত সঞ্চালনের জন্য প্রয়োজনীয়।মিনারেল:
আরো পড়ুন: অতিরিক্ত ওজন কমানোর সহজ উপায়
ইলিশ মাছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং জিঙ্ক থাকে। এই খনিজগুলি হাড়ের স্বাস্থ্য, রক্ত সঞ্চালন, স্নায়ুতন্ত্র এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য প্রয়োজনীয়।অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: ইলিশ মাছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরকে ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিকেলগুলির ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
পদ্মার ইলিশ চেনার উপায়
পদ্মার ইলিশ বাংলাদেশের সবচেয়ে সুস্বাদু ইলিশ মাছ। পদ্মার ইলিশ চেনার কিছু উপায় হল:
- রঙ: পদ্মার ইলিশের রঙ উজ্জ্বল রুপালি হয়।
- আকার: পদ্মার ইলিশের আকার সাধারণত ছোট হয়।
- চোখ: পদ্মার ইলিশের চোখ উজ্জ্বল এবং স্বচ্ছ হয়।
- কান: পদ্মার ইলিশের কান টকটকে লাল হয়।
- পেট: পদ্মার ইলিশের পেট মোটা এবং চওড়া হয়।
- মাথা: পদ্মার ইলিশের মাথা সরু হয়।
- ইলিশ মাছ কেনার সময় সতর্কতা
ইলিশ মাছ কেনার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:
ইলিশ মাছটি তাজা কিনা তা পরীক্ষা করুন। তাজা ইলিশ মাছের চোখ উজ্জ্বল এবং স্বচ্ছ হবে।ইলিশ মাছটি নরম কিনা তা পরীক্ষা করুন। নরম ইলিশ মাছ বাসি হতে পারে।ইলিশ মাছটিতে কোনো ক্ষত বা দাগ আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন। ক্ষত বা দাগযুক্ত ইলিশ মাছ খাওয়া স্বাস্থ্যকর নয়।ইলিশ মাছের রান্নার উপায় ইলিশ মাছ বিভিন্নভাবে রান্না করা যায়। ইলিশ মাছের কিছু জনপ্রিয় রান্নার উপায় হল:
- ইলিশ ভাজা
- ইলিশ মাছের ঝোল
- ইলিশ মাছের মালাইকারি
- ইলিশ মাছের চপ
- ইলিশ মাছের মাংস
ইলিশ মাছ একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর মাছ। নিয়মিত ইলিশ মাছ খেলে শরীর সুস্থ থাকে।
পদ্মার ইলিশ কোথায় পাওয়া যায়
পদ্মার ইলিশ প্রধানত বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা জেলার পদ্মার মোহনায় পাওয়া যায়। তবে, পদ্মা নদীর উজানে গঙ্গার অংশে কিছুটা ইলিশ পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন: অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও এটি খাওয়ার নিয়ম
পদ্মার ইলিশের প্রধান বাজার হলো চাঁদপুর। চাঁদপুরের মাছ ঘাট থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টন ইলিশ সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও, পদ্মার মোহনায় অবস্থিত নায়েরগাঁও, কান্দিপাড়া, লৌহজং, কাঁঠালবাড়ীয়া, রুদ্রপুর, পাংশা, ভাঙ্গা, মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে পদ্মার ইলিশ পাওয়া যায়।
পদ্মার ইলিশের স্বাদ অন্যান্য নদীর ইলিশের তুলনায় বেশি সুস্বাদু বলে মনে করা হয়। এর কারণ হলো পদ্মার পানিতে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ এবং খাদ্য উপাদান রয়েছে যা ইলিশের স্বাদকে উন্নত করে। এছাড়াও, পদ্মার পানিতে ইলিশের প্রধান খাবার প্ল্যাঙ্কটনের পরিমাণ বেশি।
পদ্মার ইলিশ সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়। এই সময়ের মধ্যে ইলিশের ডিম পাড়ার মৌসুম হয়। ডিম পাড়ার পর ইলিশের স্বাদ কমে যায়।
বরিশালের ইলিশ চেনার উপায়
বরিশালের ইলিশ বাংলাদেশের সবচেয়ে সুস্বাদু ইলিশ মাছগুলির মধ্যে একটি। বরিশালের ইলিশ চেনার কিছু উপায় হল:
- রঙ: বরিশালের ইলিশের রঙ উজ্জ্বল রুপালি হয়।
- আকার: বরিশালের ইলিশের আকার সাধারণত ছোট হয়।
- চোখ: বরিশালের ইলিশের চোখ উজ্জ্বল এবং স্বচ্ছ হয়।
- কান: বরিশালের ইলিশের কান টকটকে লাল হয়।
- পেট: বরিশালের ইলিশের পেট মোটা এবং চওড়া হয়।
- মাথা: বরিশালের ইলিশের মাথা সরু হয়।
এছাড়াও, বরিশালের ইলিশের শরীরে একটি বিশেষ ধরনের গন্ধ থাকে যা অন্যান্য ইলিশের তুলনায় বেশি সুগন্ধি। এই গন্ধটি ইলিশের শরীরে থাকা বিশেষ ধরনের চর্বি থেকে আসে। বরিশাল থেকে আসা ইলিশ সাধারণত চাঁদপুরের মাছ ঘাট দিয়ে বাংলাদেশে সরবরাহ করা হয়।
চাঁদপুরের মাছ ঘাট থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টন ইলিশ সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও, বরিশালের বিভিন্ন হাটবাজারে ইলিশ পাওয়া যায়। বরিশাল থেকে আসা ইলিশের স্বাদ অন্যান্য নদীর ইলিশের তুলনায় বেশি সুস্বাদু বলে মনে করা হয়। এর কারণ হলো বরিশালের পানিতে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ এবং খাদ্য উপাদান রয়েছে যা ইলিশের স্বাদকে উন্নত করে।
এছাড়াও, বরিশালের পানিতে ইলিশের প্রধান খাবার প্ল্যাঙ্কটনের পরিমাণ বেশি। বরিশাল থেকে আসা ইলিশ সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়। এই সময়ের মধ্যে ইলিশের ডিম পাড়ার মৌসুম হয়। ডিম পাড়ার পর ইলিশের স্বাদ কমে যায়।
বরিশাল থেকে আসা ইলিশ কেনার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:
- ইলিশ মাছটি তাজা কিনা তা পরীক্ষা করুন। তাজা ইলিশ মাছের চোখ উজ্জ্বল এবং স্বচ্ছ হবে।
- ইলিশ মাছটি নরম কিনা তা পরীক্ষা করুন। নরম ইলিশ মাছ বাসি হতে পারে।
- ইলিশ মাছটিতে কোনো ক্ষত বা দাগ আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন। ক্ষত বা দাগযুক্ত ইলিশ মাছ খাওয়া স্বাস্থ্যকর নয়।
বরিশাল থেকে আসা ইলিশ বিভিন্নভাবে রান্না করা যায়। ইলিশ মাছের কিছু জনপ্রিয় রান্নার উপায় হল:
- ইলিশ ভাজা
- ইলিশ মাছের ঝোল
- ইলিশ মাছের মালাইকারি
- ইলিশ মাছের চপ
- ইলিশ মাছের মাংস
- বরিশাল থেকে আসা ইলিশ একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর মাছ। নিয়মিত ইলিশ মাছ খেলে শরীর সুস্থ থাকে।
ইলিশ মাছের দাম ২০২৩
২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি তারিখ পর্যন্ত ইলিশ মাছের দাম
ছোট ইলিশ (৫০০-৭০০ গ্রাম): ৮০০-১২০০ টাকা/কেজি
মাঝারি ইলিশ (৭০০-১০০০ গ্রাম): ১৫০০-১৯০০ টাকা/কেজি
বড় ইলিশ (১০০০-১৫০০ গ্রাম): ২০০০-২৫০০ টাকা/কেজি
বিশেষ আকারের ইলিশ (২ কেজির উপরে): ২৫০০-উপর টাকা/কেজি
এই দামগুলি বাংলাদেশের বিভিন্ন বাজারে চলমান। তবে, বাজারভেদে দামের কিছুটা তারতম্য থাকতে পারে।
ইলিশ মাছের দাম বৃদ্ধির কারণ
ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়া।
ইলিশের চাহিদা বৃদ্ধি।
আন্তর্জাতিক বাজারে ইলিশের দাম বৃদ্ধি।
ইলিশ মাছের উৎপাদন কমে যাওয়া
আরো পড়ুন: মোটা হওয়ার সহজ উপায় কী? চলুন জেনে নেই
ইলিশ মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো পরিবেশগত সমস্যা। নদীর দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত মৎস্য আহরণের কারণে ইলিশের উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
ইলিশের চাহিদা বৃদ্ধি
ইলিশ মাছ একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর মাছ। এটি বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। তাই, বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইলিশের চাহিদা রয়েছে। এর ফলে ইলিশের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে ইলিশের দাম বৃদ্ধি
আন্তর্জাতিক বাজারে ইলিশের দাম বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশেও ইলিশের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ইলিশের দাম বৃদ্ধির কারণ হলো ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়া এবং চাহিদা বৃদ্ধি।
ইলিশ মাছের দাম কমানোর উপায়
ইলিশ মাছের দাম কমানোর জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:
ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
ইলিশের চাহিদা কমানো।
ইলিশের মজুদ ব্যবস্থাপনা উন্নত করা।
ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি
ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নদীর দূষণ দূর করা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করা এবং অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
ইলিশের চাহিদা কমানো
ইলিশের চাহিদা কমাতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। মানুষকে ইলিশের পাশাপাশি অন্যান্য মাছ ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করা যেতে পারে।
ইলিশের মজুদ ব্যবস্থাপনা উন্নত করা
ইলিশের মজুদ ব্যবস্থাপনা উন্নত করার জন্য ইলিশের প্রজনন মৌসুমে জেলেদের জাল ফেলার সময়সীমা নির্ধারণ করা যেতে পারে। এছাড়াও, ইলিশের প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
গঙ্গার ইলিশ
গঙ্গার ইলিশ হলো বাংলাদেশ এবং ভারতের একটি জনপ্রিয় মাছ। এটি একটি সামুদ্রিক মাছ হলেও ডিম ছাড়ার জন্য নদীতে আসে। গঙ্গার ইলিশের প্রধান উৎস হলো পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র এবং গঙ্গা নদী। গঙ্গার ইলিশের রঙ সাধারণত উজ্জ্বল রুপালি হয়। এর আকার ছোট থেকে বড় পর্যন্ত হতে পারে। গঙ্গার ইলিশের স্বাদ অতুলনীয়। এটি বিভিন্নভাবে রান্না করা যায়।
আরো পড়ুন: কোন পাশে কাত হয়ে ঘুমাবেন? পাশ পরিবর্তন করবেন কীভাবে?
গঙ্গার ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে এর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য নদীর দূষণ দূর করা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করা এবং অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
গঙ্গার ইলিশের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল:
ইলিশের গড় আয়ু প্রায় ১০ বছর।
ইলিশ প্রজনন মৌসুম ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত।
ইলিশের প্রধান খাবার প্ল্যাঙ্কটন।
ইলিশের মাংসে প্রায় ২১% প্রোটিন এবং ১৭% চর্বি থাকে।
গঙ্গার ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। এটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার।
ভারতে ইলিশ মাছের দাম
ভারতে ইলিশ মাছের দাম বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে। যেমন, ইলিশের আকার, মরশুম, সরবরাহ এবং চাহিদা। সাধারণত, ইলিশের আকার যত বড় হয়, দাম তত বেশি হয়। ইলিশের মরশুমে দাম কম থাকে, আর মরশুমের বাইরে দাম বেশি থাকে। সরবরাহ কম থাকলে দাম বেশি হয়, আর সরবরাহ বেশি থাকলে দাম কম থাকে। চাহিদা বেশি থাকলে দাম বেশি হয়, আর চাহিদা কম থাকলে দাম কম থাকে।
ভারতের বাজারে ইলিশের দাম সাধারণত প্রতি কেজি 1000 থেকে 2000 টাকার মধ্যে থাকে। 350 থেকে 400 গ্রামের ইলিশের প্রতি কেজিতে দাম 600 থেকে 700 টাকা। 500 থেকে 700 গ্রাম ওজনের ইলিশ রয়েছে 1000 টাকার মধ্যে। অন্যদিকে 1 কেজি ওজনের দেশীয় ইলিশের দাম রয়েছে 1200 থেকে 1400 টাকা।
আরো পড়ুন: রক্তে উচ্চ শর্করা উপস্থিতির ১০ টি লক্ষণ
2023 সালের অক্টোবর মাসে, ভারতে ইলিশের দাম কিছুটা কমেছিল। এর কারণ ছিল, বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি। তবে, 2024 সালের জানুয়ারি মাস থেকে আবার দাম বাড়তে শুরু করেছে।
ভারতে ইলিশ মাছের প্রধান উৎস হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ভারতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ আমদানি করা হয়।
ভারতে ইলিশ মাছ বিভিন্নভাবে রান্না করা হয়। যেমন, ভাজা, ইলিশ মালাইকারি, ইলিশের চপ, ইলিশের ঝোল, ইলিশের কালিয়া, ইলিশের ভর্তা ইত্যাদি।
ইলিশ মাছের বৈজ্ঞানিক নাম
ইলিশ মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Tenualosa ilisha। এটি একটি সামুদ্রিক মাছ, যা ডিম পাড়ার জন্য বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারতের নদীতে আগমন করে। ইলিশ মাছ বাঙালিদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এ ছাড়াও ইলিশ ভারতের বিভিন্ন এলাকা যেমন পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, ত্রিপুরা ও আসামে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মাছ।
ইলিশ মাছটির দেহ লম্বা ও চ্যাপ্টা, মাথা ছোট, মুখ বড়, চোখ বড় ও মুখের কিনারা থেকে একটি লম্বা লম্বা ঠোঁট বেরিয়ে থাকে। দেহের রং রুপালি ধূসর, মাথার ওপরের অংশ কালো, পেটের অংশ সাদা। ইলিশ মাছের দৈর্ঘ্য সাধারণত ১০-২০ ইঞ্চি হয়।
ইলিশ মাছ একটি অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মাছ। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান মৎস্যসম্পদ। ইলিশ মাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়।
ইলিশ মাছের আকার সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। এর রঙ সাধারণত উজ্জ্বল রুপালি হয়। ইলিশের মাথা ছোট এবং দেহ লম্বা ও সরু। ইলিশের মাথার উপরে একটি বড় চোখ থাকে। ইলিশের মুখ ছোট এবং ঠোঁট পাতলা। ইলিশের দেহে সাদা রঙের আঁশ থাকে। ইলিশের লেজ দুইভাগে বিভক্ত।
ইলিশের প্রধান খাবার হল প্ল্যাঙ্কটন। ইলিশ প্রজনন মৌসুম ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত। ইলিশের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। ইলিশ বিভিন্নভাবে রান্না করা যায়। যেমন, ভাজা, ইলিশ মালাইকারি, ইলিশের চপ, ইলিশের ঝোল, ইলিশের কালিয়া, ইলিশের ভর্তা ইত্যাদি।
ইলিশ মাছের রেসিপি
ইলিশ ভাজা
উপকরণ:
ইলিশ মাছ (যে কোনো মাপের) - ১ কেজি
লবণ - স্বাদমতো
হলুদ গুঁড়া - ১ চা চামচ
মরিচ গুঁড়া - ১ চা চামচ
জিরা গুঁড়া - ১ চা চামচ
ধনে গুঁড়া - ১ চা চামচ
গরম মসলা গুঁড়া - ১/২ চা চামচ
তেল - পরিমাণমতো
প্রণালী:
১। ইলিশ মাছ ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।
২। একটি বাটিতে লবণ, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, ধনে গুঁড়া এবং গরম মসলা গুঁড়া দিয়ে মাখিয়ে নিন।
৩। একটি কড়াইতে তেল গরম করে মাখানো ইলিশ মাছগুলো ভেজে নিন।
৪। ইলিশ মাছ ভাজা হয়ে গেলে পরিবেশন করুন।
ইলিশ মালাইকারি
উপকরণ:
ইলিশ মাছ (যে কোনো মাপের) - ১ কেজি
লবণ - স্বাদমতো
হলুদ গুঁড়া - ১ চা চামচ
মরিচ গুঁড়া - ১ চা চামচ
জিরা গুঁড়া - ১ চা চামচ
ধনে গুঁড়া - ১ চা চামচ
গরম মসলা গুঁড়া - ১/২ চা চামচ
পেঁয়াজ কুচি - ১ কাপ
আদা বাটা - ১ চা চামচ
রসুন বাটা - ১ চা চামচ
টমেটো কুচি - ১ কাপ
কাঁচা মরিচ কুচি - ৫-৬টি
হলুদ গুঁড়া - ১ চা চামচ
মরিচ গুঁড়া - ১ চা চামচ
জিরা গুঁড়া - ১ চা চামচ
ধনে গুঁড়া - ১ চা চামচ
গরম মসলা গুঁড়া - ১/২ চা চামচ
নারকেল দুধ - ১ কাপ
তেল - পরিমাণমতো
প্রণালী:
১। ইলিশ মাছ ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।
২। একটি বাটিতে লবণ, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, ধনে গুঁড়া এবং গরম মসলা গুঁড়া দিয়ে মাখিয়ে নিন।
৩। একটি কড়াইতে তেল গরম করে মাখানো ইলিশ মাছগুলো ভেজে নিন।
৪। অন্য একটি কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে হালকা বাদামী করে ভাজুন।
৫। ভাজা পেঁয়াজে আদা বাটা, রসুন বাটা, টমেটো কুচি এবং কাঁচা মরিচ কুচি দিয়ে কষিয়ে নিন।
৬। কষানো মসলায় হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, ধনে গুঁড়া এবং গরম মসলা গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন।
৭। কষানো মসলায় নারকেল দুধ দিয়ে ভালো করে নেড়ে নিন।
৮। ভেজে রাখা ইলিশ মাছগুলো নারকেল দুধের সাথে দিয়ে ঢেকে দিন।
৯। মাঝারি আঁচে রান্না করুন যতক্ষণ না ইলিশ মাছ সেদ্ধ হয়ে যায়।
১০। ইলিশ মালাইকারি হয়ে গেলে পরিবেশন করুন।
ইলিশর চপ
উপকরণ:
ইলিশ মাছ (যে কোনো মাপের) - ১ কেজি
লবণ - স্বাদমতো
হলুদ গুঁড়া - ১ চা চামচ
মরিচ গুঁড়া - ১ চা চামচ
জিরা গুঁড়া - ১ চা চামচ
ধনে গুঁড়া - ১ চা চামচ
গরম মসলা গুঁড়া - ১/২ চা চামচ
পেঁয়াজ কুচি - ১ কাপ
কাঁচা মরিচ কুচি - ৫-৬টি
ডিম - ২টি
ব্রেডক্রাম্বস - পরিমাণম
ইলিশ মাছের বৈশিষ্ট্য
ইলিশ মাছের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:
ইলিশ মাছ একটি সামুদ্রিক মাছ হলেও ডিম ছাড়ার জন্য নদীতে আসে।
ইলিশ মাছের আকার সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়।
ইলিশ মাছের রঙ সাধারণত উজ্জ্বল রুপালি হয়।
ইলিশের মাথা ছোট এবং দেহ লম্বা ও সরু।
ইলিশের মাথার উপরে একটি বড় চোখ থাকে।
ইলিশের মুখ ছোট এবং ঠোঁট পাতলা।
ইলিশের দেহে সাদা রঙের আঁশ থাকে।
ইলিশের লেজ দুইভাগে বিভক্ত।
আরো পড়ুন: মাথা ব্যাথা – কেন হয়? বিভিন্ন ধরণ ও করণীয় কি কি
ইলিশ মাছের প্রধান খাবার হল প্ল্যাঙ্কটন। ইলিশ প্রজনন মৌসুম ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত। ইলিশের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। ইলিশ বিভিন্নভাবে রান্না করা যায়। যেমন, ভাজা, ইলিশ মালাইকারি, ইলিশের চপ, ইলিশের ঝোল, ইলিশের কালিয়া, ইলিশের ভর্তা ইত্যাদি।
ইলিশ মাছের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:
ইলিশ মাছ একটি ঝাঁক বেঁধে বাস করে।
ইলিশ মাছ খুব দ্রুত সাঁতার কাটে।
ইলিশ মাছ একটি পরিযায়ী মাছ।
ইলিশ মাছ খুবই শক্তপোক্ত মাছ।
ইলিশ মাছ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। ইলিশ মাছ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ইলিশ মাছের উপকারিতা
ইলিশ মাছ অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান রয়েছে। ইলিশ মাছের উপকারিতা নিম্নরূপ: হৃদস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী: ইলিশ মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়াও, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে এবং হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
মস্তিষ্কের জন্য উপকারী: ইলিশ মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের বিকাশ ও কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আলঝাইমার ও ডিমেনশিয়া রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। চোখের জন্য উপকারী: ইলিশ মাছের ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: ইলিশ মাছের প্রোটিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ইলিশ মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ত্বকের জন্য উপকারী: ইলিশ মাছের ভিটামিন এ ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন এ ত্বককে সুস্থ ও মসৃণ রাখে।
হজমশক্তি বৃদ্ধি করে: ইলিশ মাছের প্রোটিন হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ইলিশ মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ইলিশ মাছ একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। সপ্তাহে অন্তত দুই-তিন দিন ইলিশ মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। এতে শরীর সুস্থ ও সবল থাকবে।
ইলিশ মাছ চেনার উপায়
ইলিশ মাছ চেনার কিছু উপায় নিম্নরূপ:
ইলিশ মাছের রঙ: টাটকা ইলিশ মাছের রঙ উজ্জ্বল রুপালি হয়। যদি ইলিশ মাছের রঙ অনুজ্জ্বল বা ফ্যাকাসে হয়, তাহলে বুঝতে হবে মাছটি পুরানো।
ইলিশ মাছের কানকো: টাটকা ইলিশ মাছের কানকো লালচে হয়। যদি কানকো বাদামি বা কালচে হয়, তাহলে বুঝতে হবে মাছটি পুরানো।
ইলিশ মাছের চোখ: টাটকা ইলিশ মাছের চোখ স্বচ্ছ ও উজ্জ্বল হয়। যদি চোখ ঘোলাটে বা ভেতরের দিকে ঢুকে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে মাছটি পুরানো।
ইলিশ মাছের গন্ধ: টাটকা ইলিশ মাছের একটি স্বাভাবিক গন্ধ থাকে। যদি মাছের গন্ধ বাজে হয়, তাহলে বুঝতে হবে মাছটি পুরানো।
ইলিশ মাছের শক্ততা: টাটকা ইলিশ মাছ শক্ত হয়। যদি মাছ নরম হয়, তাহলে বুঝতে হবে মাছটি পুরানো।
ইলিশ মাছ কেনার সময় এসব বিষয় খেয়াল রাখলে ভালো ইলিশ মাছ কেনা সম্ভব।
এছাড়াও, ইলিশ মাছ কেনার সময় কিছু টিপস মনে রাখতে হবে:
ইলিশ মাছ কেনার সময় বাজারে সকালের দিকে যান। সকালের দিকে মাছ ধরা হয়, তাই সকালের দিকে মাছ টাটকা থাকে।
ইলিশ মাছ কেনার সময় ভালো মানের বিক্রেতার কাছ থেকে কিনুন। ভালো মানের বিক্রেতা ভালো মানের ইলিশ মাছ বিক্রি করে।
ইলিশ মাছ কেনার সময় মাছের মুখ, চোখ, কানকো এবং রঙ ভালোভাবে দেখে নিন।
এই টিপসগুলো অনুসরণ করলে ভালো ইলিশ মাছ কেনা সম্ভব হবে।