রোজায় খাদ্যাভ্যাস ও মানবদেহে রোজার প্রভাব
পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের উপকারিতা রোজা একটি শারীরিক ইবাদত এবং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। এর ইহকালীন ও পরকালীন উপকারিতা অপরিসীম। কারণ রোজাদারদের মহান আল্লাহ বিশেষ সংবর্ধনা দেবেন।
বিশেষ পুরস্কারে পুরস্কৃত করবেন।আবার শারীরিক সুস্থতার জন্যও রোজা অনেক উপকারী। দেশে-বিদেশে রোজার স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে বহু গবেষণা হয়েছে। বয়স অনুযায়ী খাদ্য তালিকা
মুসলিমদের পবিত্র মাস মাহে রমজান শুরু হয়েছে। প্রতি বছরের এ মাসে সমগ্র বিশ্বের মুসলিমরা রোজা পালন করেন। ১১ মাস পর এ সময়ে রোজাদারদের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রায় হঠাৎ বেশ পরিবর্তন আসে। তাই পরিবারের যারা নিয়মিত রোজা রাখেন তাদের খাদ্য গ্রহণ ও স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
রোজায় খাদ্যাভ্যাস ও মানবদেহে রোজার প্রভাব
রোজায় খাদ্যাভ্যাস
রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। প্রতি বছর রমজান মাসে মুসলমানরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকে। রোজা রাখার মাধ্যমে মুসলমানরা আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের আশা করে।
রোজা রাখার সময় খাদ্যাভ্যাসের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। রোজাদারদের সকাল ও সন্ধ্যায় দুই বেলা হালকা ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। সকালের খাবারে শর্করা ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার থাকা উচিত। সন্ধ্যের খাবারে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল থাকা উচিত।
রোজা রাখার সময় অতিরিক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত খাবার খেলে পেট ফাঁপা, ক্লান্তি, মাথাব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
রোজার প্রভাব
রোজার মানবদেহে বেশ কিছু উপকারী প্রভাব রয়েছে। রোজা রাখার ফলে শরীরের কোষগুলো পুনর্গঠিত হয়। রোজার ফলে শরীরে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। রোজার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। রোজার ফলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
আরো পড়ুন: মাশরুম কেন খাবেন? পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
রোজার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। রোজা রাখার ফলে ক্লান্তি, মাথাব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও, যারা আগে থেকেই কোনও শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন, তাদের রোজা রাখার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
রোজার সময় খাদ্যাভ্যাসের কিছু টিপস
সকালের খাবারে শর্করা ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। যেমন: ভাত, রুটি, মাছ, ডিম, ডাল ইত্যাদি। সন্ধ্যের খাবারে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল থাকা উচিত। অতিরিক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়। তরল খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত।
নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। রোজার সময় সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে মানবদেহে রোজার উপকারী প্রভাবগুলি আরও বেশি উপভোগ করা সম্ভব।
খাদ্য ও পুষ্টি তালিকা
মানবদেহের সুস্থতা ও বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন। এই পুষ্টি উপাদানগুলি বিভিন্ন খাদ্য থেকে পাওয়া যায়। খাদ্যের পুষ্টিগত মান নির্ভর করে খাদ্যের উপাদানের পরিমাণ ও গুণমানের উপর।
পুষ্টি উপাদানের শ্রেণীবিভাগ
পুষ্টি উপাদানগুলিকে প্রধানত ছয়টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা: শর্করা (Carbohydrates): শর্করা হল মানবদেহের প্রধান শক্তির উৎস। এটি মস্তিষ্ক, পেশী ও অন্যান্য অঙ্গের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। শর্করার প্রধান উৎস হল ভাত, রুটি, আলু, চিনি, ময়দা ইত্যাদি।
প্রোটিন (Proteins): প্রোটিন হল দেহের গঠন ও বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান। এটি কোষ, টিস্যু ও অঙ্গের গঠনে সাহায্য করে। প্রোটিনের প্রধান উৎস হল মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, দুধ, দুগ্ধজাতীয় খাবার ইত্যাদি।
চর্বি (Fats): চর্বি হল শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় একটি পুষ্টি উপাদান। এটি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, ভিটামিনের শোষণে সহায়তা করে এবং কোষের গঠনে সাহায্য করে। চর্বির প্রধান উৎস হল তেল, ঘি, মাখন, মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি।
ভিটামিন (Vitamins): ভিটামিন হল দেহের জন্য প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থ। এগুলি দেহের বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়াকলাপের জন্য অপরিহার্য। ভিটামিনের প্রধান উৎস হল শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি।
খনিজ লবণ (Minerals): খনিজ লবণ হল দেহের জন্য প্রয়োজনীয় অজৈব পদার্থ। এগুলি দেহের বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়াকলাপের জন্য অপরিহার্য। খনিজ লবণের প্রধান উৎস হল শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি।
আরো পড়ুন: নারিকেল তেলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
পানি (Water): পানি হল দেহের জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান। এটি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে এবং দেহের বিভিন্ন অংশে পুষ্টি উপাদান পরিবহন করে। খাদ্যের পুষ্টিগত মান
খাদ্যের পুষ্টিগত মান নির্ভর করে খাদ্যের উপাদানের পরিমাণ ও গুণমানের উপর। খাদ্যে যত বেশি পুষ্টি উপাদান থাকবে এবং উপাদানগুলির গুণমান যত ভালো হবে, খাদ্যের পুষ্টিগত মান তত বেশি হবে।
পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের উপকারিতা
পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের অনেক উপকারিতা রয়েছে। যথা: সুস্থ ও সুন্দর দেহ গঠন: পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে সুস্থ ও সুন্দর দেহ গঠন করা সম্ভব। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। শক্তি বৃদ্ধি: পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে শক্তি বৃদ্ধি করা সম্ভব।
বুদ্ধি ও মনোযোগ বৃদ্ধি: পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে বুদ্ধি ও মনোযোগ বৃদ্ধি করা সম্ভব। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি কমানো: পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের নিয়ম
পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের জন্য নিম্নলিখিত নিয়মগুলি মেনে চলতে হবে: প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন ধরনের খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
খাদ্যাভ্যাস কাকে বলে
খাদ্যাভ্যাস বলতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর খাবারের ধরন, পরিমাণ, ফ্রিকোয়েন্সি এবং খাবার গ্রহণের পদ্ধতিকে বোঝায়। খাদ্যাভ্যাস একটি ব্যক্তির স্বাস্থ্য, সামাজিক অবস্থান, ধর্মীয় বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক পরিবেশ এবং অন্যান্য বিষয়গুলির দ্বারা প্রভাবিত হয়।
খাদ্যাভ্যাসকে বিভিন্নভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়। একটি সাধারণ শ্রেণীবিভাগ হল: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: এই ধরনের খাদ্যাভ্যাসে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা সুস্থতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: এই ধরনের খাদ্যাভ্যাসে পুষ্টিকর খাবারের পরিবর্তে প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি বা চর্বিযুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
খাদ্যাভ্যাসের উপর বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকির প্রভাব রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার এবং অন্যান্য অ-সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। অন্যদিকে, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এই রোগগুলির ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে, তবে এটি স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার জন্য নিম্নলিখিত টিপসগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে:
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন।
প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি বা চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। নিয়মিত এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার জন্য একজন পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করা যেতে পারে।
সুস্বাস্থ্যের জন্য খাদ্য তালিকা
সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলি সরবরাহ করা যায়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, শক্তির মাত্রা বজায় রাখা, এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
সুস্বাস্থ্যের জন্য খাদ্য তালিকায় নিম্নলিখিত খাবারগুলি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত: শর্করা: শর্করা হল মানবদেহের প্রধান শক্তির উৎস। শর্করার প্রধান উৎস হল ভাত, রুটি, আলু, ফলমূল, এবং শস্যদানা। প্রোটিন: প্রোটিন হল দেহের গঠন ও বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান। প্রোটিনের প্রধান উৎস হল মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, এবং দুগ্ধজাতীয় খাবার।
চর্বি: চর্বি হল শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় একটি পুষ্টি উপাদান। চর্বির প্রধান উৎস হল তেল, ঘি, মাখন, মাছ, মাংস, এবং ডিম। ভিটামিন: ভিটামিন হল দেহের জন্য প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থ। ভিটামিনের প্রধান উৎস হল শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, মাংস, এবং ডিম।
আরো পড়ুন: আমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
খনিজ লবণ: খনিজ লবণ হল দেহের জন্য প্রয়োজনীয় অজৈব পদার্থ। খনিজ লবণের প্রধান উৎস হল শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, মাংস, এবং ডিম। সুস্বাস্থ্যের জন্য খাদ্য তালিকায় প্রতিদিনের খাবারের পরিমাণ নিম্নরূপ হওয়া উচিত: শর্করা: শর্করার পরিমাণ মোট ক্যালোরির 45-65% হওয়া উচিত।
প্রোটিন: প্রোটিনের পরিমাণ মোট ক্যালোরির 10-35% হওয়া উচিত। চর্বি: চর্বির পরিমাণ মোট ক্যালোরির 20-35% হওয়া উচিত। ভিটামিন: ভিটামিনের পরিমাণ প্রতিদিনের চাহিদার 100% হওয়া উচিত। খনিজ লবণ: খনিজ লবণের পরিমাণ প্রতিদিনের চাহিদার 100% হওয়া উচিত।
সুস্বাস্থ্যের জন্য খাদ্য তালিকার কিছু টিপস: প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন ধরনের খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন। প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি বা চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। নিয়মিত এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। সুস্বাস্থ্যের জন্য খাদ্য তালিকায় কিছু উদাহরণ:
নাস্তা: ফলমূল, দই, ওটমিল, বা ইয়োগার্ট। দুপুরের খাবার: ভাত, ডাল, সবজি, এবং মাছ বা মাংস। রাতের খাবার: রুটি, ডাল, সবজি, এবং ডিম। টিফিন: ফলমূল, বাদাম, বা সালাদ। সুস্বাস্থ্যের জন্য খাদ্য তালিকা তৈরি করার সময় একজন পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করা ভালো।
খাদ্য ও পুষ্টি কাকে বলেখাদ্য বলতে এমন বস্তুকে বোঝায় যা মানুষ ও অন্যান্য জীব খায় এবং তা থেকে শক্তি ও পুষ্টি পায়। খাদ্যের প্রধান কাজ হল দেহের বৃদ্ধি, বিকাশ ও ক্ষয়পূরণ করা। খাদ্য থেকে দেহ শক্তি, পুষ্টি উপাদান, পানি ও খনিজ লবণ পায়।
পুষ্টি বলতে এমন প্রক্রিয়াকে বোঝায় যাতে খাদ্য দেহের অভ্যন্তরে পরিপাক ও শোষণের মাধ্যমে দেহের কোষে কোষে ছড়িয়ে পড়ে এবং দেহের প্রয়োজনীয় অংশ শোষিত হয়ে দেহের ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধিসাধন, শক্তি উৎপাদন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
খাদ্য ও পুষ্টির মধ্যে সম্পর্ক
খাদ্য ও পুষ্টি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। খাদ্য থেকে পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় এবং পুষ্টির মাধ্যমে খাদ্যের উপাদানগুলি দেহের কোষে কোষে ছড়িয়ে পড়ে এবং দেহের প্রয়োজনীয় কাজগুলি সম্পন্ন করে। খাদ্যের প্রকারভেদ খাদ্যকে বিভিন্নভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়। একটি সাধারণ শ্রেণীবিভাগ হল:
শস্যজাতীয় খাবার: ভাত, রুটি, আলু, গম, ভুট্টা, ওটস ইত্যাদি। প্রোটিনজাতীয় খাবার: মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, দুধ, দুগ্ধজাতীয় খাবার ইত্যাদি। ফলমূল ও শাকসবজি: ফলমূল, শাকসবজি। চর্বিজাতীয় খাবার: তেল, ঘি, মাখন, মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি। চিনিজাতীয় খাবার: চিনি, মিষ্টি, মিষ্টি পানীয় ইত্যাদি।
পুষ্টি উপাদানের শ্রেণীবিভাগ পুষ্টি উপাদানগুলিকে প্রধানত ছয়টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা: শর্করা (Carbohydrates): শর্করা হল মানবদেহের প্রধান শক্তির উৎস। এটি মস্তিষ্ক, পেশী ও অন্যান্য অঙ্গের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। প্রোটিন (Proteins): প্রোটিন হল দেহের গঠন ও বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান। এটি কোষ, টিস্যু ও অঙ্গের গঠনে সাহায্য করে।
চর্বি (Fats): চর্বি হল শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় একটি পুষ্টি উপাদান। এটি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, ভিটামিনের শোষণে সহায়তা করে এবং কোষের গঠনে সাহায্য করে। ভিটামিন (Vitamins): ভিটামিন হল দেহের জন্য প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থ।
আরো পড়ুন: টমেটো খাওয়ার উপকারিতা
এগুলি দেহের বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়াকলাপের জন্য অপরিহার্য। খনিজ লবণ (Minerals): খনিজ লবণ হল দেহের জন্য প্রয়োজনীয় অজৈব পদার্থ। এগুলি দেহের বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়াকলাপের জন্য অপরিহার্য। পানি (Water): পানি হল দেহের জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান।
এটি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে এবং দেহের বিভিন্ন অংশে পুষ্টি উপাদান পরিবহন করে।
পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের উপকারিতা
পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের অনেক উপকারিতা রয়েছে। যথা: সুস্থ ও সুন্দর দেহ গঠন: পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে সুস্থ ও সুন্দর দেহ গঠন করা সম্ভব। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। শক্তি বৃদ্ধি: পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে শক্তি বৃদ্ধি করা সম্ভব।
বুদ্ধি ও মনোযোগ বৃদ্ধি: পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে বুদ্ধি ও মনোযোগ বৃদ্ধি করা সম্ভব। কিভাবে তিন শ্রেণীর খাদ্য আমাদের দেহের চাহিদা মেটায়তিন শ্রেণীর খাদ্য হল: শর্করাজাতীয় খাবার: ভাত, রুটি, আলু, গম, ভুট্টা, ওটস ইত্যাদি। প্রোটিনজাতীয় খাবার: মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, দুধ, দুগ্ধজাতীয় খাবার ইত্যাদি।
ফলমূল ও শাকসবজি: ফলমূল, শাকসবজি। এই তিন শ্রেণীর খাবার আমাদের দেহের বিভিন্ন চাহিদা মেটায়। শর্করাজাতীয় খাবার আমাদের দেহের প্রধান শক্তির উৎস। এটি মস্তিষ্ক, পেশী ও অন্যান্য অঙ্গের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
প্রোটিনজাতীয় খাবার আমাদের দেহের গঠন ও বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান। এটি কোষ, টিস্যু ও অঙ্গের গঠনে সাহায্য করে। ফলমূল ও শাকসবজি আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ লবণ, এবং আঁশের প্রধান উৎস। এগুলি দেহের বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়াকলাপের জন্য অপরিহার্য।
নির্দিষ্টভাবে:
শর্করাজাতীয় খাবার আমাদের দেহের শক্তির 60-70% চাহিদা পূরণ করে। এটি আমাদের দেহের প্রধান শক্তির উৎস। শর্করাজাতীয় খাবারগুলিতে কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা আমাদের দেহের কোষগুলির জন্য জ্বালানির উৎস হিসেবে কাজ করে।
প্রোটিনজাতীয় খাবার আমাদের দেহের গঠন ও বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান। এটি আমাদের দেহের কোষ, টিস্যু ও অঙ্গগুলির গঠনে সাহায্য করে। প্রোটিনজাতীয় খাবারগুলিতে প্রোটিন থাকে, যা আমাদের দেহের কোষগুলির জন্য নির্মাণ সামগ্রীর উৎস হিসেবে কাজ করে।
ফলমূল ও শাকসবজি আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ লবণ, এবং আঁশের প্রধান উৎস। ভিটামিন আমাদের দেহের বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়াকলাপের জন্য অপরিহার্য। খনিজ লবণ আমাদের দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলির জন্য অপরিহার্য। আঁশ আমাদের দেহের পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুন: আখের দেশি লাল চিনি কেন খাবেন
সুতরাং, তিন শ্রেণীর খাবার আমাদের দেহের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করে। একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে এই তিন শ্রেণীর খাবার সঠিক পরিমাণে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
বয়স অনুযায়ী খাদ্য তালিকা
বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরের পুষ্টির চাহিদা পরিবর্তিত হয়। তাই বয়স অনুযায়ী সঠিক খাবার খাওয়া জরুরি।
জন্ম থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত এই বয়সে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ দ্রুত হয়। তাই এই বয়সে শিশুর খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকা উচিত।
খাদ্যতালিকা দুধ: প্রতিদিন ৩-৪ গ্লাস দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার। মাছ: প্রতিদিন ১-২ আউন্স মাছ। ডাল: প্রতিদিন ১-২ কাপ ডাল। শাকসবজি: প্রতিদিন ৩-৪ কাপ শাকসবজি। ফলমূল: প্রতিদিন ২-৩টি ফল। ৩ থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত এই বয়সে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ অব্যাহত থাকে। তাই এই বয়সে শিশুর খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকা উচিত।
খাদ্যতালিকা
দুধ: প্রতিদিন ৩-৪ গ্লাস দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার। মাছ: প্রতিদিন ১-২ আউন্স মাছ। ডাল: প্রতিদিন ১-২ কাপ ডাল। শাকসবজি: প্রতিদিন ৪-৫ কাপ শাকসবজি। ফলমূল: প্রতিদিন ৩-৪টি ফল। ৬ থেকে ১২ বছর বয়স পর্যন্ত এই বয়সে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ দ্রুত হয়। তাই এই বয়সে শিশুর খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকা উচিত।
খাদ্যতালিকা
দুধ: প্রতিদিন ৩-৪ গ্লাস দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার। মাছ: প্রতিদিন ১-২ আউন্স মাছ। ডাল: প্রতিদিন ১-২ কাপ ডাল। শাকসবজি: প্রতিদিন ৫-৬ কাপ শাকসবজি। ফলমূল: প্রতিদিন ৪-৫টি ফল। ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত এই বয়সে কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। তাই এই বয়সে তাদের খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকা উচিত।
খাদ্যতালিকা
দুধ: প্রতিদিন ৩-৪ গ্লাস দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার। মাছ: প্রতিদিন ১-২ আউন্স মাছ। ডাল: প্রতিদিন ২-৩ কাপ ডাল। শাকসবজি: প্রতিদিন ৬-৭ কাপ শাকসবজি। ফলমূল: প্রতিদিন ৫-৬টি ফল। ১৯ থেকে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত এই বয়সে মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ স্থিতিশীল থাকে। তাই এই বয়সে মানুষের খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকা উচিত।
খাদ্যতালিকা
দুধ: প্রতিদিন ৩-৪ গ্লাস দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার। মাছ: প্রতিদিন ১-২ আউন্স মাছ। ডাল: প্রতিদিন ২-৩ কাপ ডাল। শাকসবজি: প্রতিদিন ৭-৮ কাপ শাকসবজি। ফলমূল: প্রতিদিন ৫-৬টি ফল। ৫১ থেকে ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত এই বয়সে মানুষের শরীরে পুষ্টির চাহিদা কমতে থাকে। তাই এই বয়সে মানুষের খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকা উচিতখাদ্যের উপাদান কয়টি ও কী কীখাদ্যের উপাদান প্রধানত ছয়টি। এগুলো হল:
আরো পড়ুন: ১০ টি স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার
শর্করা (Carbohydrates): শর্করা হল খাদ্যের প্রধান শক্তির উৎস। এটি দেহের কোষের গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করে। শর্করার প্রধান উৎস হল ভাত, রুটি, আলু, মিষ্টি, ফলমূল ইত্যাদি। প্রোটিন (Proteins): প্রোটিন হল দেহের কোষ, টিস্যু ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অপরিহার্য।
এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ক্ষত নিরাময়, হজমে সহায়তা, পেশী বৃদ্ধি ও শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে। প্রোটিনের প্রধান উৎস হল মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, বাদাম ইত্যাদি। স্নেহপদার্থ (Lipids): স্নেহপদার্থ দেহের শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
এটি দেহের কোষের ঝিল্লি গঠন, হরমোন তৈরি, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, ভিটামিন A, D, E ও K এর শোষণে সাহায্য করে। স্নেহপদার্থের প্রধান উৎস হল তেল, ঘি, মাখন, দুধ, ডিম, বাদাম ইত্যাদি।ভিটামিন (Vitamins): ভিটামিন হল দেহের জন্য অপরিহার্য জৈব যৌগ। এটি দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপের জন্য প্রয়োজনীয়। ভিটামিনের অভাবে বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে।
ভিটামিনের প্রধান উৎস হল ফলমূল, শাকসবজি, দুধ, ডিম, মাছ, মাংস ইত্যাদি।খনিজ লবণ (Minerals): খনিজ লবণ দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপের জন্য প্রয়োজনীয়। এটি দেহের হাড়, দাঁত, রক্ত, পেশী, স্নায়ু ইত্যাদি গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করে। খনিজ লবণের প্রধান উৎস হল ফলমূল, শাকসবজি, দুধ, ডিম, মাছ, মাংস ইত্যাদি।জল (Water): জল হল জীবনের অপরিহার্য উপাদান।
দেহের প্রায় ৭০% জল দিয়ে গঠিত। জল দেহের কোষ, টিস্যু ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক কাজকর্মের জন্য প্রয়োজনীয়। এটি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, হজম, শোষণ, নিঃসরণ ইত্যাদি কাজে সাহায্য করে। জলের প্রধান উৎস হল পানি, দুধ, ফলমূল, শাকসবজি ইত্যাদি।এই ছয়টি উপাদান ছাড়াও খাদ্যে কিছু অতিরিক্ত উপাদানও থাকতে পারে। যেমন, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রোবায়োটিক ইত্যাদি।